অন্যান্য কলকাতা 

চিরনিদ্রায় বাংলার শিল্পের রূপকার কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য…../অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেয়ার করুন

অর্পণ বন্দ্যোপাধ্যায় :“মৃত্যু তা সে যতই বড় হোক কঠোর হলে দি তাহারে সাজা

আমায় যদি হঠাৎ কোনো ছলে,

Advertisement

কেউ করে দেয় আজকে রাতের রাজা ”

কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বাংলা তথা বাঙালির এক আবেগের নাম, তিনি শুধুমাত্র প্রথাগত বামপন্থী রাজনীতির ঘেরাটোপ থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আলাদা কোন গাম্ভীর্য সাধারণ মানুষ কোনদিন প্রত্যক্ষ করেনি বললেই চলে একজন আদ্দান তো কমুনিস্ট এর উদাহরণ কি হওয়া উচিত তার তার সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘদিনের রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য দুবারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তার জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি, আজ যখন সাধারণ পঞ্চায়েত স্তর থেকে দুর্নীতি লক্ষ্য করা যায় তখন ক্ষমতার একেবারে শীর্ষে বসেও দুর্নীতির কালো দাগ তার সাদা পাঞ্জাবি স্পর্শ করতে পারেনি। বহু কমিশন বসেছে তার নামে, তাকে গণহত্যার নায়ক উপাধিতে ভূষিত করেছে অনেক ভুঁইফোর উঠে আসা রাজনীতিবিদ, তার গুরুত্ব অচিরেই অস্বীকার করতে চেয়েছে বাংলার রাজনীতিতে তার ভূমিকা কি তা কিছু দলের মুখপাত্র একেবারেই নস্যাৎ করতে চেয়েছে কিন্তু মানুষের মন থেকে ২০১১ সালের পর থেকেও মুছে ফেলা যায় নি তাঁর নাম। কারণ সত্যিই যদি বাংলার রাজনীতিতে সততার প্রতীক বা সততার সমার্থক শব্দ যদি কেউ হয়ে থাকে তিনি হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

যিনি অবলীলায় পদ্মভূষণ উপাধি, আবার কেউ যখন পাম এভিনিউ এর বাড়ি ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রাসাদ প্রমাণ বাংলয় থাকার পরামর্শ দেয় হেসে ফুৎকারে উড়িয়ে দেন সেই প্রস্তাব, তার কন্যা যখন প্রেসিডেন্সি কলেজে লাইন দিয়ে আর পাঁচটা সাধারন ছাত্রছাত্রীর মতো ফর্ম তোলে এবং সেই নিয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর দেন যে” এটাই তো স্বাভাবিক তবেই তো বাংলা তথা ভারতবর্ষের রাজনীতি উন্নতি সাধন করবে ” এইরকমই একটি ব্যতিক্রমী মানুষ ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, একজন সাহিত্যিক, সঙ্গীত পিপাসু, শিল্প সংস্কৃতি বোদ্ধা, রুচি সম্পন্ন মানুষের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে কিছু স্বপ্ন দেখা, বাংলার রাজনীতি তথা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলো না, কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ তার বেকারত্ব দূর করার যে প্রচেষ্টা, বাংলায় শিল্প স্থাপন করার যে অদম্য উৎসাহ তাকে ভুল ব্যাখ্যায় পর্যবসিত করল।

আজও মনে পড়ে রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসার পর সাংবাদিক সম্মেলনে তার চোখ দুটি সেই দিনই যেন তিনি বুঝে গেছিলেন যে বাংলার ভাগ্যাকাশ থেকে সততা নামক শব্দটি ধীরে ধীরে চলে গিয়ে দুর্নীতির কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে, না তিনি কোনদিনও বন্দুক দিয়ে বুলডোজার দিয়ে বিরোধী কন্ঠ রোধ করেননি। উপরন্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বারবার সজোরে সওয়াল করে এসেছেন যে বিরোধীদলের রাজনীতি করার অধিকার আছে, তাদের আন্দোলন জোর করে দমন করার অধিকার সরকারের নেই, তাই মাথা পেতে মেনে ছিলেন ২০১১ সালের জনতার রায় ছেড়ে চলে এসেছিলেন শেষবারের মতো রাইটার্স বিল্ডিং।  কিন্তু কোন দুর্নীতি তার সরকার বা তাকে কলুষিত করতে পারিনি, বরং তার দেখা স্বপ্ন গুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন ইমারত, তিনি এই শহরেরই এক ছোট্ট ঘরের কোণে ডুবে থেকেছেন বই এবং লেখালেখি নিয়ে পৌঁছতে চেয়েছেন তার বার্তা তার কথা সাধারণ মানুষের কাছে বুঝাতে চেয়েছেন যে অদ্ভুত যে এক আঁধার এসেছে তাকে সরাতে হবেই । ধীরে ধীরে অসুস্থতা তাকে ক্লান্ত করেছে, চোখের জ্যোতি গেছে কমে মতাদর্শ থেকে হননি বিচ্যুত খবরা খবর নিয়ে গেছেন রাজ্য রাজনীতির তথা আপন দল সিপিআইএমের তরুন তুর্কিদের ফলাফল নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলেন, আশীর্বাদ করেছিলেন কলকাতা দক্ষিণের প্রার্থী সায়রা সাহ হালিমকে। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল আজ, ঠিক এক বছর আগে এই দিনে অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন হাসপাতালে আর্থিক এক বছর পর অসুস্থ হয়ে নিজের প্রাণাধিক প্রিয় পাম এভিনিউয়ের ঘর থেকে অনন্ত লোকের পথে যাত্রা করলেন। বাংলার রাজনীতির ইতিহাসের ট্রাজিক নায়ক কমরেড বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যার বিকল্প বাংলার রাজনীতিতে আর হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ