তৃতীয় মোদি সরকারের বাজেটে রাহুলের ভাবনার ছাপ!
সেখ ইবাদুল ইসলাম : নরেন্দ্র বলতে কি রাহুল গান্ধীকে ভয় পাচ্ছেন ! নাকি বিজেপি আরএসএস রাহুল গান্ধীর শক্তিশালী বার্তাকে ভয় পাচ্ছেন। এই মুহূর্তে দিল্লির আনাচে-কানাচে খোঁজ নিলে জানা যাবে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ইস্তেহারে যা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাহুল গান্ধী তাকেই ঘুরিয়ে অন্য নামে বাজেটে বাস্তবায়ন করতে চলেছেন মোদি সরকার। তৃতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন একক গরিষ্ঠতায় নয়। এনডিএ জোটের একাধিক শরিকের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠনের সমর্থ হয়েছে মোদি শাহ।
এই দেশের সাধারণ মানুষের কাছে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে, রাহুল গান্ধী যে জনমুখী প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন তা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কখনো কংগ্রেসের ইশতেহারকে মুসলিম লীগের ইশতেহার বলেছেন কখনো কংগ্রেসের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতিকে রাবড়ি বলে কটাক্ষ করেছেন আবার কখনো এই ইসতেহারে ভোটারদের ঘুষ দেওয়া হচ্ছে এই অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছিল বিজেপি। রাহুলের ইশতেহারে কি ছিল ? কৃষকের কথা শ্রমিকের কথা ওবিসির কথা পিছিয়ে পড়া জাতি গোষ্ঠীর কথা সংখ্যালঘুদের কথা সামাজিক ন্যায়ের কথা! বেকার যুবকদের কথা কর্মসংস্থানের কথা এক কথায় রুটি কাপড়া মাকানের কথা। আর দেশের মানুষ রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়ালেন দেশের আম জনতা রাহুল গান্ধীকে তাদের নেতা হিসাবে মেনে নিলেন। সরাসরি আদানি আম্বানিকে আক্রমণ করে এদেশের কোন প্রথম সারির রাজনৈতিক দল সফল হননি। রাহুল সফল হলেন।
মুকেশ আম্বানি নিজে রাহুলের বাড়িতে গিয়ে সোনিয়া রাহুল প্রিয়াঙ্কাকে বিয়ে বাড়িতে আমন্ত্রণ করলেও রাহুল যাননি। এমনকি গান্ধী পরিবারের কেউ ৫ হাজার কোটি টাকার বিয়ে বাড়িতে হাজির হননি। আসলে রাহুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি গরিব অবহেলিত বঞ্চিত সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। দেরিতে হলেও নরেন্দ্র মোদি বুঝতে পেরেছেন রাহুল গান্ধীর পাশে ১৪০ কোটি জনতা রয়েছে আর মোদির পাশে রয়েছে ২২ থেকে ২৪ জন শিল্পপতি।
শিল্পপতিদের আর্থিক সাহায্যে কিছুদিনের জন্য মোদীজি তার নিজের সাফল্যের কথা প্রচার করে ভোট হাসিল করতে পারবেন একদিন সেই প্রচার রুদ্ধ হয়ে যাবে। কারণ রাহুল যেভাবে এদেশের নব্বই শতাংশ মানুষের হয়ে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সওয়াল করছেন তাতে রাহুল যে একদিন সফলতা পাবেন তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আর এখানেই বিপদ বুঝতে পেরেছেন নরেন্দ্র মোদি। আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পেরেছে আরএসএস। তাই মোদির কাছে আরএসএস এর স্পষ্ট বার্তা আর নয় শিল্পপতি তোষণ এবার সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করুন।
দিল্লির সূত্র বলছে, আর সপ্তাহখানেক পরে যে পূর্ণাঙ্গ বাজেট তৃতীয় মোদি সরকার পেশ করতে চলেছেন সেখানে কোন সংস্কার সেই অর্থে থাকবে না। কার্যত রাহুলের দেখানো পথ ধরে বাজেটের মধ্যে সামাজিক প্রকল্পকে বেশি গুরুত্ব দিতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি সরকার। জানা গেছে ১০০ দিনের প্রকল্পে দৈনিক মজুরি বাড়ছে রাহুল বলেছিলেন বাড়াবো ক্ষমতায় এলে ৪০০ টাকা করব। বেকার যুবক যুবতীদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদি সরকার এই বাজেটে, এই বাজেটের কৃষকের জন্য সুখবর আসতে চলেছে, কৃষকের বার্ষিক ভাতা যেমন বৃদ্ধি পাবে একই রকম ভাবে এমএসপি না হলেও অন্য নামে কিছু একটা করার চেষ্টা করতে চলেছে এই বাজেটে মোদি সরকার। শ্রমিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে চলেছেন ছাত্র সমাজের জন্য বিশেষ আর্থিক ব্যবস্থা নিতে চলেছে। বাজেটে সংস্থান থাকবে সমগ্র শিক্ষা মিশনের অর্থ বরাদ্দ বাড়বে সামাজিক প্রকল্পেও অর্থ বাড়বে। এক কথায় রাহুলের দেখানো পথে এগিয়ে চলেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার।
প্রশ্ন উঠেছে রাহুলের দেখানো পথে এগিয়ে যেতে গেলে কোথাও কি ধাক্কা খাবে না? অবশ্যই খাবে কারণ কংগ্রেস যে কোন প্ল্যান ও পরিকল্পনা করে সেখানে স্পষ্ট থাকে তাদের চিন্তাভাবনা নরেন্দ্র মোদির ক্ষেত্রে কোনো পরিকল্পনাতেই চিন্তাভাবনার ছাপ থাকে না! যার ফলে এ পর্যন্ত যতগুলি সরকার প্রকল্প এনেছে তার প্রত্যেকটাতেই দুর্বলতা রয়েছে অবশ্য কংগ্রেস সরকারের আমল থেকে চলে আসা প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে সেই দুর্বলতা চোখে পড়ে না। যদিও অন্য নামে চলছে। যেমন ইন্দিরা আবাসন যোজনা এখন প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় পরিণত হয়েছে! এরকম বেশ কিছু প্রকল্প আছে যেটা কংগ্রেসের আমল থেকে চালু আছে সেগুলোকে নাম পাল্টে চালু করেছে মোদি সরকার। এছাড়া নরেন্দ্র মোদি সরকার নিজের উদ্যোগে যেসব প্রকল্প চালু করেছে তার প্রায় সবটাই মুখ থুবড়ে পড়েছে বললে ভুল বলা হবে না ।