দিল্লি চলো অভিযানে শরিক প্রতিবাদী কৃষকদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রেল অবরোধ, শুক্রবার ভারত বনধের ডাক দিল কৃষকরা!
বিশেষ প্রতিনিধি : পাঞ্জাব হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের ৩৫০ টি কৃষক সংগঠনের ডাকে দিল্লি চলো অভিযান কে ঘিরে দিল্লির সীমান্ত কার্যত যুদ্ধং দেহি রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। একদিকে পুলিশের সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে দিল্লি চলো অভিযান রুখে দেওয়ার চেষ্টা অন্যদিকে কৃষক সংগঠন গুলোর অনমনীয় ভূমিকা কার্যত মঙ্গলবার এর পর বুধবারও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, দিল্লির সীমান্তে। এদিকে হরিয়ানা দিল্লির সীমান্তে কৃষকদের উপরে কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আগামীকাল সমগ্র পাঞ্জাব জুড়ে রেল অবরোধের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠনগুলি। দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত এই রেল অবরোধ চলবে বলে সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন। অন্যদিকে সারা ভারত কৃষক ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত জানিয়েছেন কৃষকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১৬ই ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সমগ্র দেশ জুড়ে বনধ পালন করা হবে।
বুধবার সকাল ৯টা থেকে আবার সক্রিয় ভূমিকায় দেখা গেল প্রতিবাদী কৃষকদের। ‘দিল্লি চলো’ যাত্রা শুরু করবেন তাঁরা। কৃষকদের আটকাতে তৎপর পুলিশ-প্রশাসন। সিঙ্ঘু সীমান্তে মাইকিং শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি পুলিশের ঘোষণা, ‘‘কৃষকেরা ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হবে এবং লাঠিচার্জ করা হবে।’’
অন্যদিকে, হরিয়ানার অম্বালা, কুরুক্ষেত্র, কাইথাল, জিন্দ, হিসার, ফতেবাদ এবং সিরসা জেলার ইন্টারনেট পরিষেবা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
কৃষকেরা রণমূর্তি ধারণ করলে তাঁদের আটকাতে লঙ্কাগুঁড়ো ব্যবহার করা হবে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। দিল্লি পুলিশের ঘোষণা, ‘‘কৃষকেরা সীমানা পার করে আসার চেষ্টা করলে আমরা তাদের মোকাবিলা করব। দিল্লির পরিস্থিতি যাতে ঠিক থাকে, তাই তাঁদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে।’’
দিল্লির টিকরি সীমানার দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে যানবাহন চলাচল। কৃষকদের বিক্ষোভের দ্বিতীয় দিনে হরিয়ানার অম্বালার সিঙ্ঘু সীমানায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। বাহাদুরগড়ে থাকা কৃষকেরা বুধবার ভোর বেলাতেই ‘দিল্লি চলো’ যাত্রার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। কৃষক বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সিঙ্ঘু সীমান্তে বুধবার সকাল থেকেই বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। নামানো হয়েছে র্যাফ। গাজিপুর সীমান্তে বহুস্তরীয় ব্যারিকেড তৈরি করেছে পুলিশ। কৃষকদের দাবি মেনে না নেওয়া হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি কৃষকদের ‘ভারত বন্ধ’ পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, দিল্লি-সোনিপত লাগোয়া সিঙ্ঘু এবং দিল্লি-বাহাদুরগড় লাগোয়া টিকরি সীমানায় যানবাহন চলাচল অবরুদ্ধ। বহু মানুষ রাস্তাতেই আটক পড়েছেন।নিজেদের অধিকার বুঝে নিতেই তাঁরা রাস্তায় নেমেছেন বলে দাবি কৃষকদের। পঞ্জাবের খন্না থেকে আসা কৃষক অমনদীপ কৌরের কথায়, ‘‘আমরা ফসলের ন্যায্য সহায়ক মূল্যের আইনি নিশ্চয়তা, লখিমপুর-খেরিতে মৃত্যু হওয়া ভাইদের ক্ষতিপূরণ এবং ঋণ মকুবের দাবিতে পথে নেমেছি। কৃষকদের পেনশন পাওয়া উচিত। আমরা আমাদের অধিকারের জন্য এসেছি।’’
আবার ধুন্ধুমার পঞ্জাব-হরিয়ানার শম্ভু সীমানায়। বিক্ষুদ্ধ কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করতে আবার কাঁদানে গ্যাস ছুড়ল পুলিশ। আন্দোলনকারীদের প্রবেশে বাধা দিতে দিল্লির সিঙ্ঘু সীমানার কাছের একটি গ্রামে রাস্তাও খুঁড়ে দিল প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার পঞ্জাব জুড়ে রেল অবরোধের ডাক দিল পঞ্জাবের কৃষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান ফার্মার্স ইউনিয়ন (উগ্রাহা)’। দিল্লি যাওয়ার পথে কৃষকদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়া এবং লাঠিচার্জের প্রতিবাদে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত রেল অবরোধের ডাক দেওয়া হয়েছে।