কলকাতা 

বিজেপির প্রার্থী তালিকায় তেমন চমক নেই আছে শুভেন্দু অধিকারীর আধিপত্য

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বিজেপির প্রথম তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের ১৯ লোকসভা আসনের প্রার্থীর নাম প্রকাশিত হয়েছিল অনেক আগেই।  তারপরের তালিকা প্রকাশিত হতে হতে তিনটে তালিকা বেরিয়ে গেছে বিজেপির। পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যখন শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভার প্রার্থীরা জোর কদমে প্রচারে নেমেছে তখন বিজেপির নেতারা তাকিয়ে রয়েছে দিল্লির দিকে কখন প্রকাশ পাবে তালিকা। শুভেন্দু আর সুকান্ত মজুমদার প্রতিদিনই নিয়ম করে দিল্লি টিকিট কেটে রেখেছিল যাতায়াত করছিল। মনে হচ্ছিল যেন আজই প্রার্থী তালিকা ঘোষিত হবে। আর মাঝে মাঝেই বিজেপির ঘনিষ্ঠ কিছু ইউটিউব চ্যানেল কিছু সাংবাদিক চ্যানেলগুলোতে বলতে শুরু করলেন কিছু নাম। যেমন বলা হলো মোহাম্মদ সামি নাকি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির প্রার্থী হচ্ছে এমন ভাবে প্রচার করা হলো মনে হল যেন অতীব বাস্তব কথা এবং মোহাম্মদ সামি কাল থেকেই প্রচার শুরু করে দেবেন।

প্রচারের গরু যখন গাছে উঠে বসতে যাচ্ছে ঠিক তখনই প্রকাশিত হলে পশ্চিমবঙ্গের আরও ১৯ টা লোকসভা আসনের প্রার্থীর নাম। বাকি রইল তিনটে থুরি তিনটে নয় চারটে কারণ আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পবন সিং নিজে থেকেই ঘোষণা করেছেন তিনি ভোটে দাঁড়াবেন না ,সেই আসনের নতুন প্রার্থী তালিকা এখনো ঘোষণা করেননি নরেন্দ্র মোদি। প্রার্থী তালিকা তৈরি করতে বিজেপি দল যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে এই রাজ্যে তাদের সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। আর এই ভাঙ্গাচোরা সংগঠন দিয়ে ইডি সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে যদি মনে করে থাকে মমতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে তাহলে মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন মোদি শাহরা।

Advertisement

যাইহোক দিলীপ ঘোষের মতো প্রবীণ নেতা যখন হাপিত্যেশ করে দিল্লির দিকে তাকিয়ে রয়েছেন ঠিক তখনই নাম গুলো প্রকাশ পেল। এক অদ্ভুত সিকুয়েন্স তৈরি হয়েছে বিজেপি দলের মধ্যে। যারা দলটা তৈরি করেছিলেন যারা আরএসএস থেকে বিজেপিতে এসেছিলেন তারা যেন সকলেই ব্রাত্য হয়ে গেছে আর শুভেন্দু আর সুকান্ত মজুমদার এদের দাপটে আরএসএস পন্থিরা এখন মিউ মিউ করছেন। প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হওয়ার পরেই বিষয়টি সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় যে এবারের বিজেপির প্রার্থী তালিকায় আধিপত্য দেখিয়েছে শুভেন্দু অধিকারী। কলকাতা উত্তরের প্রার্থী থেকে শুরু করে দমদমের প্রার্থী এমনকি কোচবিহার থেকে শুরু করে সমস্ত জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ রায় বিজেপির টিকিট পেয়েছে। এতদিন ধরে যে বিজেপি দলকে বলা হত সাংগঠনিক দিক থেকে বলিষ্ঠ। এই বলিষ্ঠতার নমুনা দেখে মনে হচ্ছে আসলে বিজেপিও কংগ্রেসের পরিকাঠামোর বাইরে যেতে পারছে না।

যেমন ধরুন জলপাইগুড়ি জয়ন্ত রায়। ইনি যে বিজেপির টিকিট পাবেন কেউ জানতো! জঙ্গিপুরে ধনঞ্জয় ঘোষ বিজেপি প্রার্থী এর নামই কেউ শুনেনি। কার অনুগামী ভেবে নিন? রায়গঞ্জে কার্তিক পাল কে এই কার্তিক পাল কি বা তার পরিচয় সাধারণ মানুষের কাছে এটা জানাতেই হয়তো বিজেপির ভোট শেষ হয়ে যাবে। মেদিনীপুর থেকে নিয়ে যাওয়া হল দিলীপ ঘোষ কে বর্ধমান দুর্গাপুর লক্ষ্য উদ্দেশ্য খুব পরিষ্কার। কঠিন আসন কীর্তি আজাদের মত হেভিওয়েট নেতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে যদি জিততে পারেন তা দিলীপ ঘোষের কৃতিত্ব যদি হেরে যান তাহলে রাজনীতি শেষ? বর্ধমান পূর্বে অসীম কুমার সরকার কীর্তন গায়ক। নেচে নেচে গান গেয়ে বিধানসভায় দিতে যেতে পারে লোকসভায় কি পারবে বিজেপি নেতারা ভেবে দেখেছেন? কৃষ্ণনগরে অমৃতা পাল বলা হচ্ছে রানী, রাজ পরিবারের গৃহবধূ। ভোটে কতটা ডিভিডেন্ট দেবে তা কী কেউ বলতে পারবে? শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বলে টিকিট পেয়ে গেলেন অমৃতা রায়!

বসিরহাটের রেখা পাত্র কি এই রেখা পাত্র তিনি কি করেন কোথায় থাকেন তার কোন বিবরণ সেই অর্থে রাজ্যবাসী জানেন না তিনি বসিরহাট থেকে বিজেপি টিকিটের জেতে লোকসভায় যাবে। ভাবা যায়! রেখা পাত্রকে বিজেপি আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যকে সীলমোহর দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছিলেন যে সন্দেশখালিতে যা করছে তার পেছনে আরএসএস রয়েছে। আর এই ভদ্রমহিলা আরএসএসের ঘনিষ্ঠ বলেই জানা গেছে অনেকেই বলছেন তিনি নাকি দুর্গা বাহিনীর নেত্রী। আর এটা যদি বাস্তব হয় তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা হুবহু মিলে গেল আর এই মিলে যাওয়ার জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডিভিডেন্ট পাবে বিজেপি নয়। শ্রীরামপুরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে তার প্রাক্তন জামাই কবীর শংকর বোস। যিনি গত বিধানসভা নির্বাচনে শ্রীরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে তেমন ভাবে লড়াই করতেই পারলেন না তিনি কিভাবে শ্রীরামপুর লোকসভায় দাগ কাটবে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো প্রবীর নেতার বিরুদ্ধে আরো যোগ্য কোন প্রার্থী দেওয়া যেত এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু দেওয়া হল না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

দমদম লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক শীল ভদ্র। তিনি যথেষ্ট যোগ্য সাংগঠনিক নেতা দমদম লোকসভা কেন্দ্রে নিঃসন্দেহে তার প্রভাব পড়বে। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে অর্জুন সিংকে এই কেন্দ্রটি বিজেপি তার নিজের দখলেই রেখে দিল এখন থেকে বলা যেতে পারে। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে অরূপ কান্তি দিগড়কে । এই আসনটিও বিজেপির জন্য নিশ্চিত সিট  হয়ে গেছে। কলকাতা উত্তরে প্রার্থী করা হয়েছে তাপস রায়কে এটাই স্পষ্ট হয়েছে যে তৃণমূল থেকে তাপস রায় না এলে বিজেপি কাকে প্রার্থী করত তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় ছিল অর্থাৎ বিজেপি প্রার্থী খুঁজে পাচ্ছে না। অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতায় প্রার্থী করা হয়েছে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরীকে।

সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে প্রার্থী তালিকায় তেমন কোন চমক নেই এমন কাউকে প্রার্থী করা হয়নি যে তার নিজের ক্যারি সীমাতে জয় লাভ করতে পারবে বরং জয় পরাজয় নির্ভর করবে সবটাই। দলের সাংগঠনিক ক্ষমতার উপরে।

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ