জেলা 

Krishnanager To Assansol: ক্ষমতা হারানোর পনেরো বছর পর শাসক দল তৃণমূলের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করছে সিপিএম!

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : ২০০৯ এর পর থেকে এ দৃশ্য দেখা যেত না। তৃণমূল কংগ্রেস এপর্যন্ত একতরফা ভোট করাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এমনকি ২০০৯ এর আগে যিনি সিপিএমের এজেন্ট হয়ে বুথে বসেছেন তিনিই আবার ২০১১ এর পরে হয় তৃণমূলের এজেন্ট হয়েছেন না হলে বিজেপির এজেন্ট হয়েছেন। কিন্তু কোথায় যেন ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন এক অন্য মাত্রা দিচ্ছে বাংলার রাজনীতিতে! খুব স্পষ্ট করে বললে বলা যেতেই পারে এক নতুন বার্তা দিচ্ছে এবারের লোকসভা নির্বাচন।

গত তিন দফার নির্বাচনে দশটি লোকসভা কেন্দ্রে যে ভোট হয়ে গেল সেখানে মূলত লড়াই আমরা দেখেছিলাম ত্রিমুখী। সিপিএম অর্থাৎ বাম কংগ্রেস জোট, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে। প্রথম দফার নির্বাচনে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা গেছে জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারে। দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা গেছে রায়গঞ্জ ও বালুরঘাটে। তৃতীয় দফার নির্বাচনে মালদা উত্তর মালদা দক্ষিণ জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তিনটি দলের মধ্যে। এ পর্যন্ত সবই ঠিক থাকছিল অর্থাৎ এই অঞ্চল গুলোতে বিজেপি বাম কংগ্রেস এবং শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস সক্রিয় ছিল।।

Advertisement

কিন্তু সোমবার যেসব আসনে ভোট হল সেখানে সেভাবে বামেরা বিশেষ করে সিপিএম সক্রিয় ছিল না বিগত ১৫ বছর ধরে। সোমবারের ভোটে দেখা গেল বাম কর্মীরা তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াই করতে। এমনকি কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের কয়েকটি বুথে এজেন্ট বসতে বাধা দিচ্ছিল শাসক দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেস সেক্ষেত্রে বামেরা রীতিমত যুদ্ধং দেহি মনোভাব থেকে ভোটে এজেন্ট দিয়েছে। কোনভাবেই পিছিয়ে আসেনি সিপিএম দল। কারণ কৃষ্ণনগরে সেভাবে কংগ্রেসের সংগঠন নেই যেটুকু আছে সবটাই সিপিএমের সংগঠন। সুতরাং সিপিএম এককভাবে লড়াই করে কর্মীদের মাথা ফাটিয়ে রক্ত ঝরিয়েও বুথ থেকে সরে যায়নি। এটা আগামী দিনের রাজনীতিতে একটা বড় ভূমিকা রাখবে বলে বাংলার রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

সোমবার সকালে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার কিছু পরেই তেহট্টের থানারপাড়া থানা এলাকায় একটি বুথে সিপিএমের পোলিং এজেন্টকে বসতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে খবর, দু’পক্ষের মধ্যে প্রথমে বচসা এবং পরে হাতাহাতিও হয়। সেই ঘটনায় এক বাম কর্মীর মাথা ফাটে বলে অভিযোগ। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে থানারপাড়া থানার পুলিশ। নাকাশিপাড়ার আড়ারবেঘিয়া গ্রামের একটি বুথে একই ঘটনা ঘটেছে। সেখানে এক সিপিএম কর্মীকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। চাপড়াতে সিপিএমের এক এজেন্টকে মারধর করে বুথ থেকে বার করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসকদল।

চাপরা বিধানসভার সোনপুকুর দাস পাড়ায় ৯ এবং ১০ নম্বর বুথে সিপিএমের ভোটারদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তেহট্ট বিধানসভার নারায়ণপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭ এবং ১৯ নম্বর বুথেও গন্ডগোল হয়েছে। সেখানে সিপিএম এজেন্টকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার অভিযোগ শাসকদলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, সিপিএম পরিচালিত পালিতবেঘিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত কালীগঞ্জ থানা এলাকাতেও সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রধানের আত্মীয়ের মাথা ফাটিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের লোকেরা। আক্রান্ত ব্যক্তির নাম হাসমুত শেখ। অভিযোগ, সিপিএমের ক্যাম্পে বসতে দিচ্ছে না শাসকদলের নেতা-কর্মীরা।

কৃষ্ণনগরের সিপিএম প্রার্থী এসএম সাদির অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে সকাল থেকেই। বাম কর্মীরা বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ গড়ে তুলছে। সন্ত্রাস রুখে দেবে তারা। সাধারণ মানুষ ভোট দেবেন। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশকে জানিয়েও ব্যবস্থা হয়নি।’’ বিজেপি প্রার্থী অমৃত রায় বলেন, ‘‘তৃণমূল ভোটারদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টা জানিয়েছি।’’

অন্য দিকে, কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান বলেন, ‘‘শান্তিপূর্ণ ভোটে বাম এবং বিজেপি ইচ্ছাকৃত অশান্তি করতে চাইছে। তৃণমূল কর্মীরা যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দিচ্ছে।’’

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ