সংরক্ষণ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ! পুলিশ ছাত্রদের সংঘর্ষে মৃত ছয়!
বাংলার জনরব ডেস্ক : উত্তাল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন বাংলাদেশে কয়েক সপ্তাহ আগে শুরু করেছিল সে দেশের ছাত্ররা সেই আন্দোলন এখন বাংলাদেশের প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। আন্দোলন মারমুখী হয়ে উঠেছে ফলে মৃত্যু হয়েছে ৬ জন ছাত্রের।রাজধানী ঢাকা-সহ সে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে অন্তত ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে। আন্দোলনকারীদের উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগের ছাত্রশাখাও হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র ‘প্রথম আলো’ জানাচ্ছে, চট্টগ্রামে নিহত হয়েছেন তিন জন। রাজধানী ঢাকায় দু’জন এবং রংপুরে এক জন। মঙ্গলবার বিকেলে চট্টগ্রামের মুরাদপুর এলাকায় সংরক্ষণবিরোধী ছাত্র-যুব মিছিলে গুলি চালানো হয় বলেও অভিযোগ। সেখানে নিহত হয়েছেন বিরোধী দল বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের চট্টগ্রাম শাখার সম্পাদক মহম্মদ ওয়াসিম।
অন্য দিকে, রাজধানীর ঢাকা কলেজ এবং সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুবলিগ ও ছাত্রলিগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে দুই আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন। এলাকার ভারপ্রাপ্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি। প্রসঙ্গত, ২০১৮-তেও সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশ উত্তাল হয়েছিল। বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মোট ৫৬ শতাংশ সংরক্ষিত এবং ৪৪ শতাংশ সাধারণের জন্য নির্ধারিত ছিল। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮-য় কোটা-বিরোধী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ায় প্রধানমন্ত্রী হাসিনা নির্দেশ জারি করে মুক্তিযোদ্ধার স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং জেলা খাতে ১০ শতাংশ সংরক্ষণ বাতিল করে দেন। রাখা হয় শুধু জনজাতিদের ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের ১ শতাংশ সংরক্ষণ। তখনকার মতো আন্দোলনে ইতি টানেন ছাত্ররা।
কিন্তু সাত জন মুক্তিযোদ্ধার স্বজন ২০১৮-র সংরক্ষণ বাতিলের নির্দেশনামার বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাই কোর্টে যান। গত ৫ জুন হাই কোর্ট রায় দেয়, হাসিনা সরকারের নির্দেশ অবৈধ। নির্দেশনামা বাতিলের অর্থ ফের আগের মতো সংরক্ষণ ফিরে আসা। তার প্রতিবাদেই ফের আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা। তাঁরা দাবি করেন, স্থায়ী ভাবে সরকারি নিয়োগ থেকে সব ধরনের কোটা ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
ইতিমধ্যে হাসিনা সরকার হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আবেদন করেছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ গত ১০ জুলাই গোটা বিষয়টির উপরে এক মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে বলেছে, হাই কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার পরে তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে শীর্ষ আদালত। পরবর্তী শুনানি হবে ৭ অগস্ট। হাই কোর্টের রায়-সহ গোটা বিষয়টিতে শীর্ষ আদালত স্থগিতাদেশ দেওয়ায় অর্থ, ২০১৮-এ সরকারের নির্দেশ বহাল রইল। অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজন-সহ তিন ধরনের সংরক্ষণ সরকারি চাকরিতে রাইল না। কিন্তু সংরক্ষণ-বিরোধী আন্দোলনের মঞ্চ ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এখন জনজাতিদের সংরক্ষণ বাতিলের দাবি তুলে নতুন করে আন্দোলন চালাচ্ছে।
ছাত্র আন্দোলনের গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত এই আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনের পরিণত না হয়ে যায়। এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশের যত ছাত্র আন্দোলন হয়েছে সব আন্দোলনের শেষ পরিণতি হয়েছে সরকার পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। হাসিনা সরকার যেভাবে ছাত্র আন্দোলনে উপর দমন পীড়ন চালাচ্ছে তাতে আর যাই হোক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আন্দোলন করার অধিকার সবার আছে একই সঙ্গে এটাও ঠিক সেই আন্দোলন যেন গান্ধীবাদী আন্দোলন হয় কোথাও যেন অশান্তি না হয়। কিন্তু বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে অশান্তি সারা দেশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে হাসিনা সরকারকে এগিয়ে এসে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। পৃথিবীর এমন কোন সমস্যা নেই যা আলোচনার মধ্য দিয়ে সমাধান হতে পারে না কিন্তু যদি আগ্রাসী ইসরাইলের মত বাংলাদেশের সরকারও মানসিকতা তৈরি করে তাহলে সমস্যার সমাধান হবে না।
হাসিনা সরকারকে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধ আন্দোলন 50 বছর অতিক্রম করে গেছে স্বাভাবিকভাবে দুটি নতুন প্রজন্মের জন্ম হয়েছে এ দুটি নতুন প্রজন্মের কাছে যদি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা কোটা করে দেওয়া হয় সেটা কি মেনে নেবেন নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েরা। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের দাম ,মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান নিঃসন্দেহে অস্বীকার করতে পারে না বাংলাদেশের সাধারণ নাগরিকরা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে বছরের পর বছর তার পরিবার তার নাতি নাতিপোতা উত্তরাধিকারীরা, সংরক্ষণ পেয়ে যাবে এটা জানিনা বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃতি দেয় কিনা। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। সুতরাং আদালত যা বলবে সেটাই আমাদেরকে মান্যতা দিতে হবে। এটা যেমন ঠিক একই সঙ্গে এটাও ঠিক দেশের আইন সভা আইন তৈরি করতেই পারে। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশের বর্তমান সমস্যার দিকে তাকিয়ে সমাধান বের করাটা হাসিনা সরকারের কাছে বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে আমাদের মনে হয়েছে।