দেশ 

হিন্দু মুসলিম করেও বিজেপি প্রভাবিত লোকসভার আসন গুলিতে তৃতীয় দফাতেও ভোট পড়ল কম চিন্তায় গেরুয়া শিবির

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচন কমিশন এখনো পর্যন্ত সরকারিভাবে গতকাল মঙ্গলবার ৭ই মে দেশজুড়ে অনুষ্ঠিত তৃতীয় দফার লোকসভা নির্বাচনের ভোট পড়ার শতাংশের হার জানায়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও যেটুকু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে ভোর শতাংশের হার তা অনেকটাই উদ্বেগ জনক।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞের কাছে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে কি মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ কম দেখাচ্ছে? কেন আগ্রহ কম দেখাচ্ছে? তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন বিভিন্ন দলের এবং বিভিন্ন সরকারের দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন সরকার কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলির নীতি ফলে যেভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপরে একটা বিশাল প্রভাব পড়ছে তারই প্রভাব দেখা দিয়েছে ভোট দানে।

Advertisement

কিন্তু এই কম ভোট পড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেতে চলেছে বিজেপি বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। গতকাল উত্তরপ্রদেশের মোট দশটি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। লোকসভা কেন্দ্রের অধিকাংশই হচ্ছে যাদব ভুমি অর্থাৎ মুলায়ম সিং বা অখিলেশ যাদবের গড় বলা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এইসব কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির আধিপত্য থাকবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু যেভাবে বিজেপির সমর্থকরা ভোট দান করলো না তাতে গেরুয়া শিবির উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। প্রথম দফা এবং দ্বিতীয় দফায় উত্তরপ্রদেশে কম ভোট পড়েছিল তার তুলনায় এবারে খানিকটা বেশি ভোট করলেও সেটা হচ্ছে সংখ্যালঘু মুসলমানদের ভোট এবং যাদবদের ভোট। কিন্তু বিজেপির সমর্থকদের ভোট সেভাবে পড়েনি বলেই বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হচ্ছে। প্রথম দফা এবং দ্বিতীয় দফায় যে প্রবণতা ছিল সেই প্রবণতা তৃতীয় দফা তেও অব্যাহত রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। এটা ঠিকই প্রথম দফা ও দ্বিতীয় দফায় বিজেপি সমর্থকরা বুথ মুখি না হওয়ার কারণে নরেন্দ্র মোদি, ভোকাল টনিক হিসাবে ব্যবহার করেছিলেন হিন্দু মুসলিম মেরুকরণের তাস। তা সত্ত্বেও ভোটারদেরকে বুথ মুখী করতে পারল না বিজেপি। এটা তাদের ব্যর্থতা বলেই রাজনৈতিক মহল মনে করছে।

এমনকি ভোট চলাকালীন সময় গতকালও নরেন্দ্র মোদী এক নির্বাচনী সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে বাবরি মসজিদের তালায় এনে রাম মন্দিরের ঝুলিয়ে দেবে। এইসব সাম্প্রদায়িক তাস খেলা সত্বেও নরেন্দ্র মোদির প্রতি সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে দেখা গেল না। গুজরাটেও একই চিত্র ভোটের হার এতটাই কম পড়েছে সেটা নরেন্দ্র মোদির পক্ষেও লজ্জার বিষয়। কারণ নিজের রাজ্যের ভোটাররাই যদি প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন দিতে বুথে আসতে না চান তাহলে আর তিনি কোথায় সমর্থন পাবেন?

প্রথম দু’টি দফায় প্রাথমিক ভাবে ৬০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পড়েছিল। যদিও তা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ শতাংশে। তুলনায় আজ রাত ১১টা ৪০ পর্যন্ত গোটা দেশের ৯৩টি লোকসভা কেন্দ্রে গড়ে ৬৪.৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। চূড়ান্ত পরিসংখ্যানে তা প্রথম দু’টি পর্বকে ছাপিয়ে যাবে বলেই মনে করছে নির্বাচন কমিশন। আজ যে ৯৩টি কেন্দ্রে নির্বাচন হয়, তার মধ্যে পাঁচ বছর আগের লোকসভায় বিজেপি জিতেছিল ৭১টি আসনে। এই তালিকায় গুজরাতের ২৬টি আসনও রয়েছে, যার সব ক’টিই গত বার জিতেছিল বিজেপি। ওই ফল ধরে রাখাই এখন বিজেপির কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

দিনের শেষে গুজরাতে ভোট পড়েছে ৫৮.৯৮ শতাংশ। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, গুজরাতে বড় মাপের রদবদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং ভোট কম পড়লেও উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। বরং উত্তরপ্রদেশের পরিসংখ্যান প্রথম দু’টি পর্বের মতোই বিজেপিকে অস্বস্তিতে রেখেছে। তৃতীয় পর্বে উত্তরপ্রদেশের যে দশটি আসনে ভোট ছিল, সেই এলাকাগুলি মূলত যাদব-ভূমি বলেই পরিচিত। আজ দশটির মধ্যে তিনটি কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে বিজেপিকে টক্কর দিতে মাঠে ছিলেন মুলায়ম সিংহ যাদবের পরিবারের তিন সদস্য। দিনের শেষে উত্তরপ্রদেশে ভোট পড়েছে ৫৭.৩৪ শতাংশ। ফলে এ যাত্রাতেও বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের বড় অংশ বুথমুখী হননি বলে প্রাথমিক বিশ্লেষণের পরে মনে করছেন দলীয় নেতৃত্ব।

একই অবস্থা বিহারে। নীতীশ কুমারের রাজ্যে ৫৮.১৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে মধ্যপ্রদেশে ভোটদানের হার এ যাত্রায় ৬৬.০৫ শতাংশ হওয়ায় সেখানে কিছুটা হলেও স্বস্তির হাওয়া বিজেপি কর্মীদের মধ্যে। দলীয় নেতৃত্বের দাবি, এই দফায় ওই রাজ্যের ৯টি আসনের মধ্যে সবক’টি আসনেই তাঁরা জিততে চলেছেন।

ভোটারদের এই অদ্ভুত আচরণে গভীর উদ্বেগের মধ্যে পড়েছে বিজেপি। তারা ভেবে উঠতে পারছে না কিভাবে মানুষকে বুথ মুখি করা যাবে। মুসলিমদেরকে তীব্র আক্রমণ করা সত্ত্বেও তৃতীয় দফার নির্বাচনে যেভাবে বিজেপির কমিটেড ভোটাররা বুথে ভোট দিতে এলো না তাতে এই প্রশ্নটা দৃঢ় হয়েছে তাহলে কি মেরুকরণ ও কাজ করছে না। সুতরাং সংকট নরেন্দ্র মোদির কাছে বেড়েই চলেছে। তবে কতটা সংকট হয়েছে সেটা জানা যাবে চৌঠা জুন। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই নরেন্দ্র মোদী যদি একক উদ্যোগে ২৭২ টি আসন পায় তাহলে সে সরকার গড়তে পারবে না। এনডিএ জোটকে নিয়ে যদি ২৭২ পায় তাতেও সরকার করতে পারবে না। কারণ বিজেপির আসন সংখ্যা অদ্ভুতভাবে কমে গেলেই শরিক দলেরাও তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবে। সুতরাং নরেন্দ্র মোদির কাছে এখন বড় বিপদ এটাই ৪০০ পার নয় শুধুমাত্র যদি ২৭২ এর গণ্ডি পেরোতে পারে তবেই তিনি নিরাপদে আগামী পাঁচ বছর প্রধানমন্ত্রী থেকে যাবেন নচেৎ প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ