দিল্লি-হরিয়ানায় চলমান কৃষক সংগ্রামের সমর্থনে কলকাতায় প্রতিবাদী সমাবেশ
বাংলার জনরব ডেস্ক : দিল্লি ও হরিয়ানা সীমান্ত চলমান কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে ‘সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চ’ এর উদ্যোগে কলকাতায় প্রতিবাদী সমাবেশ হয়ে গেল। শনিবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মতলায় টিপু সুলতান মসজিদের পিছন দিকে স্টেটসম্যান অফিসের সামনে এই সমাবেশে বিভিন্ন গণসংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন সংবিধান বাঁচাও দেশ বাঁচাও মঞ্চের আহ্বায়ক ছোটন দাস, বর্ণালী মুখার্জী, হকার সংগ্রাম সমিটির দেবাশিস দাস, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের মুহাম্মদ কামরুজ্জামান, জামাআতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শাদাব মাসুম, ছাত্রনেতা অত্রি ভট্টাচার্য প্রমুখ।
সবাই তাঁদের বক্তব্যে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি নৈতিক ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমর্থন জানান। বলেন, বছর দুয়েক আগে উত্তরপ্রদেশ সহ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে লাগাতার চলমান কৃষক আন্দোলন বন্ধ করতে কৃষকদের দাবি মেনে তিনটি আইন বাতিল প্রত্যাহার করে নিয়েছিল কেন্দ্র সরকার। কিন্তু তাদের মূল যে দাবি ছিল, সেই ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি) আজও বাস্তবায়ন করেনি সরকার। দেশের স্বনামধন্য কৃষিবিজ্ঞানী তথা সবুজ বিপ্লবের রূপকার ড. স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেশের কৃষির উন্নয়নে সেই স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশগুলো কার্যকর না করে ঠাণ্ডাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্র সরকারল চাইছে কৃষকরা যাতে তাদের ঘাম-রক্ত এক করে ফলানো শস্যের ন্যায্য দাম না পায়। তারা যেন কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর কাছে মাথানত করে থাকে। নরেন্দ্র মোদি সরকার কর্পোরেট-বান্ধব সরকার। এরা জনকল্যাণকামী নয়, এরা কৃষকের স্বার্থ বিসর্জন দিতে বিন্দুমাত্র কুণ্ঠাবোধ করে না। অথচ ভারতবর্ষ কৃষিপ্রধান দেশ। বক্তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিজেপি এবং তাদের নীতিনির্ধারক আরএসএসকে ব্রিটিশের তাঁবেদার বলে তুলোধনা করেন। নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিগত দশ বছরের কাজকর্মের খতিয়ান তুলে ধরে বলেন, এই সরকার আপাদমস্তক দেশবিরোধী ও জনবিরোধী। এই সরকারের আমলে কোন একটা প্রকল্প দেশ ও দশের সার্বিক উন্নয়ন করেনি। বিজেপি ও আরএসএস ব্রিটিশের মতোই ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি নিয়ে চলেছে। শুধু জাতিপাতের ভিত্তিতে মানুষের মধ্যে ধর্মীয় বিভাজন ও মেরুকরণ তীব্র করে নিজেদের ভোটবাক্স ভর্তি করার লক্ষ্যে শুরু থেকেই পাঁয়তারা কষে চলেছে।
তাঁরা আরও বলেন, রামমন্দির থেকে এনআরসি, সিএএ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি ইত্যাদি ইস্যুগুলি বৈচিত্রময় এই দেশে খুবই স্পর্শকাতর। তাই এসব বিষয় কার্যকর করতে হলে সমাজের সব স্তরের, সব ধর্মের মানুষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সহমতের ভিত্তিতে পদক্ষেপ করা উচিত। কিন্তু সাম্প্রদায়িক নরেন্দ্র মোদি সরকার কারও তোয়াক্কা না করে ক্ষমতার দম্ভ ও আস্ফালন দেখাতে একতরফাভাবে এনআরসি, সিএএ, ইউসিসি-র মতো বিষয়গুলোকে সামনে আনার চেষ্টা করছে। যদিও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের প্রতিবাদের মুখে পড়ে আজও তারা এসব বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু নির্বাচন এলেই এসব ইস্যুকে ঝুলি থেকে বিড়ালের মতো বের করে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেয়।
তাই বিজেপি ও তাদের মন্ত্রণাদাতা আরএসএস-কে দেশের জন্য সবথেকে বড় বিপদ বলে মন্তব্য করেন বক্তাগণ। তাঁরা বলেন, এই ফ্যাসিবাদী সরকারকে সবার আগে বিদায় করতে হবে। এরা শুধু দেশের জন্য বিপদই নয়, এরা আপদও। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মোদি-শাহদের সরকারকে সমূলে উৎখাত না করতে পারলে দেশের সর্বনাশ হতে যেটুকু বাকি আছে, তাও আর রোখা যাবে না। তাই নিজেদের মধ্যে ইস্যুভিত্তিক যেসব ছোটখাট মতবিরোধ আছে, সেসবকে দূরে সরিয়ে রেখে দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।