কলকাতা বিনোদন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য 

দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি … : সুচরিতা চক্রবর্তী 

শেয়ার করুন

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার, হে বিধাতা! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আহ্বান ২১ শতকের বিজ্ঞান প্রযুক্তির যুগেও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। রামায়ণ মহাভারতের যুগ থেকে নারী আমাদের সমাজে অবহেলিত বঞ্চিত শোষিত। ২১ শতকে এসেও এর কোন ব্যতিক্রম হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে নারীর অধিকার নয় নারীকে পুরুষের সমান সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। এই দাবিটা সকলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা উচিত।

এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক কবিতার জগতে অনন্য কবিতার  পসরা নিয়ে যিনি দিন দিন দুই বাংলায় জনপ্রিয় কবি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেই সুচরিতা চক্রবর্তী নারী দিবসে কলম ধরেছেন বাংলার জনরবের জন্য। তাঁর  প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর এই লেখাটি আমরা প্রকাশ করলাম।

Advertisement

দিবস রজনী আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি .

সুচরিতা চক্রবর্তী 

সত্যিই আশায় থাকি , যে আমারে দেখিবারে পায় ভাল মন্দ সকলি মিলায়ে ।

সমস্ত অংশীদারিত্ব আর পাই কই !

প্রাচীন থেকে বলি। মানবী, দেবী ,রাক্ষসী ,নাগকন্যা ,অযোনিসম্ভূতা । বাল্মীকি থেকে ব্যাসদেব নারীকে অসাধারণ বাগ্মী ও

বুদ্ধিসম্পন্যা সত্বেও সর্বংসহা করে রচনা করেছেন । প্রাতঃস্মরণীয়া সীতা সাবিত্রী দময়ন্তী শৈব্যা এদেরকে পুরুষের অত্যাচার সইতে হলেও শেষদিন পর্যন্ত আপন স্বাতন্ত্রে সমুজ্জ্বল ছিলেন ।

নারীর অন্তরঙ্গ আর বহিরঙ্গের গল্প বোধ হয় এক নয় । তখন থেকে আজ অবধি কাঠিন্যের বর্ম পরে আছে নারী।

দ্রৌপদী সম্ভবত পৃথিবীর কাব্য কাহিনীর শ্রেষ্ঠ নায়িকা যার ওপর পুরুষদের যত রকম অত্যাচার তার সবটাই ঘটেছিল। চার আদি মহা কাব্যের অন্য কোনো নারী দ্রৌপদীর মত লাঞ্ছনা ভোগ করেন নি । কর্ন রাজসভায় বলেছিলো ” এখন আমরা দ্রৌপদীর নগ্ন সৌন্দর্য দেখতে চাই।” ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম, দ্রোণাচার্য কেউ প্রতিবাদ করেন নি। তাই তাঁদের অসৎসভায়াঃ অর্থাৎ সংস্কৃতি বিহীন সভাসদ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শুধুমাত্র সংস্কৃতি বিহীন ব্যক্তিই বিবসনা নারীকে দেখতে চায়, যদিও আজকাল তা ফ্যাশানে পরিনত হয়েছে।

কুন্তী অভিকর্ষণ মন্ত্র ধারিণী হলেও নিঃসঙ্গ মনস্বিনী । পুরুষ কেবল ক্ষনিকের অতিথি ।

অম্বার প্রতিবাদী চরিত্রটি আমার বড় প্রিয় যা জন্মান্তরেও প্রতিফলিত । জন্মান্তর বুঝি না, তবে নারীকে প্রতিবাদী হতেই হবে । মুখ বুজে থাকা আর পাতাল প্রবেশ একই বিষয়। রামের যত জয় জয়কার সব সীতারই জন্য। সীতা আর সূর্পণখা ছাড়া যেমন রামায়ণ সৃষ্টি হতো না তেমন সত্যবতী, অম্বা, দ্রৌপদী ছাড়া মহাভারত সৃষ্টি হতো না।

নারী কি পারে , পুরুষের কাছে তার কি প্রভাব অলঙ্ঘনীয় তিলোত্তমা তার প্রমাণ।

এমন উদাহরণ অনেক আছে ক্লিয়োপেট্রা ,ঊর্বশী, হিড়িম্বা, উত্তরা এমন অজস্র নারী তাদের অবদান রেখেছেন । লা মারলিনো , যার রূপের প্রভাব মনুষ্য জগত ছাড়িয়ে পশু জগতের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছিল ।

তুমি কেবল মাত্র পুরুষ গন্ডির ভেতর থেকে নিজের ভূমিকা পালন করো সে তোমার স্বামী হোক পুরুষ বন্ধু অথবা বাবা বা ভাই।

নারী দিবস বিষয়টি আমার কাছে পুরুষ তান্ত্রিকতার আস্ফালন মাত্র। অত্যাচারের আদি আর আধুনিক বলে কিছু নেই তার প্রমাণ প্রাচীন থেকে আজ ও । নির্ভয়া থেকে হাসরথের দলিত কন্যা থেকে অসংখ্য কন্যার জীবন্ত জলন্ত জননেন্দ্রিয় ।

নারী দিবস নয়। অবিমিশ্র চিরন্তনী ভালোবাসায় ভরে থাক নারী ও পুরুষ।

পর্বত যেমন নিজ অঙ্গে ওষুধি লালন করে ফুল ফোটায় ফল ধরায় বৃষ্টি ঝরায় তেমনই অঙ্গাঙ্গী ভাবে থাক নারীপুরুষ সম্মানের সাথে।

@সুচরিতা চক্রবর্তী ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ