প্রচ্ছদ 

বাজেট প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে লোকসভায় বিজেপি সরকারকে তুলোধোনা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি :  বাজেট প্রস্তাবের উপর বক্তব্য রাখতে উঠে লোকসভায় অসাধারণ বক্তব্য রাখলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুরে লোকসভায় যখন অভিষেক বক্তব্য রাখছিলেন বিজেপি শিবির থেকে হইচই করা হলেও কিন্তু তার প্রতিটা শব্দের মধ্যে যে যুক্তি ছিল তাতে বিজেপির শিবির অনেকটাই ঘায়েল হয়ে যায়। এদিন তিনি বাজেট বা BUDGET শব্দের এক তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা দেন। B For Britryal, U for Unemployment,D for Deprived,G for Guaranty Or Ghotala, T for Tragedy. এরপরেই তিনি বলেন বিজেপির এখন স্লোগান পাল্টে গেছে সবকা সাথ সব কা বিকাশের বদলে জো হামারা সাথ হোম উনকো সাথ হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের বাজেটে তেমন কিছু উল্লেখযোগ্য না থাকলেও অন্ধ্রপ্রদেশ এবং বিহারের জন্য বেশ কিছু বরাদ্দ রয়েছে। অনেকগুলি আর্থিক প্যাকেজ এবং প্রকল্পের কথা ঘোষণা করা হয়েছে এই ইস্যুতে বলতে গিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এই বাজেটে বেছে বেছে ৩টি রাজ্যকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তা হল তেলেঙ্গানা, পশ্চিমবঙ্গ ও কর্নাটক।’ অভিষেকের কথায় এটা কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়, “এই তিন রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে অবিজেপি দল। তাই এই বঞ্চনা।” একইসঙ্গে ইংরেজি BUDGET শব্দের ৬টি অক্ষরের আলাদা আলাদা ব্যাখ্যা তুলে ধরেন অভিষেক। ইংরাজি ‘B’ শব্দটির অর্থ ‘বিট্রেয়াল’ অর্থাৎ বিশ্বাসঘাতকতা। ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “আচ্ছে দিনের ১০ বছরে আজ ৪০ টাকা আলুর দাম, হাজার টাকা গ্যাসের দাম। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছে বিজেপির আচ্ছে দিনে।”

Advertisement

এছাড়া ‘U’ অর্থে আনএমপ্লয়মেন্টকে তুলে ধরেন অভিষেক (Abhishek Banerjee)। বলেন, “বিজেপির ১০ বছরে বেকারত্ব ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। ৫টি প্রকল্প এবং ৪ কোটি ১০ লক্ষ যুবকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অর্থমন্ত্রী ২ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন। এর আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল প্রতি বছর ২ কোটি চাকরি দেওয়ার। তা পূরণ করা হয়নি। এখন অবাস্তব লক্ষ্য নিয়ে দৌড়চ্ছে এরা।” ‘D’ বলতে তিনি বোঝান ডিপ্রাইভ অর্থাৎ বঞ্চিত। তাঁর দাবি, “গত ১০ বছরে দেশের নারী থেকে শিশু এই সরকারের আমলে মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ছাড়া সকলে শুধু বঞ্চিত হয়েছেন। বাংলায় হেরে এরা ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনার টাকাও আটকে দিয়েছে। ‘G’ অর্থাৎ গ্যারেন্টি ও ঘোটালা।” এমন আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মাঝেই শাসক শিবির থেকে অভিষেককে থামাতে আওয়াজ ওঠে। পালটা আওয়াজ তোলে বিরোধী শিবির।

এরই মাঝে অভিষেক বলেন, “বিজেপি সবকা সাথ সবকা বিকাশ-এর মন্ত্র ভুলে ‘জো হামারে সাথ, হম উনকে সাথ’ মন্ত্রে চলছে। বাংলার বিরোধী দলনেতা নিজেই একথা বলেছেন। লোকসভা, রাজ্যসভায় বিজেপির একজনও মুসলিম সদস্য নেই। সংসদে বৈচিত্রের অভাবে, সংসদে সংখ্যালঘুদের আকাঙ্খা পূরণ হচ্ছে না। সরকারি নীতি অসাম্যকে বাহবা দিচ্ছে। তাই লোকসভা নির্বাচনে মোদি সরকারকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে।” এছাড়া বাজেটের শেষ ‘T’-এর ব্যাখ্যা করে অভিষেক বলেন, “টি ফর ট্র্যাজেডি। এই সরকারের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি হল কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে অপব্যবহার করা। বিরোধী দলের লোক হলেই মুখ বন্ধ করতে এজেন্সি লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”

এদিন সংসদে কৃষক মৃত্যুর প্রসঙ্গ তুললে অভিষেককে থামিয়ে স্পিকার বলেন, “এই নিয়ে এর আগে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে।” অভিষেক প্রতিবাদ জানালে স্পিকার বলেন, “আমি স্পিকার। আমি বলছি আপনাকে শুনতে হবে।” তা শুনে টেবিল চাপড়াতে দেখা যায় শাসকদলের সাংসদদের। পালটা অভিষেক বলেন, “যারা তালি বাজাচ্ছে তাদের জন্য সাতশো কৃষক মারা গেছে। এরা একজনের জন্যও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন?” স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “কেউ ৫০ বছর আগে নেহেরু জমানার প্রসঙ্গ তুলে কথা বললে আপনি চুপ থাকেন, আর আট বছর আগের নোটবন্দির প্রসঙ্গে বলতে গেলে আপনি থামিয়ে দেন।”


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ