প্রজ্ঞা ঠাকুর, পরবেশ বর্মা এবং রমেশ বিধুরিকে প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ দিয়ে বিজেপিকে আরএসএস মুক্ত করতে চাইছেন মোদি? আসল রহস্য?
বাংলার জনরব ডেস্ক : রাহুল গান্ধী ঘোষনা করেছিলেন আর এস এস মুক্ত ভারত গড়ার। তাঁর এই বার্তা দেশের মানুষ কতটা গ্রহণ করবে তা ভবিষ্যৎ বলবে। তবে একটা কথা স্পষ্ট হয়ে ধরা দিয়েছে আরএসএস মুক্ত ভারত করতে রাহুল গান্ধী পারবেন কিনা জানিনা কিন্তু নরেন্দ্র মোদি আরএসএস মুক্ত বিজেপি করতে যে চলেছেন সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কথা নয়। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে যে ১৯৫ জনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে বিজেপি সেখানে ৩৩ জন বিদায় সাংসদকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
এই ৩৩ জন প্রার্থী মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন আরএসএসের প্রাক্তন নেতা। এমনকি আরএসএসের উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রচারক একসময়কার বর্তমান বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের নামও এখনো পর্যন্ত ঘোষণা করা হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি বিজেপি আরএসএস মুক্ত হতে চলেছে! প্রথম প্রার্থী তালিকায় যাদের নাম বাদ গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম তিন সাংসদকে নিয়ে বিগত পাঁচ বছর ধরে রাজনীতিতে চর্চা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এদের মধ্যে হলেন প্রজ্ঞা ঠাকুর, পরবেশ সাহেব সিং বর্মা এবং রমেশ বিধুরি। এই তিন নেতা বিগত পাঁচ বছর ধরে সংবাদের শিরোনামে ছিল এই কারণেই মুসলমান সমাজ সম্পর্কে এদের ঘৃণাপূর্ণ ভাষণ।
মধ্যপ্রদেশের ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর তো মহাত্মা গান্ধীর শহীদ দিবসে তাঁর ফটোতে গুলি চালিয়ে নাথুরাম গডসের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। অর্থাৎ দেশের হিন্দু মুসলমানের সম্প্রীতির প্রতীক মহাত্মা গান্ধীর ছবিতে গুলি চালিয়ে তিনি এদেশের একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছিলেন। এই ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চুপ করেছিলেন। কোন অ্যাকশন নেননি প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যমে সমালোচনা ঝড় বয়ে গিয়েছিল তারপরও প্রধানমন্ত্রী নীরব ছিলেন। আর এই প্রজ্ঞা ঠাকুরের পেছনে ছিল আরএসএস। এবার বিজেপির প্রথম তালিকা থেকে প্রজ্ঞা ঠাকুরের নাম বাদ দিলেন নরেন্দ্র মোদি। কারণ আরএসএস বাদ দিতে পারেনি। ফলে প্রজ্ঞা ঠাকুরের কেন্দ্র ভোপালে প্রার্থী হয়েছেন অলক শর্মা। সুতরাং প্রজ্ঞা ঠাকুর যে এবারের মতো লোকসভায় প্রার্থী হতে পারছেন না তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়।
পশ্চিম দিল্লির সাংসদ পরবেশ সিংহের বিরুদ্ধেও ‘ঘৃণাভাষণ’ এর অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুবার সাংসদ হয়েছেন ব্যক্তিগতভাবে তিনি দিল্লির পশ্চিম অংশে জনপ্রিয় নেতা। কিন্তু তারপরেও এবারের তালিকা থেকে তাকে বাদ দিয়েছে বিজেপি। ২০২২ সালে সংখ্যালঘুদের নিশানা করে ‘কুমন্তব্য’ করেন পরবেশ। তিনি বলেছিলেন, ‘‘যেখানেই ওঁদের দেখবেন, ওঁদের মাথা ঠিক করতে চাইছে, সিধে করতে চাইলে, পুরোপুরি বয়কট করুন। যাঁরা আমাকে সমর্থন করেন, হাত তুলুন।’’ মুসলমান সমাজকে বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন এই বিজেপি সাংসদ এবং তা করেছিলেন তাঁর পেছনে ছিল আরএসএসের সমর্থন। পশ্চিম দিল্লি থেকে দুবার সংসদ হওয়ার নেপথ্যে ছিল আরএসএস এর পূর্ণ সমর্থন। এবার প্রার্থী তালিকা থেকে ছেঁটে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দক্ষিণ দিল্লির সাংসদ রমেশ বিধুরিকে এবার প্রার্থী করল না বিজেপি। সংসদে দাঁড়িয়ে যে ভাষায় মুসলমান সমাজকে আক্রমণ করেছিলেন এবং একজন সাংসদকে আক্রমণ করেছিলেন তা এক কথায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু পেছনে ছিল আরএসএস তাই সংসদের স্পিকারের ক্ষমতা হয়নি ঘৃণা ভাষণ সংসদে দাঁড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার। নরেন্দ্র মোদি, প্রার্থী তালিকা থেকে নাম কেটে দিয়ে প্রমাণ করলেন আরএসএস নয়,আমিই বিজেপির চালিকাশক্তি।
প্রসঙ্গত নরেন্দ্র মোদি যেভাবে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন তা থেকে এটাই স্পষ্ট তিনি বিজেপিকে এখন আরএসএস মুক্ত করতে চাইছেন। যদিও কতটা তিনি সফল হবেন তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে কারণ আরএসএস ছাড়া বিজেপির একার পক্ষে চলা কোনভাবেই সম্ভব নয়। যদিও নরেন্দ্র মোদি প্রজ্ঞা ঠাকুর পারবেশ বর্মা এবং রমেশ বিধুরীকে কোনভাবেই এই ধরনের মন্তব্য করার জন্য কোন সময়ই ধমকেছেন কিংবা সতর্ক করেছেন এমন কোন খবর আমাদের জানা নেই। তবে নরেন্দ্র মোদি যে স্টাইলে এবারের প্রার্থী তালিকা থেকে এই তিনজনের নাম বাদ দিয়েছেন তা এক কথায় অভিনব বলা যেতে পারে। কিন্তু বাদ দিলেই তো হবে না দেশের সংখ্যালঘু দলিত এবং আদিবাসী সমাজের কাছে নরেন্দ্র মোদিকে এমন এক নজির তৈরি করতে হবে যাতে তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা আরো বেশি বৃদ্ধি পায়।