বাংলার জনরব পালন করল ভার্চুয়াল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস
সংবাদদাতা বাংলার জনরব: গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সন্ধ্যায় নিউজ পোর্টাল বাংলার জনরবের সাহিত্য বিভাগ উদযাপন করল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আলোচনা, কথায়, কবিতায়, গল্পে আয়োজিত প্রায় দু ঘন্টার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপিকা ড. সঙ্গীতা সান্যাল, কলকাতার বিশিষ্ট কবি সুচরিতা হার চক্রবর্তী, বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কাবেরি চক্রবর্তী, বর্ষীয়ান কবি সুভাষচন্দ্র ঘোষ এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক সিরাজুল ইসলাম ঢালী।
অনুষ্ঠানের সূচনায় প্রারম্ভিক বক্তব্যে বাংলার জনরবের সম্মানীয় সম্পাদক সেখ ইবাদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরের মতো এবছরও বাংলার জনরব আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণের আয়োজন করেছে। তিনি বলেন, মাতৃভাষার জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি গুরুত্ব অপরিসীম। আরও বলেন পৃথিবীতে জাতি ও ধর্মের ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছে, কিন্তু একমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। যার বিনিময়ে প্রাণ দিতে হয়েছে আবুল বরকত, রফিক, সালাম, সফিউরদের মতো অনেক ভাষা শহীদদের দের। বিশ্বে আর দ্বিতীয় কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের এভাবে জন্ম হয়নি। তাই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের বিনিময়ে প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক বাংলা মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্ব সারা বিশ্বের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণীয়।
বাংলার জনরবের সাহিত্য সম্পাদক তথা কথা সাহিত্যিক সেখ আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় ‘বাংলা সাহিত্যে একুশে ফেব্রুয়ারি’ বিষয়ক আলোচনায় বর্ষিয়ান কবি সুভাষচন্দ্র ঘোষ তাঁর মূল্যবান বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে বাংলাভাষার মর্যাদা রক্ষায় ‘একুশে ফেব্রুয়ারি’র গুরুত্ব চিরস্মরণীয় প্রতিটি বাঙালির কাছে। যদিও ইংরেজি ভাষা এখন গ্রাস করেছে অধিকাংশ বাঙালির মননকে। যা পরিতাপের।এমনকি বাংলা ভাষা হিসেবে আমরা বেশকিছু ইংরেজি শব্দ বেমালুম ব্যবহার করে চলেছি ব্যবহারিক জীবনে। তিনি মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কীয় একটি স্বরচিত কবিতা পরিবেশন করে সমৃদ্ধ করেন আলোচনাকে।
এদিন অন্যতম বক্তা অধ্যাপিকা ড. সঙ্গীতা সান্যাল ‘ সাহিত্যে একুশে ফেব্রুয়ারি’ গুরুত্ব সম্পর্কীত আলোচনায় বাংলাদেশের যশস্বী সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের কালজয়ী উপন্যাস ‘নীল ময়ূরের যৌবন’ নিয়ে আলোচনা করেন। মূলতঃ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে পাক শাসকের বিরুদ্ধে ভাষা শহীদদের আন্দোলন কিভাবে প্রভাবিত করেছিল সেটাই ওই উপন্যাসের প্রতিপাদ্য বিষয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি ভাষা শহীদদের আন্দোলনে তাৎপর্য ব্যাখা করেন বিভিন্ন কবির বিভিন্ন কবিতার পংক্তি উল্লেখ করে।
এই সময়ে পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কবিদের মধ্যে অন্যতম সুচরিতা হার চক্রবর্তী তাঁর আলোচনায় ‘শহীদ’ শব্দটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করেন উর্দু, আরবি ও সংস্কৃত ভাষার উল্লেখ করে। তিনি বলেন বল্গাহীন বিজ্ঞাপনের যুগে বিশুদ্ধ বাংলাকে কলুষিত করছে একশ্রেণীর বিজ্ঞাপনদাতারা, যা অত্যন্ত পরিতাপের।
বাংলা সাহিত্য চর্চায় নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তি তথা সাহিত্য সংস্থা ‘মুক্ত বলাকা’র সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ঢালী তাঁর বক্তব্যে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পুরোভাগে যাদের অবদান সেই আবুল বরকত, আব্দুস সালাম,মুহম্মদ রফিক,শফিউর রহমানদের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরেন। তিনি মনে করেন
মাতৃভাষা বাংলার মাহাত্ম্য আগে যেমন ছিল ভবিষ্যতেও তেমন থাকবে। বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি অনুগল্প ‘ভাষাহীনার বিয়ে’ পাঠ করে শোনান।
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক কাবেরি চক্রবর্তী আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁর ব্যতিক্রমী বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে অগণিত বাংলাভাষী থাকা সত্ত্বেও বাংলাভাষা এখন নিছক এক আঞ্চলিক ভাষা ছাড়া কিছুই নয়। বাংলাভাষাকে পুণরায় নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে হলে হলে জোর দিতে হবে শিশু কিশোর সাহিত্যের ওপর।
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত আলোচকদের বক্তব্যের সপক্ষে সহমত পোষণ করেও সঞ্চালক সেখ আব্দুল মান্নান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় একদিন বাংলাভাষা প্রিয় বাঙালিরা যেমন পাক শাসকদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে সামিল হয়েছিল হয়ত অদূর ভবিষ্যতে আমাদের দেশের দিকে দিকে প্রশাসনিক উদাসীনতায় বাংলাভাষার মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়ে চলেছে তার পুনরুদ্ধারে একদিন হয়ত প্রশাসনের বিরুদ্ধে তেমনই গণ আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে।