ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই ১১ লক্ষ মানুষের আবাসন করে দেব জলপাইগুড়িতে নির্বাচনী প্রচার সভায় বললেন মমতা
বাংলার জনরব ডেস্ক : নরেন্দ্র মোদির মত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নয় কারণ এটা যে নিছক কথার কথা সেটা সাধারণ মানুষ জানে। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেওয়ার মতো ক্ষমতা দেশের প্রধানমন্ত্রী যে নেই সেটা স্পষ্ট। কিন্তু আজ মঙ্গলবার বালুরঘাটের সভাতে যখন নরেন্দ্র মোদী বিনামূল্যে বিদ্যুৎ দেয়ার কথা ঘোষণা করছেন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ঠিক সেই সময়ই জলপাইগুড়ির প্রচার মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১১ লক্ষ মানুষকে বাড়ি বানানোর টাকা দেয়া হবে বলে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে জানিয়ে দিলেন।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে প্রতিশ্রুতি দেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করার চেষ্টা করেন। তাই নরেন্দ্র মোদী অন্তত এই খানটাতে পিছিয়ে রইলেন মমতার কাছে। কারণ মোদীজি এমন একটা কথা বললেন যেটা বাস্তবে রূপায়ণ করা খুবই কঠিন। ওই দেশের মানুষকে ১৫ লক্ষ টাকা দেয়ার মত প্রতিশ্রুতি বলা যেতে পারে।
উত্তরবঙ্গের ঝড়ে কয়েক সপ্তাহ আগেই ভেঙে গিয়েছে বহু ঘরবাড়ি। আশ্রয় হারিয়েছেন মানুষ। এই সমস্ত ঝড়দুর্গতদের অর্থসাহায্য দেওয়া নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে কমিশনের টানা পড়েনও চলছে। এই পরিস্থিতিতেই রাজ্যের বাংলার বাড়ি নিয়ে এই ঘোষণা করলেন মমতা। মমতা বললেন, ‘‘আমি কথা দিচ্ছি ১১ লক্ষ মানুষের আবাসন এই বছরেই আমরা করব।’’
জলপাইগুড়িতে মিনি টর্নেডোর তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল বহু এলাকা। তার মধ্যে ময়নাগুড়িও ছিল। মঙ্গলবার সেই ময়নাগুড়িতই ভোটের প্রচারে এসেছিলেন মমতা। সেখানেই আবাস যোজনার টাকা না পাওয়া এবং ঝড়দুর্গতদের টাকা দিতে কমিশনের বাধা নিয়ে কথা বলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা জানেন ভোট না হলে আমার কাছে এক সেকেন্ডের ব্যাপার ছিল। কিন্তু ভোট চললে আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। কারণ বিজেপির কমিশন বসে আছে। আমরা ওদের লিখেছিলাম বারবার। যাদের বাড়ি ঘর ভেঙে গিয়েছে, তাদের ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হোক। যাতে তাঁরা তাঁদের বাংলার বাড়ি পায়। কিন্তু কমিশন বলল, ‘না। যা প্রচলিত নিয়ম আছে। তাতেই হবে’।’’ উল্লেখ্য, এই নিয়ম অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ঝড় দুর্গতদের হাতে টাকা পৌঁছে গিয়েছে। কত টাকা পৌঁছেছে, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মমতা। জানিয়েছেন, কমিশনের বলা নিয়মে আসলে কী আছে!
মমতার কথায়, ‘‘ওই নিয়মে যাদের সব ভেঙে গিয়েছে তারা ২০ হাজার পাবে। যাদের আংশিক ভেঙে গিয়েছে তারা পাঁচ হাজার পাবে।’’ তবে এই অর্থে যে কারও বাড়ি বানানো সম্ভব নয়, সে কথাও বুঝিয়ে দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, ‘‘একটা বাড়ির উপর দিয়ে ঝড় চলে যাওয়া মানে সে বাড়ি উপড়ে ফেলার মতোই অবস্থা। আমি কথা দিচ্ছি ১১ লক্ষ মানুষের আবাসন এই বছরেই আমরা করব। ডিসেম্বরের আগেই তার টাকা রিলিজ করব। প্রথম কিস্তি। তার মধ্যে আপনাদের বাড়ি গুলোও থাকবে। বাড়িটা ভাল করে তৈরি করে নেবেন।’’
কী ভাবে কমিশনের বাধা সত্ত্বেও এই টাকা দেবেন তিনি? মমতা বলেছেন, ‘‘ডিজাস্টারে একটা নতুন রুল আগস্ট মাসে হয়েছে। আমি দেখে নিয়েছি। তাতে ২০ হাজার যারা পেয়েছেন, পরে ৪০ প্রশাসন দেবে। তার পর বিল পাশ হয়ে গেলে দ্বিতীয় কিস্তিতে আরও ৬০ হাজার পাবেন। তাই ২০ হাজার টাকা আপনারা যারা পেয়েছেন। যদি কারও বাড়ি ভেঙে থাকে এবং বঞ্চিত হয়েছেন, কেউ বঞ্চিত হবেন না। মনে রাখবেন। যাাঁদের বাড়ি সত্যিই সবটা ভেঙেছে, তাঁরা বাংলার বাড়ির জন্য আপনারা টাকা পাবেন। যাদের আংশিক ভেঙেছে। যাঁরা কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী পাঁচহাজার পেয়েছেন। বাংলার বাড়ির টাকায় আপনাদের বাড়িও থাকবে।’’
তবে উত্তরবঙ্গে এই ঘোষণার পাশাপাশি কিছুটা অভিমানও ঝড়ে পড়েছে মমতার কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘‘এই যে আপনারা মাঝে মাঝেই বিজেপিকে ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। উত্তরবঙ্গের মানুষেরা। জঙ্গলমহলের মানুষেরা। ফলে বিজেপি টাকা বন্ধ করে দিচ্ছে। আপনারা বলুন তো কে এখানে আগে আসত? কোন সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গলমহল হেসেছে। কী পাননি আপনারা। সব দিয়েছি তো।’’