আদানি গোষ্ঠীর সঙ্গে সেবি প্রধানের অংশীদারিত্ব নিয়ে কি কি তথ্য প্রমাণ পেশ করেছে আমেরিকার শেয়ার বাজার বিশ্লেষক সংস্থা হিন্ডেনবার্গ! জানতে হলে পড়ুন
বিশেষ প্রতিনিধি : গতকাল শনিবার রাতে কার্যত বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমেরিকার বেসরকারি সংস্থা হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। যদিও আগে থেকেই ওই সংস্থা বলে আসছিল এমন একটা তথ্য পরিসংখ্যান তারা পেশ করতে চলেছে তার ফলে ভারতের রাজনীতিতে উথাল পাতাল শুরু হবে। এবারের অভিযোগের তীর আদানি ও সেবী প্রধানের সম্পর্ক নিয়ে। আমেরিকার ওই সংস্থার আসলে অভিযোগটা কি তা আমাদের পাঠকদের উদ্দেশ্যে পর পর তুলে ধরা হলো। ডিজিটাল আনন্দবাজারে প্রকাশিত এই খবরটি আমরা হুবহু তুলে ধরছি।
আমেরিকার শেয়ার বিশ্লেষক সংস্থার দাবি, আদানিদের যে সংস্থার বিরুদ্ধে আর্থিক কারচুপির অভিযোগ ছিল, সেই অফশোর সংস্থায় গোপন অংশীদারি ছিল সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ার (সেবি) চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচের।
হিন্ডেনবার্গের আরও দাবি, বিদেশি বার্মুডা ও মরিশাস ফান্ডে অংশীদারিত্ব ছিল শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবির প্রধানের। গৌতম আদানির ভাই বিনোদ আদানির বিদেশে থাকা সংস্থায় অংশীদারিত্ব রয়েছে সেবি প্রধান এবং তাঁর স্বামীর।
দুই ফান্ডের মাধ্যমে আদানি গোষ্ঠীতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল বলে রিপোর্টে প্রকাশ। বারমুডা ও মরিশাসের অখ্যাত অফশোর ফান্ডে মাধবী বুচ ও তাঁর স্বামীর অঘোষিত বিনিয়োগ ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে। সেই ফান্ডের উৎস ছিল মাধবীর বেতন।
২০১৭ সালে সেবিতে যোগ দেন মাধবী। মাধবী সেবিতে যোগ দেওয়ায় কয়েক সপ্তাহ আগে তাঁর স্বামীর নামে বিনিয়োগ হস্তান্তর করা হয় বলে অভিযোগ।
হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০১৮ সালে ব্যক্তিগত ই-মেল ব্যবহার করে স্বামীর নাম করে বিনিয়োগ থেকে টাকা তুলে নেন মাধবী। ২০২০ সালের মার্চ মাসে সেবির চেয়ারপার্সন নিযুক্ত হন তিনি। তার পরই ব্ল্যাকস্টোন নামে একটি সংস্থায় উপদেষ্টা হিসাবে যোগ দেন মাধবীর স্বামী ধবল বুচ।
তার পরই এ দেশে জমি, আবাসন, রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্টের (আরআইআইটি) ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে শুরু করে ব্ল্যাকস্টোন নামের লগ্নিকারী সংস্থাটি। মাধবী সেবিতে যোগ দেওয়ার পর ব্ল্যাকস্টোনকে সুবিধা পাইয়ে দিতে আরআইআইটি-র বহু নিয়ম পাল্টে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে এই রিপোর্টে।
হিন্ডেনবার্গের সাম্প্রতিক এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই রাজনীতিতে নতুন করে আলোড়ন শুরু হয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে হিন্ডেনবার্গের দাবি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সেবির চেয়ারপার্সন মাধবী পুরী বুচ এবং তাঁর স্বামী ধবল বুচ।
আদানি-যোগের অভিযোগ তুলে তাদের চরিত্র হনন করা হচ্ছে বলে পাল্টা দাবি করেছেন বুচ দম্পতি। যৌথ এক বিবৃতিতে বুচ দম্পতির তরফে বলা হয়েছে, যাবতীয় আর্থিক তথ্য প্রকাশ্যে আনার বিষয়ে তাঁদের কোনও সঙ্কোচ নেই।
গোপন আঁতাঁতের তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে হিন্ডেনবার্গ সংস্থাকে তোপ দেগে তাঁরা বলেন, যে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের ভিত্তিতে সেবি তদন্ত শুরু করেছে ও শো-কজ় নোটিস পাঠিয়েছিল, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই সংস্থাই তাঁদের চরিত্র হননের চেষ্টা করছে।
খুব শীঘ্রই তাঁরা একটি বিস্তারিত বিবৃতি প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন সেবির প্রধান এবং তাঁর স্বামী। ১০ অগস্ট যে তথ্য দেওয়া হয়েছে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে, তার পুরোটাই ভুয়ো বলে দাবি করেছেন বুচ দম্পতি।
তবে রিপোর্ট নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র সমাজমাধ্যমে বলেন, সেবিতেই যদি দুর্নীতি থাকে, তা হলে নজরদারি কারা করবে। কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘প্রহরীর প্রহরা দেওয়া’ নিয়ে।