নির্বাচনী প্রচারে মিথ্যা এবং বিদ্বেষ মূলক ভাষণ : নরেন্দ্র মোদির প্রচার নিষিদ্ধ করার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ
বিশেষ প্রতিনিধি : রবিবার রাজস্থানে এক নির্বাচনী জনসভায় খুল্লামখুল্লা সাম্প্রদায়িক প্রচারে শান দিয়ে তীব্র বিতর্কে জড়ান নরেন্দ্র মোদি। যা নিয়ে গোটা দেশের রাজনীতি তোলপাড় চলছে। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার কলকাতায় নির্বাচন কমিশনের অফিসে গিয়ে ডেপুটেশন দিল ‘সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’। সেখানে মঞ্চের নেতারা অভিযোগ করেছেন, ১৯৫১ সালের আইন অনুযায়ী ১২৩(৩) ধারা সরাসরি লঙ্ঘন করেছেন বিজেপির তারকা প্রচারক নরেন্দ্র মোদি। এই ধারা মোতাবেক এ ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক প্রচারকে নির্বাচনী দুর্নীতি বলে অভিহিত করা হয়েছে।
মঞ্চের অন্যতম নেতা শাদাব মাসুম বলেন, নির্বাচনে শুধুমাত্র হিন্দু-মুসলিম বিভাজন ও মেরুকরণ তীব্র করে তাদের টার্গেট ভোটব্যাঙ্ক এককাট্টা করতে হীন প্রয়াস চালাচ্ছেন বিজেপির স্টার ক্যাম্পেইনার নরেন্দ্র মোদি। এটা সরাসরি নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন। তাই তাঁরা দাবি করেছেন, নরেন্দ্র মোদি যেন আগামী দিনে আর ভোট প্রচারে এ ধরনের জঘন্য বিদ্বেষ ও বিভাজনমূলক বক্তব্য না রাখতে পারেন, সেজন্য তাঁকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
উল্লেখ্য, রবিবার রাজস্থানে দলীয় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে কোনও রাখঢাক না রেখে সরাসরি মুসলিম সম্প্রদায়কে চরম অবমাননা করে বক্তব্য রাখেন মোদি। কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, মনমোহন সিংয়ের সরকার বলেছিল, দেশের সম্পদে মুসলিমদের অগ্রাধিকার। তাদেরকে তাদের ভাগিদারী বা হিসসা দেওয়া হবে। এই মর্মে মোদি আরও বলেন, কংগ্রেস চায় ঘুসপেটিয়াদেরকে এ দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিক বানাতে। যারা একের পর এক বাচ্চা পয়দা করে চলে, সেই মুসলিমদের কংগ্রেস অগ্রাধিকার দিতে চায়। তাই মা বোনেদেরকে সাবধান করে মোদি বলেন, আপনাদের মঙ্গলসূত্রও মুসলিমদের হাতে তুলে দেবে কংগ্রেস, এই হল তাদের নীতি। এভাবে সব ধরনের রাজনৈতিক সৌজন্য ও শিষ্টাচার বিসর্জন দিয়ে সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায়কে ঘুসপেটিয়া বা অনুপ্রবেশকারী, অধিক বাচ্চা পয়দাকারী ইত্যাদি বলে নেতিবাচক ও বিদ্বেষমূলক অভিধায় ভূষিত করেন।
এ প্রসঙ্গে মঞ্চের নেতা শাদাব মাসুম আরও বলেন, গতকাল সোমবার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৭ হাজারেরও বেশি গণতন্ত্রকামী মানুষ সই করে নির্বাচন কমিশনে মোদির বক্তব্যের বিরুদ্ধে স্মারকলিপি জমা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তা সত্ত্বেও দুদিন কেটে গেল। নির্বাচন কমিশন কোনও পদক্ষেপ করেনি। অন্য কোনও দলের কেউ এভাবে অভিযুক্ত হলে তো কমিশন অতিসক্রিয় ভূমিকা নেয়। স্বশাসিত নির্বাচন কমিশনের কেন এই দ্বিচারিতা – সে প্রশ্ন জোরালোভাবে তোলেন তিনি।
‘সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’-এর তরফে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হয়, প্রথম দফায় নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করেই বিজেপি খুলে আম সাম্প্রদায়িকতা ও চরম বিদ্বেষ-বিভাজনের রাজনীতির সওদাগর সেজেছে। কারণ, তাদের সামনে এ ছাড়া আর বিকল্প এজেন্ডা নেই। দেশবাসী পরবর্তী ৬ দফা নির্বাচনে ইভিএমে এর জবাব দেবে বলে আশাবাদী মঞ্চের নেতারা। উল্লেখ্য, এদিন রাজ্য নির্বাচন কমিশনে ডেপুটেশন জমা দেন মঞ্চের আহ্বায়ক শক্তিমান ঘোষ, প্রসূণ ভৌমিক, ছোটন দাস ও শাদাব মাসুম প্রমুখ।