কলকাতা 

কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট! প্রধান বিচারপতির একাধিক প্রশ্নের সদর্থক উত্তর দিতে পারলেন না রাজ্যের আইনজীবী! সন্তোষজনক তথ্য না পেলে কোন সিদ্ধান্ত নয় জানাল শীর্ষ আদালত

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : কলকাতা হাইকোর্ট এসএসসির ২০১৬ এর সম্পূর্ণ প্যানেল বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই নির্দেশের উপর আজ সোমবার ২৯ শে এপ্রিল কোন স্থগিতাদেশ দিল না সুপ্রিম কোর্ট। উল্লেখ্য কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গত সপ্তাহে ২০১৬ এর প্যানেল থেকে নিয়োগকৃত ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মীর চাকরি বাতিল করে দেয়। এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রাজ্য সরকার স্কুল সার্ভিস কমিশন এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল আগামী শুক্রবার তেসরা মে কিন্তু রাজ্যের আইনজীবির বিশেষ অনুরোধে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলা আজ সোমবার শুনানি করতে রাজি হন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।

শুনানির শুরুতেই প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারের আইনজীবী এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবির কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা চান। একইসঙ্গে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন প্রধান বিচারপতি সরকারের আইনজীবীদের কাছে করেন। একাধিক প্রশ্নের মুখে কার্যত অসহায় বোধ করে সরকারের আইনজীবী। সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে শীর্ষ আদালতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী বলেন তারা নাকি যোগ্য এবং অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করে ফেলতে পারবেন। এই কথা শুনে প্রধান বিচারপতি জানতে চান OMR শিট তো ধ্বংস করা হয়েছে। যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবেন কী করে? একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতি পরের প্রশ্ন ছিল যোগ্য ও অযোগ্য যদি আপনারা আলাদা করতে পারতেন তাহলে হাইকোর্টে করলেন না কেন? তিনি আরো বলেন যে আমরা যতক্ষণ না এ বিষয়ে সন্তোষজনক উত্তর পাচ্ছি ততক্ষণ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানাবো না! কলকাতা হাইকোর্টের চাকরি বাতিলের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন প্রধান বিচারপতি স্বয়ং। আগামী সোমবার পরবর্তী শুনানি হবে। যদি যোগ্য অযোগ্য প্রার্থীদের বাছার ব্যাপারে স্পষ্ট কোন দিশা দেখাতে রাজ্যের আইনজীবী পারেন তাহলে হয়তো বিষয়টিকে অন্যভাবে ভাবতে পারেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। আজকের শুনানির পর চাকরি হারাদের ভবিষ্যৎ ঝুলে রইল। কবে এই সমস্যার সমাধান হবে তা স্পষ্ট হলো না। তবে সুপার নিউমেরিক পোস্ট নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সেই সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হয়েছিল এবং এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে কারা ছিলেন এ বিষয়ে কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে যে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে তারপরে স্থগিতাদেশ ছিল দেশের শীর্ষ আদালত। এর ফলে আপাতত রাজ্য মন্ত্রিসভার অনেক সদস্য জেল যাত্রা থেকে রক্ষা পেল এছাড়া চাকরি হারাদের কোন সমস্যার সমাধান হল না।

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন ২৫ হাজার ৭৫৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) মামলা দায়ের করেছে রাজ্য সরকার, স্কুল সার্ভিস কমিশন ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি ছিল। সেখানেই রাজ্যের কাছে শীর্ষ আদালতের প্রশ্ন, “চাকরির পরীক্ষার ওএমআর শিট কতদিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়?” জবাবে রাজ্যের তরফে মুকুল রোহতাগি জানান, ১ থেকে ২ বছর সংরক্ষণ করা হয়। এর পরই প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, “ওএমআর শিট তো ধ্বংস করে দিয়েছেন তাহলে কীভাবে যোগ্য-অযোগ্যদের পৃথক করবেন?” জবাবে রাজ্য়ের আইনজীবী জানান, “বিকল্প পথ রয়েছে।”

তবে সে জবাবে আদালত যে মোটেও সন্তুষ্ট হয়নি তা বিচারপতির মন্তব্যেই স্পষ্ট। মামলাকারীর কাছে আদালত জানতে চায়, ২৫ হাজার বিরাট অঙ্কের সংখ্যা। যোগ্য-অযোগ্য আলাদা করবেন কী করে? এ বিষয়ে আমাদের কাছে সমস্ত তথ্য স্পষ্ট হতে হবে। চাকরি বাতিল মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় নিয়ে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য, আদালতের অন্য উপায় না থাকলে এধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যদি যোগ্য-অযোগ্যদের আলাদা করার ব্যবস্থা থাকে তবে তা হাই কোর্টে জানানো হল না কেন?

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ