অন্যান্য জেলা 

Loksova Election 2024 : আবু তাহের বনাম মোহাম্মদ সেলিম মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে এগিয়ে কে?

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম  : মুর্শিদাবাদ জেলার মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এই কেন্দ্রটি বরাবরই বাম দুর্গ বলে পরিচিত ছিল। এক দুবার কংগ্রেস প্রার্থী মান্নান হোসেন জয়ী হলেও কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই এই কেন্দ্র থেকে বামেরা এই জয়যুক্ত হয়েছে। সিপিএমের গড় হিসাবে পরিচিত এই লোকসভা কেন্দ্রটি ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনেও সিপিএম প্রার্থী জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়ে যায় বামেদের।

এই কেন্দ্র থেকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে কয়েকবার সংসদে নির্বাচিত হয়েছিলেন পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু সমাজের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সৈয়দ বদরুদ্দোজা। তারপর আবু তালেব চৌধুরী, তারপরে কাজেম আলী মির্জা, এরপর থেকে সৈয়দ মাসুদ আল হাসান, মইনুল হাসান, মান্নান হোসেন ও বদরুদ্দোজা খান এবং বর্তমান বিদায়ী সাংসদ আবু তাহের খান। সময়ের বিচারে বেশ কয়েক বছর ধরে একটানা এই এলাকা থেকে বামপন্থী প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলে পরিগণিত হয়েছে।

Advertisement

এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা কেন্দ্রগুলি হল : ভগবানগোলা, লালগোলা বা মুর্শিদাবাদ, রানীনগর, ডোমকল, জলঙ্গি, হরিহরপাড়া ও করিমপুর। সাতটা বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্র মুর্শিদাবাদ জেলায় অবস্থিত একটি বিধানসভা কেন্দ্র করিমপুর নদীয়া জেলায় অবস্থিত। এই লোকসভা কেন্দ্রের প্রায় সবকটি বিধানসভা এলাকাতেই সংখ্যালঘু ও মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ৮০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোট। স্বাভাবিকভাবে বাঙালি মুসলিম সমাজের একটা বিরাট দায় এবং দায়িত্ব রয়েছে এই কেন্দ্রের ভোটারদের।

সার্বিকভাবে সমস্যা রয়েছে এলাকার আর্থিক সমস্যার সেভাবে সমাধান হয়নি। বেশিরভাগ এলাকার ছেলেরা অন্য রাজ্যে কাজে যায় কারণ এখানে কাজ নেই। বড় কোন শিল্প হয়নি মুর্শিদাবাদ এলাকায়। সমস্যা অনেক সমাধানের কোন পথ নেই। কেউ কথা রাখেনি মুর্শিদাবাদের মানুষদের কাছে সবাই কথা দিয়েছে কেউ কথা রাখেনি। স্বাধীনতার আটাত্তর বছর পরেও মুর্শিদাবাদে এখনো যে উন্নয়ন চোখে পড়ার কথা ছিল সে উন্নয়নের জোয়ার পৌঁছায়নি। উপরন্ত সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ার কারণে বিএসএফের অত্যাচার এলাকার মানুষের কাছে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মোহাম্মদ সেলিম বনাম আবু তাহের খানের লড়াই কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর থেকে বামেরা তারা তাদের সংগঠনকে এইসব এলাকায় ঢেলে সাজিয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট থাকার কারণে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে মোহাম্মদ সেলিম। কারণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় আমরা দেখেছি এই এলাকার সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে শাসকদলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠতে। ডোমকল, জলঙ্গি, রানীনগর, লালগোলা, ভগবানগোলা, হরিহর পাড়া সর্বত্রই পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিরোধ হয়েছে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে শাসক দল যেভাবে সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি তার প্রতিক্রিয়া এবারে নির্বাচনে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আর আবু তাহের খানকে পুনরায় মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করার ফলে এলাকার গোষ্ঠী কোন্দল আরও তীব্র। আসলে আবু তাহের খানকে এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একটা অংশ খুব একটা ভালো চোখে দেখে না। ফলে এই এলাকার তৃণমূল কর্মীদের অসন্তোষ যদি ভোট বাক্সে কাজে লেগে যায় তাহলে কিন্তু ফলাফল ঘুরে যেতে পারে। মুর্শিদাবাদের ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে হরিহর পাড়া ডোমকল রাণীনগর জলঙ্গি এই চারটি বিধানসভা এলাকাতে সিপিএম যথেষ্ট শক্তিশালী এবং কংগ্রেস সঙ্গ দিলে সিপিএম প্রার্থী অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারে। যেহেতু মোহাম্মদ সেলিমের মত হেভি ওয়েট রাজনীতিবিদ এই এলাকায় প্রার্থী হয়েছেন স্বাভাবিকভাবেই জোট ধর্ম অটুট থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে করিমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে লড়াইটা কিভাবে হবে সেটাই এখন দেখার। কারণ এই বিধানসভা কেন্দ্রের ভোট যদি সুষ্ঠুভাবে করাতে পারে সিপিএম দল তাহলে মোহাম্মদ সেলিম অনেকটাই এগিয়ে থাকবেন। সব মিলিয়ে একথা বলা যেতেই পারে, মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের ২০২৪ এর নির্বাচন আর একতরফা হবে না লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে।

কারণ ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে আবু তাহের খান জিতে গিয়েছিলেন কংগ্রেস এবং সিপিএমের ভোট কাটাকাটির অংকে এবার যদি সেই ভোট কাটাকাটি অংকটা থেমে যায় তাহলে আবু তাহের খানের দিল্লি যাত্রা আটকে যেতে পারে


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ