বিজেপির কর্ম সমিতির বৈঠকে সাংগঠনিক দায়িত্বে না থাকার অজুহাত দেখিয়ে দায় এড়ালেও ভোট বিপর্যয়ের দায় নিতে হবে শুভেন্দুকেই! কেন?
বিশেষ প্রতিনিধি : সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের বিপর্যয় নিয়ে আজ বুধবার কলকাতার সায়েন্স সিটির অডিটোরিয়ামে রাজ্য বিজেপির কর্ম সমিতির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই বৈঠকে রাজ্য বিজেপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে এসে পড়ে। এমনকি রাজ্য বিজেপির জনপ্রিয় নেতা বলে কথিত প্রচারিত প্রাক্তন তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, নরেন্দ্র মোদীর বিখ্যাত স্লোগানকেও পাল্টে ফেলার ডাক দেন তিনি বলেন সবকা সাত সবকা বিকাশ এ স্লোগান আর চলবে না। রাজ্য বিজেপির এই বিপর্যয়ের কাহিনী বলতে গিয়ে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজ কে নিশানা বানান। যেভাবে যে কায়দায় শুভেন্দু অধিকারী আজকের বৈঠকে মুসলিম সমাজকে নিশানা করেছে তা এক কথায় অভাবনীয় অপ্রত্যাশিত। বিজেপির কট্টর পন্থী নেতারাও এই ধরনের বক্তব্য বলবেন বলে আমাদের মনে হয় না। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে শুভেন্দু অধিকারী কেন এই ধরনের বক্তব্য আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সামনে রাখলেন।
ভোট বিপর্যয়ের দায় কেন নিজের স্বীকার করলেন না। শুভেন্দু অধিকারী পছন্দের প্রার্থীরাই এবারে অগ্রাধিকার পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। আরএসএসের একসময়ের প্রচারক দিলীপ ঘোষ কে মেদিনীপুর আসন থেকে সরিয়ে দিয়ে অগ্নিমিত্রা পলকে ওই আসনে প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত কে নিয়েছিলেন? এই প্রশ্ন জানতে চাই এ রাজ্যের সাধারণ নাগরিকরা! কিভাবে এই রাজ্যের বিজেপির সর্বনাশ করেছে শুভেন্দু অধিকারী তা হয়তো বুঝে উঠতেই পারছেন না বিজেপির বর্তমান নেতারা এবং আরএসএস-এর বর্তমান নেতারা!
এদিনের সভায় তিনি বলেছেন আমি কোন সাংগঠনিক পদে ছিলাম না আমি শুধুমাত্র বিরোধী দলের নেতা। অথচ ভোট শেষ হওয়ার পর এই শুভেন্দু অধিকারী ফলাফল প্রকাশের পর বলেছিলেন এই রাজ্যতে বিজেপি কম আসন পেয়েছে ঠিকই কিন্তু হারিয়ে যায়নি। তাহলে কি এমন হলো শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য কর্ম সমিতির বৈঠকে দাঁড়িয়ে সরাসরি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কে আক্রমণ করলেন? কারণ হতাশা শুভেন্দু অধিকারী ভেবেছিলেন 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি মিডিয়ার প্রচারের জোরে ১১০ ১৫ টা আসন পেয়ে যাবে আর বাকিটা ইডি সিবিআই দেখিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভেঙে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসে যাবেন। সেই কারণে তিনি তৃণমূলের সমস্ত কিছু ভোগ করার পরও দল ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন নবান্নের গদিতে বসার জন্য। আজকের কর্ম সমিতির বৈঠকে তিনি খানিকটা বিক্ষোভের সঙ্গেই বলেন আমি সব ছেড়ে দিয়ে বিজেপিতে এসেছিলাম। আমি কোন কিছুর জন্য বিজেপিতে আসেনি। আমার কাছে সবকিছু ছিল। সেগুলো ছেড়ে আমি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলাম।
এবারের নির্বাচনে ও শুভেন্দু থেকে শুরু করে অমিত শাহ প্রত্যেকেই দাবি করেছিলেন কমপক্ষে ৩৫ টা আসন পাব। এমনকি চৌঠা জুনের পর তৃণমূল নেত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না তৃণমূল সরকার থাকবে না এই ধরনের হুংকার দিয়ে চলেছিলেন এই শুভেন্দু অধিকারী। এর দায় কি তিনি এড়াতে পারেন? সংখ্যালঘু সমাজের দুষ্কৃতীরা ভোটে বাধা দিয়েছে। তাই ভোট করাতে পারেননি, তাই হেরে গেছেন এটা অজুহাত মাত্র আসলে সত্যটা হলো যে আপনাদের ভোট করানোর মত ক্ষমতা ভোট করানোর মতো সাংগঠনিক দক্ষতা আপনাদের নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়ায় থেকে যে ক্ষমতা আপনি প্রয়োগ করতে পারতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছত্রছায়া থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর সে ক্ষমতার প্রয়োগ করতে পারছেন না। কিন্তু ঐ যে ক্ষমতার লোভ ছাড়তে পারেন না সেজন্যই আজকে আপনি বিজেপি পার্টির মধ্যেই এক ঘরে হয়ে গেছেন। হতাশা থেকেই আজকে যে ভাষায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আক্রমণ করে বলেছেন সবকা সাতকা বিকাশ স্লোগান বন্ধ করে দেয়া হোক তার চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর কিছুই হতে পারে না।
শুভেন্দু অধিকারী রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এই রাজ্যে একটাই আছে তিনি যদি পুনরায় তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে যান তাহলে হয়তো আবারও মন্ত্রিত্ব জুটতে পারে এবং সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়ে কংগ্রেস দলকে ভাঙাতে পারবেন বিজেপির একটা অংশকে ভাঙাতে পারবেন এর বাইরে তার কোন ভবিষ্যৎ আছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না।