আপাত শান্ত বাংলাদেশের কোটাবিরোধী আন্দোলন হঠাৎ করে উগ্র আন্দোলনে পরিণত হলো কিভাবে? এর জন্য দায়ীকে! জানতে হলে পড়ুন
বাংলার জনরব ডেস্ক : সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে গোটা বাংলাদেশ এখন উত্তাল হয়ে উঠেছে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের উন্মত্ত্ব আচরণে এ পর্যন্ত ছত্রিশ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। যদিও বেসরকারি সূত্রে এই মৃত্যুর আরও বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। আন্দোলনকারী বাদেও অনেক নিরাপরাধ ছাত্র-ছাত্রীরা গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এক কথায় হাসিনা সরকারের অমানবিক আচরণে বাংলাদেশ কার্যত অগ্নিগর্ভ। একইসঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন হাসিনা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবি দেখে এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আসরে নেমেছে। সামাল দিতে না পেরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কে দমন করতে পুলিশ সমস্ত রকম মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
কোটাবিরোধী আন্দোলন বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চললেও তা ছিল শান্তিপূর্ণ। শান্তিপূর্ণ গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এবং যুবসমাজ দাবি আদায়ের কৌশল নিয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখা ছাত্রলীগ গত ১৬ জুলাই আন্দোলনকারী ছাত্রদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাদেরকে ব্যাপক মারধর করে। এরপরেই ঢাকা সহ বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক আন্দোলন একেবারে গ্রাম গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। উত্তাল হয়ে পড়ে সমগ্র বাংলাদেশ। এরই মাঝে প্রধানমন্ত্রী হাসিনা মন্তব্য করে বসেন মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপোতাদের জন্য কোটা থাকবে না তো রাজাকারদের জন্য কোটা থাকবে? সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর আরো বেশি পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যায়!
স্লোগান উঠতে থাকে তুমি কে? আমি কে? রাজাকার রাজাকার। এরই মাঝে রংপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে মারে বাংলাদেশের পুলিশ। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে তা ছড়িয়ে পড়ার পরেই সমগ্র বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে পড়ে। আবু সাঈদের মৃত্যু মিছিলের লাশ তার দাফন কাজ থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রে কার্যত বাংলাদেশ প্রশাসন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে জনতার কাছ থেকে। আবু সাঈদের মৃত্যুর দৃশ্য ভাইরাল হওয়ার পর কার্যত সমগ্র বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিক ও এই আন্দোলনের শামিল হয়ে যায়। ফলে সরকারপক্ষ আন্দোলন সামাল দিতে পারছে না। অন্যদিকে শাসক আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন যেভাবে সাধারণ নাগরিকের উপরে হামলা চালাচ্ছে তার পরিণতিতে আন্দোলন আরো গতি পেয়েছে। এক কথায় বলা যেতে পারে বিগত ৭২ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশের সমস্ত প্রশাসন হাসিনা সরকারের হাতছাড়া হয়ে গেছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে পুলিশের গুলি তে এখনো পর্যন্ত ৩৬ জনের প্রাণ ঝরে গেছে। যাদের বয়স ৩০ এর নিচে বলে জানা গেছে। রামপুরা এলাকায় বাংলাদেশ টিভি বা বিটিভির সদর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার অভিঘাত এমনই যে, সম্প্রচার বন্ধ করে দেয় বিটিভি। বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট হ্যাক করে নেওয়া হয়। কুমিল্লা এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় সড়কের ওপর প্রায় পাঁচ ঘন্টা ধরে সংঘর্ষ চলে। যাতে পঞ্চাশজনেরও বেশি আহত হ’ন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের কর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ৫৩ জনের বেশি আহত ভর্তি রয়েছেন। বেশিরভাগই অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রী।
পুলিশ-র্যাব-বিজিবি এই তিন মিলিত নিরাপত্তাবাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামি লিগের দুই শাখা-সংগঠন, ছাত্রলিগ ও যুবলিগ। যার ফলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রুত ছড়িয়ে যায় বিক্ষোভ। একের পর এক নামী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে দফায় দফায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান ছাত্রলিগ সমর্থকরা। এই পরিস্থিতিতে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
এবার পুলিশের তরফেও রাজধানীতে প্রায় অলিখিত কার্ফু জারি হয়ে গেল। ঘটনাচক্রে, আজই বিএনপি এবং আওয়ামি, দুই দলেরই জমায়েত হওয়ার কথা ছিল। বেলা তিনটে নাগাদ ঢাকা প্রেস ক্লাবের সামনে সভা ডেকেছিল বিএনপি। উল্টোদিকে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে সভা হওয়ার কথা আওয়ামি লিগের। কিন্তু ঢাকা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ফারুক হোসেন জানিয়ে দিলেন, আপাতত এসবের কিছুই করার অনুমতি তাঁরা দেবেন না। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া অবধি সভাসমিতি বন্ধ রাখা হবে।
গত কাল বাংলাদেশ জুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার পর আইন মন্ত্রীর পক্ষ থেকে আন্দোলনকারী ছাত্রদের কাছে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু এই আহ্বান জানানোর কয়েক মিনিট পরেই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কোন আলোচনা নয়। লাশ মাড়িয়ে কোন আলোচনা হবে না বলে জানিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে বাংলাদেশের সাধারণ নগরিক আন্দোলন যখন বিগত একমাস ধরে চলছে তখন এতদিন পরে আলোচনার কথা কেন বলা হচ্ছে? প্রশ্ন তোলা হয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিন আগেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছেন সেখানে তিনিই আন্দোলনকে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি। ৩৬ জন মানুষের মৃত্যুর পর কেন বলা হচ্ছে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে? কেন আওয়ামী লীগের ছাত্র শাখা ছাত্রলীগকে আন্দোলনকারীদের দিকে লেলিয়ে দেয়া হয়েছিল এ প্রশ্নের উত্তর হাসিনাকে বাংলাদেশের জনতাকে দিতে হবে? একথা স্পষ্ট যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তার শেষ কোথায় হবে কেউ জানে না! আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে খোঁজখবর রাখেন এমন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন এই আন্দোলনে শেষ পরিণতি হাসিনা সরকারের পতন!