শিক্ষার্থীর জীবনে যিনি মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে পারেন তিনিই সফল শিক্ষক! : সেখ হাসান ইমাম
বিশেষ প্রতিনিধি : শিক্ষক সমাজ গড়ার কারিগর। আগামী প্রজন্মের নির্মাণকারী। সেই শিক্ষকই সবচেয়ে উত্তম যিনি শিক্ষার্থীদের অন্তরে মনুষত্বের বীজ বপন করেন । আজ বুধবার কলকাতার মেটিয়াবুরেজের সাতঘরা হাই মাদ্রাসায় দুই শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বহু গ্রন্থ প্রণেতা এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ সেখ হাসান ইমাম এই কথাগুলি বলে। তিনি আরো বলেন জীবনে বড় হতে গেলে শৃঙ্খলা পরায়ণ হতে হয়। আর এই শৃঙ্খলাটা আসবে আমাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকে। শিক্ষকরা যদি নিজেরা সঠিক সময়ে নিজেদের দায় এবং দায়িত্ব পালন করে তাহলে তাদের কাছ থেকে এই ছেলেমেয়েরা শিখবে।
স্বল্প সময়ের মধ্যেই বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হাসান ইমাম প্রকৃত শিক্ষকদের করণীয় কি হতে পারে কি করলে আগামী প্রজন্ম আরও বেশি করে দেশের প্রতি সেবা দিতে পারে,তা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন শুধুমাত্র ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না প্রকৃত মানুষ হতে হবে সেই প্রকৃত মানুষ হওয়ার সংজ্ঞাটাই হল প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করা। বাবা মায়ের প্রতি সঠিক দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সমাজের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে। পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেলেই সে ভালো ছাত্র নাও হতে পারে। সমাজের প্রতি যথাযথ দায়ী এবং দায়িত্ব পালন করতে পারলেই তবেই একজন শিক্ষার্থী প্রকৃত মানুষ হতে পারবে। এই শিক্ষাটাই আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।
এদিনের অনুষ্ঠানে এই মাদ্রাসার গণিতের শিক্ষিকা খোদেজা খাতুন এবং ইংরেজি শিক্ষক সেখ রহিমকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কলকাতা জেলা সংখ্যালঘু আধিকারিক আরশাদ জামাল হাশমি। তিনি বলেন শিক্ষক মহাশয়দের বিদায় নিঃসন্দেহে বেদনার। একজন শিক্ষক কয়েক দশক একসঙ্গে চাকরি করার পর এই স্কুলটাকে বা মাদ্রাসা থেকে নিজের ঘর মনে করেন। নিজের পরিবার মনে করেন শিক্ষার্থীদের মনে করেন তাদের ছেলেমেয়ে এই অবস্থা থেকে যখন বিদায় নিতে হয় তখন কষ্ট আসবেই কিন্তু বিদায় তো দিতে হবে । শিক্ষকদের প্রতি তখনি আমাদের সম্মান জানানো হবে যখন তাদের আদর্শকে আমরা পাথেয় করে এগিয়ে যেতে পারবো। তিনি আরো বলেন আজকে দুই শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানে এসে মানে হচ্ছে সত্যিকার অর্থেই প্রকৃত শিক্ষকের মর্যাদা পেয়েছেন এরা যেভাবে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে তার সহকর্মীরা পর্যন্ত আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তাতে এটা প্রমাণিত হচ্ছে।
এদিনের সভায় সভাপতিত্ব করেন এই মাদ্রাসার প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হারুন উর রশিদ। তিনি এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আজকের উঠে আসা পর্যন্ত খুব সংক্ষেপে বিবরণ দেন। দুই সহকর্মীর বিদায় বেলায় তাদের প্রতি গভীর অনুরাগ ব্যক্ত করেন প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক হারুন উর রশিদ। তিনিও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে শৃঙ্খলা পরায়ন হওয়ার আহ্বান জানান।
বিদায়ী শিক্ষক শেখ রহিম সাহেব বলেন, এখানে এসে পড়াতে এসে কখন এই প্রতিষ্ঠানকে নিজের অন্তরে প্রবেশ করিয়ে নিয়েছি। তা মনেই পড়ে না। আজ বিদায় বেলায় সেই স্মৃতিগুলো মনে আসছে। এই এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে দুই অভিভাবক আমাদের মধ্যে ছিলেন সেই সময় আলহাজ্ব আবু হোসেন সাহেব এবং শেখ তৈয়ব আলী সাহেব এরা এখন আর আমাদের মধ্যে নেই। তাদের অভাব আমাদেরকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন তোমরা ভালো করে পড়াশোনা শেখো ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করো।
বিদায়ী শিক্ষিকা খোদেজা খাতুন বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে যিনি আমাকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি আজ আমাদের মধ্যে নেই। আমি অবসর নেওয়ার এক সপ্তাহ পরে তিনি পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন সেই মহান মানুষ এস টি আলী সাহেবকে আজ আমাদের খুব মনে পড়ছে। এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট শিক্ষক সেখ মনির উদ্দিন, বদরতলা হাই স্কুল এর টিচার ইনচার্জ কুলদীপ সিং, বিশিষ্ট শিক্ষক ও লেখক সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। এদিনের অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাতঘরা হাই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেখ ইবাদুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষক কুতুব উদ্দিন মোল্লা, শান্তনু চক্রবর্তী, আশানুর মল্লিক মাদ্রাসার পরিচালন সমিতির সম্পাদক আলহাজ্ব সেখ নূরনবী, সভাপতি আলহাজ্ব গোলাপ রহমান, সহ-সভাপতি শাহজাদী মেহতাব, মেহতব উদ্দিন, নিজামউদ্দিন, মোহাম্মদ আসলাম মোল্লা, জামশেদ আলী প্রমুখ।
এদিনের অনুষ্ঠানের সূচনা লগ্নেই সাতঘরা হাই মাদ্রাসার জমিদাতা ও প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আলহাজ্ব সেখ তৈয়ব আলীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনা করা হয়। এদিনের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শেখ হাসান ইমামের পক্ষ থেকে মাদ্রাসার দুই কৃতি ছাত্র এবং ছাত্রী কে পুরস্কৃত করা হয়। এই দুই ছাত্র-ছাত্রী হল তাজ উদ্দিন মোল্লা এবং আলিশা খাতুন।