নীতিশ- নাইডু – পাওয়ার- শিন্ডের চাপে দিশেহারা মোদি! মহারাষ্ট্রে সরকার হারাতে চলেছে বিজেপি?
বাংলার জনরব ডেস্ক : মন্ত্রিসভা গঠনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নরেন্দ্র মোদী এবং বিজেপিকে চিন্তায় ফেলেছে চন্দ্রবাবু নাইডু এবং একনাথ শিন্ডে। মহারাষ্ট্রের দুই বন্ধু রাজনৈতিক দল অজিত পাওয়ার এবং একনাথ শিন্ডে প্রচন্ড চাপে রেখেছেন নরেন্দ্র মোদিকে। চন্দ্রবাবু নাইডু এখনো পর্যন্ত স্পিকার পদ নিয়ে অনড় রয়েছেন। তবে পাল্টা চাল হিসাবে বিজেপি চন্দ্রবাবু নাইডুর শালিকাকে বিজেপির পক্ষ থেকে স্পিকার পদ দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে চন্দ্রবাবু নাইডুর শালিকা ডি পুরন্দেশ্বরী অন্ধপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত বিজেপির সাংসদ। তাই চন্দ্রবাবু নাইডু এতে আপত্তি রয়েছে। একই সঙ্গে কংগ্রেস দল পাল্টা হিসাবে চন্দ্রবাবু নাইডু কে জানিয়েছে তিনি যদি স্পিকার পদে লোকসভায় প্রার্থী দেন তাহলে তাকে কংগ্রেস সব রকম ভাবে সমর্থন করবে।
রবিবার চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির দুই সাংসদ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। রামমোহন নায়ডু পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানি শপথ নেন প্রতিমন্ত্রী হিসেবে। তেলুগু দেশমের দাবি ছিল পরিকাঠামো সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। সেই দাবি মেনে আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় তেলুগু দেশমকে বিমান মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। চন্দ্রশেখর পেম্মাসানিকে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক ও যোগাযোগ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে।
সূত্রের খবর, এর পরেও চন্দ্রবাবু লোকসভার স্পিকারের পদের দাবিতে অনড়। তার সঙ্গে এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করেছেন চন্দ্রবাবু। তাঁর যুক্তি, অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের সময়েও তেলুগু দেশমের জি এম সি বালাযোগীকে লোকসভার স্পিকারের পদ ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। অতীতের মতো এনডিএ-র আহ্বায়কের পদও দাবি করছেন চন্দ্রবাবু। বুধবার চন্দ্রবাবু অন্ধ্রপ্রদেশের নতুন মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন। অন্যদিকে চন্দ্রবাবুর নাইডুকে স্পিকার পদ যদি একান্তই না দিতে রাজি হন নরেন্দ্র মোদি তাহলে স্পিকার পদের দাবিতে অনড় অবস্থান নেবেন নীতীশ কুমার। কারণ নীতীশ কুমারকে সেভাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। লালু প্রসাদ যাদব এবং নীতীশ কুমারের পর বিহারের রাজনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ লালন সিংকে এবার মৎস্য মন্ত্রী করা হয়েছে। আর এতেই নীতিশ কুমার আরো চটে গেছেন তিনি রেল মন্ত্রক পেয়েছিলেন বলে সূত্রের খবর। অটল বিহারী বাজপেয়ির মন্ত্রিসভায় নীতিশ কুমার নিজেই রেলমন্ত্রী ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে এবারও তিনি রেলমন্ত্রী পদটি চেয়েছিলেন। অন্যদিকে নীতিশ কুমার অবিলম্বে বিহার বিধানসভা ভেঙে দিয়ে নতুন করে নির্বাচন করাতে চাইছিলেন। কিন্তু তাতেও যে নরেন্দ্র মোদি সরকার রাজি নয় তার বার্তা পাওয়া গেল গতকাল।
কেন চন্দ্রবাবু ও নীতীশ, দু’জনেই লোকসভার স্পিকারের পদ চাইছেন? লোকসভায় তেলুগু দেশমের ১৬ জন ও জেডিইউ-এর ১২ জন সাংসদ রয়েছেন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য মোদী সরকারের দুই দলেরই সমর্থন প্রয়োজন। নীতীশ-নাইডুর আশঙ্কা, ভবিষ্যতে এনডিএ থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের আঁচ পেলে বিজেপি তাঁদের দল ভেঙে দিতে পারে। দলছুট সাংসদেরা বিজেপিতে যোগ দিলে দলত্যাগ বিরোধী আইন অনুযায়ী তাঁদের সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়ার ক্ষমতা স্পিকারের হাতেই থাকে। এনডিএ থেকে সরে গেলেও স্পিকারকে পদ থেকে সরাতে লোকসভার ৫০ শতাংশ সদস্যের সমর্থনে প্রস্তাব আনতে হয়।
এরই মধ্যে বিজেপির চিন্তা বাড়িয়ে আর এক শরিক একনাথ শিন্ডের শিবসেনা জানিয়ে দিয়েছে, তাদেরও একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ দিতে হবে। শুধুমাত্র একটি প্রতিমন্ত্রীর পদে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ভেঙে বেরিয়ে আসা শিন্ডের সেনারা খুশি নন। শিন্ডের দল লোকসভায় সাতটি আসনে জিতে এলেও তাঁদের দলের শুধুমাত্র এক জন সাংসদ, গণপতরাও প্রতাপরাও যাদবকে আয়ুষ মন্ত্রকের স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। আজ দলের সাংসদ শ্রীরঙ্গ বার্নে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের পূর্ণমন্ত্রীর পদ চাই। শ্রীরঙ্গের বক্তব্য, ‘‘সাত জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও আমাদের একটি মাত্র প্রতিমন্ত্রীর পদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইচ ডি কুমারস্বামীর জেডিএস-এর দু’জন সাংসদ থাকলেও তারা একটি পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছে। বিহারের জিতনরাম মাঝি তাঁর দলের একাই সাংসদ। তিনিও পূর্ণমন্ত্রীর পদ পেয়েছেন।’’
মনে করা হচ্ছে মহারাষ্ট্রে যদি অবিলম্বে বিজেপি তার শরিক দলের নেতাদের বিক্ষোভকে প্রশমিত করতে না পারে তাহলে কিন্তু বড় ধাক্কা খেতে পারে। এমনও হতে পারে মহারাষ্ট্র সরকার ও হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। কারণ এই মুহূর্তে সমস্ত মহারাষ্ট্র জুড়ে বিজেপির কোন হাওয়া নেই। একইসঙ্গে এই দুই শরিক দলের নেতারাও বা বিধায়করা বা সাংসদরা নিজেদের আসন বাঁচাতে কেউ উদ্ধব ঠাকরে কেউ বা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। যে কোনদিন সকালে উঠে যদি আপনারা শুনেন মহারাষ্ট্রের সরকার বদল হয়ে গেছে তাতে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না।