নীতি আয়োগের বৈঠকে নীতিশের অনুপস্থিতি নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে! মমতা বললেন, তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বলতে দেওয়া হয়নি! মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ সত্যি হলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক !
বাংলার জনরব ডেস্ক : নীতি আয়োগ এর বৈঠকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে যোগ দেননি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে যুক্ত কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বা ওই দলের মুখ্যমন্ত্রীরা কেউই আজকের নীতি আয়োগ এর বৈঠকে যোগ দেননি। তবে ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে আছেন বলে দাবি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবারের ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যোগ দেন। কিন্তু বৈঠকে যোগ দেওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি বেরিয়ে এসে দাবি করেন তাঁর মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতদিন ধরে সংসদে রাহুল গান্ধীর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছিল বলে কংগ্রেসের অভিযোগ ছিল। কিন্তু নীতি আয়োগ এর বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এই অভিযোগ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এটা ঠিকই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগে যদি সামান্য সত্যতা থাকে তাহলে তা গণতন্ত্রের পক্ষে মারাত্মক বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীর মাইক নীতি আয়োগ এর বৈঠকে বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে তা শুধু শিষ্টাচার বিরোধী নয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোরও বিরোধী। উল্লেখ্য আজ শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে নীতি আয়োগ এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ইন্ডিয়া জোটের সব মুখ্যমন্ত্রীরা অনুপস্থিত ছিলেন। কংগ্রেস শাসিত তিনটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আপ শাসিত দুটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমনকি ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনের উপস্থিত থাকার কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেও তিনি শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন না। গত মঙ্গলবার 23 শে জুলাই সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ করার পরেই রাজ্যগুলিকে বঞ্চনার প্রতিবাদে ইন্ডিয়া জোট সিদ্ধান্ত নেয় তাদের শাসিত রাজ্য গুলির মুখ্যমন্ত্রীরা নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন না। সেইমতো উপরোক্ত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীরা এই বৈঠকে যোগ দেননি।
মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি উপস্থিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি গতকাল শুক্রবার বলেন কংগ্রেস দল আলোচনা না করেই নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কটের ডাক দিয়েছে। আমাদের সঙ্গে আলোচনা করলে অন্য সিদ্ধান্ত হত কিন্তু যেহেতু আলোচনা করেনি তাই আমি ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে যোগ দেব। সেই মোতাবেক আজ সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনে অনুষ্ঠিত নীতি আয়োগ এর বৈঠকে তিনি যোগ দেন। কিছুক্ষণ ওই বৈঠকে থাকার পরে তিনি বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন তাঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে বলতে দেওয়া হয়নি।
মমতার ভাষায়, ‘‘আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে।’’রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘অন্য কয়েক জনকে ২০ মিনিটের বেশি বলার সুযোগ দেওয়া হলেও আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি। তার আগেই মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বঞ্চনার প্রতিবাদে আমি বৈঠক ছেড়ে চলে এসেছি।’’
অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডু ২০ মিনিট বলা সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান মমতা। তাঁর দাবি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও বলায় যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন। তাঁর মাইক বন্ধের ঘটনাকে সরাসরি ‘অপমান’ বলেও চিহ্নিত করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র আমিই বৈঠকে হাজির ছিলাম। কিন্তু বলতে দেওয়া হল না। আমি আরও কিছু বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই মাইক বন্ধ করে অপমান করা হল।’’
নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন জানিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি বলেছি আপনাদের (কেন্দ্রীয় সরকার) কোনও রাজ্য সরকারের প্রতি বৈষম্য করা উচিত নয়। আমি কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে মাত্র ৫ মিনিট কথা বলতে দেওয়া হয়েছিল। আমার আগে লোকেরা 10-20 মিনিট কথা বলেছিল। বিরোধী দল থেকে আমিই একমাত্র অংশগ্রহণ করছিলাম কিন্তু তবুও আমাকে কথা বলতে দেওয়া হয়নি। এটা অপমানজনক।’’ মমতা জানিয়েছেন, এর পরে নীতি আয়োগের আর কোনও বৈঠকে তিনি থাকবেন না।