জেলা 

বহরমপুরে অধীরের হারের নেপথ্য কাহিনী !

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের পাঁচবারের সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী এবারের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন। প্রাক্তন ক্রিকেটার ও গুজরাট নিবাসী ইউসুফ পাঠান অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এক কথায় বলা যেতে পারে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চাঞ্চল্যকর খবর হল বহরমপুরে অধীরের হার। আর এই হার নিয়ে স্বয়ং অধীর চৌধুরী যে ধরনের মন্তব্য করেছেন তা যে একজন পরিণত রাজনীতিবিদ করতে পারেন তা আমরা ভেবে শিউরে উঠেছি। তিনি নানা ভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যেই হারের নেপথ্যে মুসলিমরা তাকে ভোট দেয়নি। তিনি বলেই দিয়েছেন আমি মুসলমান হতে পারিনি আমি ভালো হিন্দু হতে পারিনি। আমি স্যান্ডউইচ হয়েছি তাই আমি হেরে গেছি। কিন্তু আসল রহস্য কি ?

বহরমপুর লোকসভা নির্বাচনের পরিসংখ্যান বলছে গতবারের তুলনায় তৃণমূল কংগ্রেস এবার এক শতাংশ ভোট কম পেয়েছে। অর্থাৎ 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৯ শতাংশ ভোট পেয়েছিল এবার পেয়েছে ৩৮ শতাংশ।  ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর থেকে অধীর রঞ্জন চৌধুরী কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে ভোট পেয়েছিলেন ৪৫.৪৭ শতাংশ। আর ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে অধীর রঞ্জন চৌধুরী ভোট পেয়েছেন ৩১.৭৩ শতাংশ। প্রায় তের শতাংশ ভোট কম পেয়েছেন। তৃণমূলের ভোট বাড়েন ি বরং কমেছে। আর বিজেপির ভোট একটু তলিয়ে দেখুন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে। 2019 এর লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছিলেন ১১ শতাংশ, এবারের নির্বাচনের বিজেপি প্রার্থী ভোট পেয়েছেন 26.86 শতাংশ। শতাংশের বিচারে ১৫ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি প্রার্থী। অর্থাৎ অধীর রঞ্জন চৌধুরী গতবার যে ভোটটা পেয়েছিলেন তার ১৩% ভোট চলে গেছে বিজেপিতে, আর তৃণমূল কংগ্রেসের 1% ভোট চলে গেছে বিজেপিতে। আর যেহেতু ভোট শতাংশ এবারে বেশি পড়েছে সেই দিক থেকে বলা যেতেই পারে যে কিছুটা ভোট বেশি পেয়েছে বিজেপি।

Advertisement

অর্থাৎ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর হেরে যাওয়ার জন্য কোনোভাবে মুসলমানরা দায়ী নন যারা বলছেন তারা মিথ্যাচার করছেন বাঙালি মুসলমানদেরকে সাম্প্রদায়িক বলে দেগে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এই তথ্য থেকে এটা পরিষ্কার হচ্ছে আরএসএস তার নিজস্ব প্রার্থীকে জেতানোর জন্য হিন্দু ভোটকে মেরুকরণ করেছিল যার ফলে অধীর রঞ্জন চৌধুরী হেরে গেছেন। তাই অধীর রঞ্জন চৌধুরী যখনই বক্তব্য রাখবেন তখন সচেতন ভাবে রাখুন সংখ্যালঘুদের ভাববেগে আঘাত দেবেন না। কারণ আপনাকে মনে রাখতে হবে পশ্চিমবাংলার কংগ্রেসকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হলে এই রাজ্যের সংখ্যালঘুদের প্রয়োজন আছে। অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে মনে রাখতে হবে নিজের হারের জন্য মমতার দিকে আঙুল তোলার প্রয়োজন নেই একটা সময় যারা আপনাকে ভোট দিয়ে জেতাতেন সেই তেরো শতাংশ ভোট আপনার কমিটেড ভোট চলে গেছে বিজেপিতে। অর্থাৎ আপনি যেভাবে মুসলমান সমাজ সম্পর্কে কটাক্ষ করেছেন আমি মুসলমান হতে পারিনি বলেছেন সেটা ঠিক বলেন নি। এটা আপনার আদর্শ হওয়া উচিত নয়।

আপনার স্বজাতিরা আপনাকে পরাস্ত করেছে। মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলিম ভোট কোথাও আপনার বিপক্ষে যায়নি আপনার বিপক্ষে যতটুকু গেছে বহরমপুরের হিন্দু ভোট।। এই হিন্দু ভোট যদি মেরুকরণ না হতো তাহলে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর জয় কে কেউ আটকাতে পারত না। সুতরাং আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে সংখ্যালঘু সমাজ আপনাকে দুহাত ভরে ভোট দিয়েছে। আপনার যারা কাছের মানুষ তারাই আপনাকে ভোট দেয়নি। আপনি যাদের জন্য এতদিন ধরে করেছেন তারা আপনাকে ভোট দেয়নি।

সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ রাজনীতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। আসলে অধীর রঞ্জন চৌধুরী হয়তো বুঝে উঠতেই পারেননি যে বিজেপি গোপনে এলাকা জুড়ে প্রচার করেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচার করেছে যে বহরমপুর লোকসভার কেন্দ্রটি এবার বিজেপির দখলে যাবে। বিজেপির এই প্রচার অভিযানের ফলে সম্মিলিতভাবে হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ অধিকাংশ ভোটার বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। ফলে স্বাভাবিক নিয়মে ই বিজেপির ভোট ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ২৭ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এইযে প্রায় ১৬ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি এই ভোটটা পুরোটাই অধীরের কমিটেড ভোট। ফলে অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে হেরে যেতে হয়েছে। এর নেপথ্যে যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোন অবদান নেই যেমন মুসলমান সম্প্রদায়ের কোন অবদান নেই বরং বলতে পারা যায় এখানকার আরএসএস খুব সূক্ষ্ম কায়দায় হিন্দু ভোটকে মেরুকরণের মধ্য দিয়ে অধীরকে পরাস্ত করেছে।

একইভাবে আমরা দেখব মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের হিন্দু ভোটের দুর্দান্ত মেরুকরণ মোঃ সেলিমকে হেরে যেতে বাধ্য করেছে। হিন্দু ভোটের কিছু অংশ যদি সিপিএম কংগ্রেসের দিকে আসতো তাহলে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে মোঃ সেলিমের জেতার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ