মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা-ভাবনা : যশ-খ্যাতির পেছনে দৌড়াবে, নাকি নিজের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দেবে! সেটা আগে ঠিক করো, ইলেভেনের বিষয় নির্বাচনে সুবিধে হবে
মাধ্যমিকের পর পড়াশোনা-ভাবনা : যশ-খ্যাতির পেছনে দৌড়াবে, নাকি নিজের ভালোলাগাকে গুরুত্ব দেবে! সেটা আগে ঠিক করো, ইলেভেনের বিষয় নির্বাচনে সুবিধে হবে
নাফিসা ইসমাতের প্রতিবেদন :কালনা মহারাজা হাই স্কুলের ছাত্র সুদীপ্ত প্রশ্ন রেখেছিল, ইতিহাস-ভূগোল তার ভালো লাগার বিষয়, কিন্তু মাধ্যমিকে ভলো পরীক্ষা দিয়েছে অংক এবং অন্যান্য বিজ্ঞান বিষয়ে। বাড়ি থেকে বলা হচ্ছে বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার জন্য। কী করবে সে? বারাসাতে বাড়ি ইংরেজি শিক্ষকের কন্যার ইচ্ছে বাবার বিষয় নিয়ে পড়বে। কিন্তু সেখানেও বাধ সাধছেন বাবা-মা। দ্যাখ না, বিজ্ঞানে চান্স পেয়ে গেলে নিট পরীক্ষায় বসতে পারবি, একবার অন্তত কন্যাকে NEET-এ বসিয়ে পরখ করিয়ে নেবে , এ’ তাদের বহুদিনের মনোগত অভিলাষ।
এ সবের উত্তর দিচ্ছিলেন গতবছর উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে প্রথম হওয়া শুভ্রাংশু সর্দার। সদ্য শেষ হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের জন্য অনুসন্ধান কলকাতার এক অনলাইন সান্ধ্য আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন তিনি।
তিনি বলেন, তোমার যদি ইতিহাস কিংবা ইকনমিক্স ভালো লাগে, তাহলে তাই নাও। সেটায় কেউ আর্টস বলুক বা সায়েন্স বলুক, তা নিয়ে অকারণ ব্যতিব্যস্ত হয়ে লাভ নেই। অবশ্য তোমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যশ-খ্যাতির পেছনে তুমি দৌড়াবে, নাকি তোমার ভালোলাগা প্যাশন-কে গুরুত্ব দেবে! এই সিদ্ধান্তের উপর হবে তোমার বিষয় নির্বাচন। বিষয় নির্বাচন করতে নিজেকে চেনা খুবই জরুরি। তার জন্য ক্রিয়েটিভ এনালিসিস খুবই দরকার লাগে। তোমাকে জানতে হবে তোমার নিজের মধ্যে কোন দিকে ভালো লাগা, দক্ষতা আছে। এই প্রসঙ্গে শুভ্রাংশ বলেন, ঈশ্বর প্রতিটি মানুষকে বিশেষ বিশেষ দক্ষতা দিয়েছেন। আমাদের প্রয়োজন সেটা জেনে নেওয়া এবং আত্মনির্ভরতার সঙ্গে পথ চলা। এতে নিজের সৃজনশীলতা বাড়ে। সৃজনশীল মানুষেরাই সমাজের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেন। আমাদের উচিত ক্রিয়েটিভ মাইন্ড কখনও যেন বন্ধ না হয়, সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রাখা এবং সময় উপযোগী দৃঢ় সিদ্ধান্তে অটল থাকা।
এদিন আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড.মানস প্রতিম দাস, ড.দেবব্রত মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী মতিয়ার রহমান খান, প্রধান শিক্ষক শেখ আলী আহসান, আইনজীবী শেখ মেহেবুবার রহমান, চিকিৎসক কুনাল কান্তি মজুমদার, শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল, রাশি বিজ্ঞানের কৃতী শুভজিৎ মাইতি প্রমুখ।
মাধ্যমিকের পর বিষয় নির্বাচনে কোন কোন দিক বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে, আগামী সেশন থেকে শুরু হয়ে যাবে ক্লাস ইলেভেন-টুয়েলভ এর জন্য সেমিস্টার পদ্ধতি, তার জন্য কোন কোন দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে, ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে টার্গেট নেওয়া এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে গড়ে তোলার পথ ও পদ্ধতি এবং কর্মমুখী পড়াশোনা কেমন করে নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটায়– এ সমস্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এদিনের এই আয়োজনে। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর পরই ছাত্র-ছাত্রীরা এই আলোচনায় অংশ নিয়ে খুবই উপকৃত হয়েছে বলে জানান অভিভাবকেরা। অনুসন্ধান কলকাতার এই ধরনের আরো আলোচনা হোক সে কথাও বলেন তাঁরা। বিশেষ করে আর্টস বিষয়ে পড়ার পর কোন কোন দিকে যাওয়া যেতে পারে, আইন নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা ও তার জন্য প্রস্তুতি কিভাবে নিতে হয়।
এ দিনের আলোচনায় সঞ্চালনা করেন শিক্ষক নায়ীমুল হক।অনুষ্ঠানের শুরুতেই জীবনমুখী গানের কলি আলোচনায় গতি সঞ্চার করে। নদীর মত জীবন প্রবাহিত হোক, ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা চিন্তা বাড়িও না। অসম থেকে এই সংগীত পরিবেশন করেন ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক ড নিপম কুমার সাইকিয়া।