সন্দীপ ঘোষের প্রভাবশালী তত্ত্বেই সীলমোহর! স্বাস্থ্য ভবনে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেলেন আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ
বিশেষ প্রতিনিধি : আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ যে প্রভাবশালী তা নিয়ে এখন আর কোন সন্দেহ রইল না। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আরজিকর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে যান স্বাস্থ্য সচিব নিজে। তিনি গিয়ে বলেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের সমস্ত দাবি পূরণ করা হয়েছে। আরজিকরের বর্তমান অধ্যক্ষ কে সরানো হয়েছে সুপারকে সরানো হয়েছে এবং অন্যান্য আধিকারিকদের ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ করেছিল আন্দোলনরত জুনিয়ার চিকিৎসকরা। এমনকি সন্দীপ ঘোষ কে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়েছে বলে নারায়ন স্বরূপ নিগাম অর্থাৎ রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব জানিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য সচিবের এই ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরেই জানা যাচ্ছে যে সন্দীপ ঘোষকে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে সরানো হলেও তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। তিনি স্বাস্থ্য দপ্তরের ওএসডি পদে কর্মরত থাকবেন। ফলে অধ্যক্ষ করছেও তাঁর ক্ষমতা যে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে, এ নিয়ে কোন সন্দেহ রইল না। রাজ্য সরকার কেন সন্দীপ ঘোষ কে এত গুরুত্ব দিচ্ছে? তা নিয়ে এই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এই সন্দীপ ঘোষ কে বিগত ছয় দিনে কম করে ৭২ ঘণ্টা জেরা করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেছে রাজ্য সরকার। তারপর কি এমন ঘটেছে যে তাকে ওএসডি এর মত গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্ত করা হলো।
সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে আগেই প্রভাবশালী তত্ত্বের অভিযোগ এনেছিল বিরোধীরা। এমনকী গত ৮ অগস্ট মধ্যরাতে আরজি করে ডাক্তারি পড়ুয়া নৃশংসভাবে খুন হওয়ার পরও বিষয়টি ধামাচাপা দিতে পরিবারকে আত্মহত্যার কথা তাঁর নির্দেশেই বলা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন নির্যাতিতার বাবা-মাও।
ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পড়ে সন্দীপ ঘোষ যেদিন আরজি করের অধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সেদিনই তাঁকে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে বসানোর অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের বিরুদ্ধে। যা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের প্রশ্নবানের মুখেও পড়তে হয়েছিল রাজ্যকে। আদালতের নির্দেশে সন্দীপ ঘোষকে ১৫ দিনের ছুটিতেও পাঠিয়েছে রাজ্য। সূত্রের খবর, ছুটি থেকে ফিরলে তিনি স্বাস্থ্য ভবনে ‘অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি’ পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন।
সন্দীপ ঘোষ কে বারবার গুরুত্ব দিতে গিয়ে রাজ্য সরকার সাধারণ মানুষের কাছে নিজেদেরকে সন্দিহান করে তুলেছে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা বলছেন, “আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি সন্দীপ ঘোষ অত্যন্ত প্রভাবশালী। ফের সেটাই প্রমাণিত হল।” প্রসঙ্গত, সন্দীপবাবুর বিরুদ্ধে আরজি করের একাধিক দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছেন আরজি করের প্রাক্তন ডেপুটি সুপার আখতার আলি। সন্দীপের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যভবনেও অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এমনকী মুখ খোলার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতার কারণে হাইকোর্টেরও দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।
একাধিক দাবি নিয়ে বুধবারই স্বাস্থ্যভবনে অভিযান করেছিলেন আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা। বুধবার সন্ধেয় পড়ুয়াদের দাবি মেনে আরজি করের নব নিযুক্ত অধ্যক্ষ সুৃহৃতা পাল-সহ চার পদস্থ আধিকারিককে সরিয়েও দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য দফতর পড়ুয়াদের দাবি মেনে নেওয়ায় তাঁরা আন্দোলনের পথ থেকে সরে আসেন কিনা, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে চর্চা শুরু হয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে তদন্তের অধীনে থাকা সন্দীপ ঘোষকে ফের পদে বসানোয় স্বাস্থ্য দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।