জেলা 

অদৃষ্টের পরিহাস, দীর্ঘদিনের তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আজ পরিযায়ী শ্রমিক

শেয়ার করুন

মোস্তফা কামাল : তারিফ মহলদার,বাড়ি মুর্শিদাবাদ জেলার ভগবানগোলার রামবাগ গ্রামে,শিক্ষাগত যোগ্যতা এম,বি,এ পাশ ! বাবার হাত ধরে 1998 সালে তৃণমূল কংগ্রেস দিয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ, প্রথমে ছাত্র রাজনীতি দিয়ে 2012 সালে ‘তৃণমূল যুবা’ তে পদার্পণ। 2014-2017 অবধি ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি । দলের সাংগঠনিক কাজে সবসময় এক ধাপ এগিয়ে থাকতেন অন্যদের থেকে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জীর অন্যতম স্নেহধন্য ছিলেন তিনি। তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডকে দেখে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দলের কর্মী এবং সমর্থকদের কাছে নয়নের মণি হয়ে উঠেছিলেন।এমনকি ছাত্র যুবদের অভিভাবক হয়ে উঠেছিলেন।

তারিফ বাবুর বক্তব্যের মাধ্যমে কেঁপে উঠতো বিরোধীরা।যখন যেখানে মানুষ তার স্মরণাপন্ন হতেন নির্দিধায় তিনি পৌঁছে যেতেন সেখানে।মূলত রাজনীতিবিদ ছাড়াও উনি এলাকায় সমাজসেবী হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন।

Advertisement

2020 এর লক ডাউন বিভিন্ন জেলা ও রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ খরচে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে আসা এবং তাদের অনুপস্থিতিতে তাদের সংসারের দায়ভার নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন।তারিফের সাহায্য সহযোগিতা পৌঁছে গেছিলো অনেকের পরিবারে শিক্ষা এবং শিক্ষার সরঞ্জাম,খাদ্য সামগ্রী থেকে শুরু করে অনেক কিছু। সেই লকডাউনের সময় কোন রাজনৈতিক দলের নেতাদের এলাকায় কাউকে দেখা যায়নি। তারিফ বাবু এবং তার কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে ছুটে যেতেন অঞ্চলে অঞ্চলে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। তাছাড়া বহু গরীব মানুষ যারা লক ডাউনে শ্রমহীন হয়ে গিয়েছিলো তাদের আর্থিক অনুদান এবং সংসারের যাবতীয় সরঞ্জাম পৌঁছে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।অনেকেই তার দ্বারা সাবলম্বী হয়েছেন।কিন্তু আজ বর্তমান অবস্হায় তিনি একজন পরিযায়ী শ্রমিক!কাজ করেন রাস্তার শ্রমিক হয়ে, খোঁজ নেয় না রাজ্য,জেলা এবং ব্লকের ভিন দল থেকে আসা নব্য নেতৃত্বরা !!

তিনি শিকার হয়েছেন পরিস্হিতির। অর্থের বিনিময়ে,এবং কিছু কুচক্রী নেতৃত্বের কু- চক্রান্তে তাকে সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

তবুও দলের সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন তারিফ। হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছিলেন দলের সিদ্ধান্ত। আজ পর্যন্ত তিনি দলের বিরুদ্ধে একটাও কথা বলেন নি। তারিফ বাবুর কথায়”আজ আমার আর্থিক অবস্হা ভালো নেই বলে তারা(দল) আমাকে আর প্রাধান্য দেয় না এমনকি নিজের রক্তের সম্পর্কের মানুষেরাও! তারিফ বাবু বলেন, “তবে দলকে,দলের নেত্রীকে দলের কর্মীদেরকে খুব ভালোবাসি,সাংসারিক অভাব অনটনের জন্যই আজ আমি পরিযায়ী শ্রমিক।”

মুর্শিদাবাদ জেলার তৃণমূলের প্রবীন নেতা শ্রী দিলীপ সিংহ রায় বলেন, “তারিফ মহলদার ছিলেন আমার চোখে দেখা সৎ নিষ্ঠাবান লড়াকু কর্মী।বর্তমানে তার মতো পুরোনো দিনের ব্লকের ও জেলার অনেক প্রবীণ নেতৃত্ব ডাক পান না দলের কর্মসূচীতে। তারিফ মহলদারের মতো অনেকেই আজ হারিয়ে গেছেন তথাকথিত ইদানিং সমাজসেবা ও রাজনীতি থেকে।

পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে রাজনৈতিক অপবাদ ও অবহেলায় নিজের সংসার ও সমাজ ভাসাতে বাধ্য এই ব্যক্তি আজ এই সমাজের মধ্যে নেই ! সে আজ পরিযায়ী শ্রমিক। দুঃখের বিষয় হলো বহু মানুষ তাদের খারাপ সময়ের মাসিহাকে হারিয়েছে !রাজনৈতিক জীবন ছাড়াও তারিফ মহলদার ব্যক্তিগত জীবনের বহু সাধারণ এখনো ভীষণ আপনজন! এমন দল অন্ত প্রাণ ব্যক্তিটির সঠিক মূল্যায়ণ করলে আখেরে দলেরই লাভ হবে।”


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ