অন্যান্য 

OBC Certificate: ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় বৈষম্যমূলক : তায়েদুল ইসলাম

শেয়ার করুন

তাযেদুল ইসলাম : গত ২২ মে কলকাতা উচ্চ আদালত ওবিসি সার্টিফিকেট নিয়ে যে রায় দিয়েছে তার মূল কথা হলো ( ক) ২০১০ সালের পর যে পদ্ধতিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে ওবিসি হিসেবে ঘোষণা বা চিহ্নিত করা হয়েছে তা অসাংবিধানিক।

প্রশ্ন হল, ১) ২০১২ সালে তৈরি করা আইন অনুযায়ী ঐ গোষ্ঠীগুলোকে ওবিসি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আদালত কি ২০১২ সালে তৈরি করা আইনটিকে অসাংবিধানিক বলে বাতিল করেছে? তা করে না থাকলে আইনটি বহাল থাকছে এবং ঐ আইন অনুযায়ী ঘোষণা করা গোষ্ঠীদের প্রদেয় সার্টিফিকেট বাতিল করছে। এটা কেমন রায়?

Advertisement

খ) একই বিষয়ে যদি দুটি আইন দুটি ভিন্ন সময়ে তৈরি হয় এবং দুটি আইনের মধ্যে বিরোধীতা দেখা যায় তা হলে সাধারণ জ্ঞান বলে শেষে তৈরি হওয়া আইনটি মান্যতা পাবে। ওবিসি নিয়ে ১৯৯৩ সালে এবং ২০১২ সালে দুটো আইন তৈরি হয়। আদালত ১৯৯৩ সালের আইনটিকে মান্যতা দিয়েছেন। ২০১২ সালের আইনটিকে বিবেচনায় আনেননি। এটা আদালতের আইনের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নয়কি?

গ) ২০১২ সালের পর চিহ্নিত ওবিসি গোষ্ঠীগুলিকে প্রদেয় সার্টিফিকেট বাতিল হলে সমস্ত সার্টিফিকেটই বাতিল হবে। রায়ে যারা কোন না কোন ভাবে সার্টিফিকেট দ্বারা উপকৃত হয়েছেন তাদের সার্টিফিকেট বাতিল হচ্ছে না। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যারা কোন ভাবেই উপকৃত হননি তাদের সার্টিফিকেট বাতিল করা হচ্ছে। এটাও কি বৈষম্য নয়?

২) কোন জনগোষ্ঠী বা সম্প্রদায় সম্পর্কে সরকার কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে চাইলে সরকারের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকারের কাছে তথ্য জানার অনেক উৎস থাকে। বিশেষ কমিশন তার একটি। কোন জনগোষ্ঠী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ও উপযুক্ত তথ্য না পেলে কমিশনের কাছে যেতে হবে। অনেক সময় কোন জনগোষ্ঠী নিজে থেকেই ওবিসি হওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করে। তখন সরকারের কাছে উপযুক্ত তথ্য না থাকলে যাচাই করার জন্য কমিশনকে দায়িত্ব দেয়। কমিশনের সুপারিশ চাওয়া সরকারের কাছে বাধ্যতামূলক হওয়া সামাজিক ন্যায় এর পরিপন্থী। সেই দিক থেকে দেখলে ১৯৯৩ সালের আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। আদালত ঐ আইনটিকেই গুরুত্ব দিয়েছে।

৩) যতক্ষণ পর্যন্ত শীর্ষ আদালত রায় না দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রদেয় সমস্ত সার্টিফিকেট‌‌‌ বৈধ হওয়া ন্যায়ের দাবি। শীর্ষ আদালতের রায় এর পর সার্টিফিকেট দেওয়া বন্ধ হবে এবং নতুন আইন তৈরি হবে। সেই আইন অনুযায়ী সার্টিফিকেট দেওয়া শুরু হবে। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হওয়া উচিত। আদালত ন্যায়ের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করেছে।

বিচার প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের গাফলতি ধরা পড়েছে। রাজ্য সরকারের কাছে সাচার কমিটির রিপোর্ট, রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশনের রিপোর্ট সহ আরও রিপোর্ট আছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা সে সব তথ্য তুলে ধরেননি। ২০১২ সালের পর যে সমস্ত জনগোষ্ঠীকে ওবিসি ঘোষণা করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ মুসলিম সম্প্রদায় ভুক্ত। ওবিসি চিহ্নিত করণ আদালতের বিবেচ্য বিষয় হলেও চিহ্নিত ওবিসিদের ধর্মীয় পরিচয় মুসলিম। সেই জন্য রাজ্য সরকারের আইনজীবীদের মধ্যে মুসলিম আইনজীবী থাকা দরকার ছিল। যথাযথ ভাবে আদালতে লড়াই না করার পিছনেও রাজ্য সরকারের চালাকি থাকতে পারে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ