পুলিশের বিরুদ্ধে মীনাক্ষী মুখার্জির অভিযোগ ঘিরে আরো চাপে মমতা প্রশাসন
সেখ ইবাদুল ইসলাম : সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই য়ের রাজ্যের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জিকে গত ৯ আগস্ট আরজিকর মেডিকেল কলেজে পুরুষ পুলিশ কর্মী হেনস্তা করে বলে অভিযোগ উঠেছে। ছবিসহ কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে চিঠি লিখে নারী নিরাপত্তা এবং পুলিশের হাতে মহিলার হেনস্তার বিচার চেয়েছেন স্বয়ং ডিওয়াই এফআই নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জি। পুলিশি আক্রমণের এই বিবরণ নিউজ পোর্টাল দ্য ওয়ালে প্রকাশিত হয়েছে। ওই নিউজ পোর্টাল এর খবর অনুসারে জানা যাচ্ছে,৯ অগস্ট আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের সামনে সেদিনই প্রতিবাদে বসেছিলেন সিপিএম যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। সেদিনই সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহত ডাক্তারের দেহ নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। সে সময়ে দেহ আটকে বিক্ষোভ দেখান মীনাক্ষী। তিনি দাবি করেন, নিহতের পবিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলতে চান এবং জানতে চান যে পুলিশের কেউ তাঁদের উপর প্রশাসনিক প্রভাব খাটাবার চেষ্টা করছে কিনা।
মীনাক্ষী মুখার্জী কলকাতা পুলিশ কমিশনার কে উদ্দেশ্য করে অভিযোগ পত্রে লিখেছেন, ‘আমি মীনাক্ষী মুখার্জী, ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক, আমার ঠিকানা ৭৯/৩এ আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, কলকাতা – ৭০০০১৪। আমি এই মর্মে জানাইতেছি যে গত ৯ অগস্ট ২০২৪ তারিখে আরজি কর মেডিকেল কলেজে যে নৃশংস ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা ঘটে তার প্রতিবাদে আর জি কর হাসপাতালের সামনে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলাম। এমত অবস্থায়, আমরা জানতে পারি যে নিহতের পরিবারের লোকেরা পুলিশের ব্যবহারে অসন্তুষ্ট হয়েছেন এবং পুলিশ তাদের উপর প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে তদন্তকে প্রভাবিত করছে যা নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থী।’
তিনি আরও লেখেন, ‘এরপর সন্ধ্যা ৭:৩০ নাগাদ আরজি কর হাসপাতালের মর্গ থেকে পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আমরা পুলিশকে জানাই যে নিহতের পবিবারের লোকের সাথে আমরা কথা বলতে চাই এবং জানতে চাই যে পুলিশের কেউ তাদের উপর প্রশাসনিক প্রভাব খাটাবার চেষ্টা করছে কিনা। নিরপেক্ষ তদন্ত সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনও প্রকার প্রভাব মুক্ত রাখা জরুরি।’
যুবনেত্রীর অভিযোগ, ‘এইসময় উপস্থিত পুলিশের একাংশ অভিষেক গুপ্তার নেতৃত্ব কোনও রকম মহিলা পুলিশের অনুপস্থিতিতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে বিনা প্ররোচনায় সচেতনভাবে ও ইচ্ছাকৃতভাবে আমার বুকে ধাক্কা মারে, কয়েকটি সজোরে ঘুষি চালায়, মহিলা পুলিশ ছাড়াই বহু সংখ্যক পুরুষ পুলিশ আমাদের ধাক্কা দেয়, মারে।’
মীনাক্ষী দাবি করেন, ‘সে সময়ে তীব্র ব্যথা ও যন্ত্রণা উপলব্ধি করলেও শুরুতে গুরুত্ব না দিয়ে পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদ যখন আরোও জোরালো হয়ে ওঠে তখন অপরাধী পুলিশরা রাস্তায় প্রতিবাদ করার কারণে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে এবং বারেবারে অবস্থানরত সমব্যাথী আন্দোলনকারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচিকে ছত্রভঙ্গ করার ছলনায় হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে।পুলিশ আন্দোলনকারীদের পাশবিকভাবে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অত্যাচার করার পর নিহতের শবদেহ নিয়ে বেরিয়ে যায়। উক্ত ঘটনায় উপস্থিত সকল অপরাধী পুলিশের বিরুদ্ধে এফআইআর পূর্বক তদন্ত করে কঠোর শাস্তি সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আর্জি জানাই যাতে সাধারণ মহিলাদের পুলিশের প্রতি আস্থা ফিরবে ও আমরা আপনার নিকট বাধিত থাকিব।’
প্রশ্ন উঠেছে মীনাক্ষী মুখার্জির এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গেল। বিরোধীদলের একজন নেত্রী সরাসরি পুলিশের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন এবং তথ্য প্রমাণসহ পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবচেয়ে বড় কাজ হল যে পুলিশ অফিসার মীনাক্ষীর গায়ে হাত দিয়েছে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা। এক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ না করেন তাহলে এটা পরিষ্কার হয়ে যাবে মহিলা নির্যাতন নিয়ে তিনি আদৌ ভাবিত নন।