প্রচ্ছদ 

অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিচারপতির পদ ছেড়ে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ায় সুবিধা হবে কার ? বিজেপি না মমতার

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় পাঁচই মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন আর ৭ই মার্চ তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এই নিয়ে তথাকথিত সংবাদ মাধ্যম হইচই করলেও যারা রাজনীতির একটু মারপ্যাঁচ বোঝেন তাঁরা এটা বুঝতে পারছেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পদত্যাগ এবং বিজেপি যোগ আসলে সুবিধা করবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কারণ রাজনীতির ময়দানে পারসেপশন তৈরি করাটা সবচেয়ে বড় বিষয় । ইতিমধ্যেই বাসে ট্রামে ট্রেনে যেখানে যাবেন সেখানে সাধারণ মানুষের মনে একটা প্রশ্নই উঠে আসছে, কলকাতা হাইকোর্টে বসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেসব রায় দিতেন যেসব কথা বলতেন,যেসব পর্যবেক্ষণ করতেন, তার নেপথ্যে ছিল বিজেপি নামক দলের ইন্ধন। আর এই প্রচার যদি একবার মানুষের মধ্যে বিরাজ করতে থাকে তাহলে আর যাই হোক মমতার যে সুবিধা হবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

স্কুল সার্ভিস কমিশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে কি হয়নি সেই বিচার আদালত করবে এটা যেমন ঠিকই এটাও ঠিক যে perception তৃণমূলের বিরুদ্ধে গিয়েছিল তা থেকে তৃণমূল অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পারবে বলে আমাদের মনে হয়েছে। কারণ মনে রাখতে হবে এই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জেলে, তৃণমূলের বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য জেলে, শিক্ষা দফতরের একাধিক আধিকারিক জেলে রয়েছেন। এটা ঠিকই এতদিন জেলে থাকার পরেও সিবিআই কিংবা ইডি এখনো প্রমাণ করতে পারেনি এরা দোষী কিনা।

Advertisement

শুধুমাত্র অজুহাত দেখে জেলে আটকে রাখা হচ্ছে বলে আদালতেও বিচারকরা মন্তব্য করতে শুরু করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার দল যদি প্রচার করতে শুরু করে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বিরোধীদল বিজেপির অংগুলি হেলনে এতদিন ধরে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে রায় দিতেন? তাহলে কিভাবে বিজেপি মোকাবিলা করবে সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যদি এই মুহূর্তে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে না নিত বিজেপি এবং তাকে প্রার্থী করা হবে এটাও যদি প্রচার করা না হত তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্নীতি ইস্যুতে অনেকটাই কোনঠাসা থাকতেন।

আর অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যেসব রায় দিয়েছেন আমাদের মনে হয় তা নিয়ে এবার সুপ্রিম কোর্ট কিংবা ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করার সুযোগ পাবে তৃণমূল কংগ্রেস বা অভিযুক্তরা। আর এই আবেদনের গ্রহণযোগ্যতা যদি কলকাতা হাইকোর্ট নাও দেয় তাহলে শীর্ষ আদালত যে বিচার করতে বসবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নিজের ভাবমূর্তিকে জনগণের কাছে উজ্জ্বল করার জন্য যেসব কথা বিচারপতির চেয়ারে বসে বলেছেন তাও বিচার করে দেখা হবে। আমরা সকলেই জানি সুপ্রিম কোর্টও তাঁর মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এমনকি সংরক্ষণ কোটায় মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে তিনি সিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার পর ডিভিশন বেঞ্চ সেই নির্দেশ নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরে যেভাবে ডিভিশন বেঞ্চের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তাতে এটাই স্পষ্ট হয়েছে নেপথ্যে অন্য কেউ ছিল। আমরা সকলেই জানি এই ঘটনার পর সুপ্রিমকোর্ট দ্রুত শুনানি করেছিল এবং প্রধান বিচারপতি সরাসরি বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে পুরো মামলাটা সুপ্রিম কোর্টে নিয়ে গিয়েছিল। আর এইসব কথা যদি শীর্ষ আদালতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা বলতে পারেন তুলে ধরতে পারেন তাহলে আগামী দিনে বিজেপি যে দুর্নীতি ইস্যুকে সামনে রেখে এই রাজ্যে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে তা যে বুমেরাং হবে সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তাই প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে দলে নিয়ে বিজেপি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিনা স্পষ্ট হবে আগামী লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বের হওয়ার পরে। তবে কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সততা নিষ্ঠা এবং মানুষের প্রতি আন্তরিকতা যথেষ্ট রয়েছে।


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ