অন্যান্য 

অধীর বনাম ইউসুফ পাঠান লড়াইয়ে এগিয়ে কে ?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম :  লোকসভা নির্বাচন দিল্লি সরকার গড়ার জন্য হলেও আমাদের রাজ্যে তা গুরুত্বপূর্ণ এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । বিশেষ করে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন আক্ষরিক অর্থেই মমতা সরকারের কাছে এক প্রকার চ্যালেঞ্জ । তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির কাছে থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছেন । রাজ্যর ৪২টি লোকসভা আসনের প্রার্থী তালিকার দিকে তাকালেই মনে হতে পারে বেশ কয়েকটি আসনে হেরে যাওয়ার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে ।

দলের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে তারা নাকি মাটির মানুষকে প্রার্থী করেছে । কিন্ত আসলে কী তাই ? একটু বিশ্লেষণ করে দেখলে দেখতে পাবেন যে ৪২ আসনের মধ্যে বেশ কয়েকটি আসনে প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপি থেকে আসা বিধায়ক কিংবা নেতাদের । এই দলবদলু নেতারা জিতলে তৃণমূলের সঙ্গে থাকবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই । তাহলে প্রার্থী করা হলো কেন ? এথেকে এটা স্পষ্ট হচ্ছে , মুকুলের ভাষায়,যে বিজেপি সেই তৃণমূল । যাইহোক এবারের লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুরের সাংসদ এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির বিরুদ্ধে প্রার্থী করা হয়েছে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে । তিনি আবার গুজরাটের বাসিন্দা । প্রথমত ৬০ শতাংশের বেশি মুসলিম ভোটার যে আসনে সেখানে মুসলিম প্রার্থী দেওয়াটা অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত । কিন্ত বাংলার কোনো তৃণমূলের মুসলিম নেতা ছিলেন না, যাকে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী করা যেত ! কেন করা হলো না ! কেন বাঙালি মুসলিমদের অবঞ্জার চোখে দেখা হল । এমনিতেই মমতার লোকসভার তালিকায় মাত্র ৬ মুসলিম । রাহুল গান্ধীর স্লোগান সামনে আনলে যার যত ভাগীদারি তার তত অংশীদারি । সেক্ষেত্রে ৪২ আসনের মধ্যে ১৩ আসন মুসলিমদের দেওয়া উচিত ছিল । কিন্ত দেওয়া হয়েছে মাত্র ৬টি , তার মধ্যে একজন গুজরাটি ।

Advertisement

ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করার পর কিছু উৎসাহী তৃণমূল কর্মী বলতে শুরু করেছেন এবার অধীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন । যদি অধীর হেরে যান তাহলে ক্ষতি হবে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের । কারণ ইউসুফ পাঠান ওই এলাকার ভূগোল চেনেন না । মানুষের অভাব-অভিযোগ সমস্যাগুলি ভালভাবে উপলদ্ধি করতে পারেবন না । ফলে যদি জেতেন তাহলে বহরমপুরের সাধারণ নাগরিকরা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা আখের গোছাতে ব্যস্ত ফলে ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করাটা বুমেরাং হতে পারে । তৃণমূল দলের কাছে এটা খুব ভাল হবে না । প্রথমত বহরমপুর এলাকার অধিকাংশ মানুষ বাঙালি , তারা বাঙালি প্রার্থী চান । দ্বিতীয় স্থানীয় প্রার্থী চান , অন্তত বাংলার মানুষ হতে হবে । তৃতীয়ত, ইউসুফ পাঠান রাজনীতির লোক নন , সুতরাং তিনি রাজনীতির মারপ্যাঁচ বুঝে উঠতেই পারবেন না ।

আমাদের মনে পড়ছে বর্ধমান-দূর্গাপুর আসনে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে ডা.মমতাজ সংঘমিতা মাত্র আড়াই হাজার ভোটে হেরে গিয়েছিলেন । কারণ কী ছিল ? তৃণমূল দলের কিছু নেতার অন্তর্ঘাতের ফলে তিনি হেরে যান । আর বহরমপুরে সেটাই হতে যাচ্ছে । তাই ইউসুফ পাঠান নিয়ে যারা হইহই করছেন তারা ভুলে যাচ্ছেন ওই আসনে প্রার্থী হলেন অধীর চৌধুরি । আর একটা তৃণমূল নেতৃত্ব ভুলে যাচ্ছেন বাঙালি মুসলমান সমাজকে বঞ্চিত করে অবহেলিত করে গুজরাট থেকে প্রার্থী এনে ভোটে জেতানো সহজ ব্যাপার নয় । আর একটা তৃণমূল নেতৃত্ব মনে রাখতে হবে বাঙালি মুসলমানের আত্মমর্যাদায় আঘাত দিলে তারা প্রত্যাঘাত দিতে পারে । বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের রাজ এক নিমেষে শেষ হয়ে গেছে । শুধূমাত্র বাঙালি মুসলমানদের আত্মমর্যাদায় আঘাত দেওয়ার জন্য । মুহাম্মদ সেলিমরা যখন ক্ষমতায় ছিলের তখন এই রাজ্যের বাঙালি মুসলমান সমাজকে গুরুত্ব দেননি । তাদের প্রতিভাকে মর্যাদা দেননি । তার ফলে আজ বিধানসভায় শুন্য হয়ে গেছে বামেরা । আর তৃণমূল কংগ্রেস বামেদের চেয়ে আরও্ খারাপভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজকে গুরুত্বহীন করে তুলেছে । আর এই জবাব একদিন অবশ্যই পাবে রাজ্যের শাসক দল ।

তাই সব দিক বিচার করে বলা যেতেই পারে অধীর হয়তো ভাবছেন লড়াই কঠিন । কিন্ত লড়াই সহজ হয়ে যাবে যদি মুর্শিদাবাদের বাঙালি মুসলিম সমাজের কছে নিজেকে একজন প্রকৃত জনপ্রতিনিধি হিসাবে তুলে ধরতেন পারেন । তাহলে অধীরের জয় নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ