অন্যান্য 

স্বাধীনতা ও বর্তমান সমাজ কোথায় দাঁড়িয়ে একটি মূল্যায়ন/ অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেয়ার করুন

অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায় :  দেখতে দেখতে ভারতের আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা অনেকগুলি বসন্ত পেরিয়ে গেল, ভারত এখন প্রকৃত অর্থেই বিশ্ব সভায় এক উজ্জ্বল রাষ্ট্র, ভারতবর্ষের সংবিধান তথা আইন প্রণালী, নির্বাচন ব্যবস্থা প্রভৃতি বিশ্বের দরবারে যথেষ্টই প্রশংসনীয়। এই বিপুল জনবহুল দেশে কিভাবে বিভিন্ন উন্নয়ন ঘটছে তা নিয়ে অনেক রাষ্ট্রের কপালে এই প্রশ্নচিহ্নের ভাঁজ লক্ষ্য করা যায়, কিন্তু সর্ষের মধ্যেই ভূত বিদ্যমান। এত উন্নতির পিছনেও ভারতবর্ষের এক কলঙ্কময় অধ্যায় রয়েছে যা প্রতিনিয়ত ভারতবর্ষের সমাজতত্ত্ববিদদের ভাবিয়ে তুলছে, ভারতবর্ষ এখনো দারিদ্র্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত বললে অতিরঞ্জিত ব্যাখা করা হবে না। কারণ বিহার,রাজস্থান,পশ্চিমবঙ্গ প্রভৃতি রাজ্যে দারিদ্র্যসীমার নিচের মানুষের সংখ্যাটা যথেষ্টই উদ্বেগজনক, ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কৃষক আত্মহত্যার সংখ্যা, বহু নারী পেটের ভাতের জোগানের তাগিদে বেছে নিচ্ছে অন্ধকার রাস্তা যা সাম্প্রতিক রিপোর্টগুলিতে বিশেষভাবে ধরা দিচ্ছে।

ভারতবর্ষের শিক্ষিত ও অশিক্ষিতের পরিসংখ্যানটি যদি দেখা যায় তাহলে দেখা যাচ্ছে যে শহরাঞ্চলে শিক্ষিতের সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে শিক্ষা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে, যা যথেষ্টই চিন্তার বিষয় এছাড়াও যেভাবে ধর্মের নামে ও জাতির নামে ঘৃণ্য রাজনীতি চলছে তাতে আগামী দিনে ভারতবর্ষের বিকাশ কতটা মসৃন হবে এ নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়, সাম্প্রতিককালে যেভাবে নারী ধর্ষণ, নারী পাচার, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সামাজিক অপমান যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে সমাজের মধ্যে বৈষম্যের বার্তাই সুস্পষ্ট, একজন শিক্ষক হিসেবে আমি বারবারই প্রত্যক্ষ করি যে সামাজিক অবক্ষয়টি সমাজের একেবারে গোড়া থেকেই শুরু হচ্ছে আর তাই ভারত বর্ষের ভিত্তি কতটা মজবুত মাটির ওপর দাঁড়িয়ে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা যায়।

Advertisement

বর্তমানে এদেশে শুরু হয়েছে একমাত্র রাজনৈতিক ক্ষমতার লালসা এবং যার পিছনে রয়েছে উগ্র ধর্মীয় আকাঙ্ক্ষা যা আগামীদিনের সমাজকে শেষ করে দেবে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের আন্দোলন আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলন কতটা গভীর থেকে গভীরতর হতে পারে আমার মনে হয় ভারত বর্ষ ও তার অঙ্গরাজ্যের প্রশাসকদেরও এই বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া উচিত, কোনভাবেই তারা যেন মনে করে না নেয় তারাই এক এবং অদ্বিতীয় কারণ মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রে মানুষই শেষ কথা। বর্তমানে স্বাধীনতার পূণ্য লগ্নে কথাই প্রকাশ পাচ্ছে যে ধীরে ধীরে সরকারি কোম্পানি গুলির বেসরকারিকরণ, সামাজিক অবক্ষয়, পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে আর্থিক কেলেঙ্কারি রেশন ব্যবস্থায় দুর্নীতি মানুষের মনের মধ্যে ক্ষোভের আগুন সঞ্চারিত করছে এবং এই আগুন যাতে দাবানলের ভূমিকা পালন না করে তাই শাসকের কাছে আমার আবেদন যে আপনারা একটু “মানুষ হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান ” তাহলেই সার্থকতা পাবে কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন এবং মানুষের মনের মধ্যে বিকশিত হবে প্রকৃত স্বাধীনতার বার্তা।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ