কলকাতা 

খুনের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ বছর পর বেকসুর খালাস হাইকোর্টে

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি :  খুনের মামলায় পনেরো বছর পর কলকাতা হাইকোর্টে বেকসুর খালাস মিলল তিন অভিযুক্তের। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে এলাকায়। ঘটনার বিবরণে জানা যাচ্ছে, বীরভূম জেলার রামপুরহাট থানার অধীন কুসুম্বা গ্রামে এক নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। এই মামলায় রামপুরহাটের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৩৪ বিধির অনুসারে ওই গ্রামের বাসিন্দা মানু লেট, আনন্দ লেট এবং পাঁচু লেট বা পঞ্চাননকে দোষী সাব্যস্ত করে। একইসঙ্গে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়। নিম্ন আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে কলকাতা হাইকোর্টে ২০০৯ সালে আবেদন করে অভিযুক্তরা ( আপিল নাম্বার 338 অফ 2009)। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে শর্তসাপেক্ষে ওই তিন অভিযুক্তকে জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।কিন্তু নানা কারণে সেই মামলা ঠান্ডা ঘরে পড়েছিল।

এবছর অর্থাৎ ১০ই জানুয়ারি ২০২৪ এই মামলাটি শেষ পর্যন্ত বিচারপতি মাননীয়া অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এজলাসে ওঠে। অভিযুক্তদের পক্ষের আইনজীবী অশোক ব্যানার্জি ও আইনজীবী সম্রাট ব্যানার্জি সাওয়াল করতে গিয়ে বলেন, নিম্ন আদালত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনরকম উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দোষী করেছে। আইনজীবী অশোক ব্যানার্জি এদিন আদালতের সামনে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরে বিচারপতির আস্থা অর্জন করেন। তিনি বলেন এই মামলার প্রধান সাক্ষী এবং অভিযোগকারীনি একজনই। অর্থাৎ প্রত্যক্ষদর্শী একজন সাক্ষী তিনি নিজে যে বিবাহিত ছিলেন যে স্বামীর কথা বলা হচ্ছে বলরাম লেট যিনি খুন হয়েছেন তার আগে উনার  একজন স্বামী ছিলেন তার সঙ্গে কোনো বিবাহ বিচ্ছেদ হয়নি। প্রমাণ হিসাবে তিনি ২০০৭ সালের ভোটার লিস্টের কপি তুলে ধরেন।

Advertisement

দ্বিতীয় কারণ হিসাবে অশোক ব্যানার্জি বিচারপতির কাছে তুলে ধরেন, এই মামলায় আরো দুজন যে সাক্ষী তাদের মধ্যে একজন হলেন অভিযোগকারীনি র প্রথম পক্ষের পুত্র। তারা দুজনই ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ফলে প্রত্যক্ষদর্শী হতে পারেন না। তৃতীয় কারণ হিসাবে আইনজীবীরা উল্লেখ করেন, যে এফআইয়ের এ যে লাঠি এবং শাবল দিয়ে মারার কথা বলা হয়েছে সেগুলো কোথাও উদ্ধার করা হয়নি, ফরেনসিক রিপোর্ট ও পেশ করা হয়নি। চতুর্থত, মারধর গন্ডগোল অশান্তি হওয়ার পর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার পরে আহত অবস্থায় মৃত বলরাম লেটকে রামপুরহাট মহাকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে যে ডাক্তারবাবুর কাছে এ বিষয়ে বয়ান দিয়েছিলেন অভিযোগকারীনি সেখানে কিন্তু অভিযুক্তদের নাম বলা হয়নি। সবমিলিয়ে তথ্য প্রমাণ সাপেক্ষে বলা যেতেই পারে যে এই তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ প্রমাণ নেই যে এরাই খুন করেছে। এই অবস্থায় অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বিচারপতির কাছে আবেদন করেন বেকসুর খালাস করে দেয়ার জন্য। অভিযুক্তদের আইনজীবী আরো অভিযোগ করেন পূর্ব আক্রোশবশত এবং জালিয়াতি করে এদেরকে ফাঁসানো হয়েছে।

অন্যদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী আপত্তি তুলে বলেন যে ওদিনের ঘটনার সব তথ্য প্রমাণ রয়েছে এলাকার মানুষেরাও সব জানে। দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় নিম্ন আদালতের রায়কে খারিজ করে দেন এবং তিন অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দেন।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ