দেশ 

হলদোয়ানি পরিদর্শন করে কারফিউ প্রত্যাহার এবং মুসলিমদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাল মুসলিম সংগঠনগুলোর যৌথ প্রতিনিধি দল

শেয়ার করুন

হলদোয়ানি পরিদর্শন করে কারফিউ প্রত্যাহার এবং মুসলিমদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানাল মুসলিম সংগঠনগুলোর যৌথ প্রতিনিধি দল

জামাআতে ইসলামী হিন্দ, জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ-সহ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠনের যৌথ প্রতিনিধি দল উত্তরাখণ্ডের হলদোয়ানি পরিদর্শন করল। সেখানকার উদ্ভূত পরিস্থিতি সরজমিন খতিয়ে দেখে সাংবাদিকদের তারা বলেন, আদালতে বিচার চলাকালে ধর্মীয় স্থাপনা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেওয়াটা প্রশাসনের অদূরদর্শিতা, হঠকারিতা ও বিদ্বেষী মনোভাব প্রকট করে। এবং এখানে আইনকে খুব বিশ্রীভাবে অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। ফলে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভাবাবেগে গভীর আঘাত লাগে। তারওপর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সমাজবিরোধীরা ই্স্যুটিকে হাইজ্যাক করে নিয়ে থানা ও পুলিশের ওপর হামলা চালায়।

Advertisement

সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে প্রতিনিধিদলে ছিলেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মালিক মুতাসীম খান, সম্পাদক মাওলানা শফি মাদানী, সহ-সম্পাদক লায়েক আহমেদ খান, জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা হাকিমুদ্দিন কাশমি, মাওলানা ঘায়ুর কাসমি প্রমুখ।

প্রতিনিধি দল এসডিএম অফিসে গিয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করে হলদোয়ানির উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং অবিলম্বে মুসলিম যুবকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, হুমকি ও হয়রানি বন্ধের দাবি জানান। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন মহকুমা শাসক-সহ পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পুলিশের গুলিতে নিরীহদের প্রাণহানির ঘটনায় শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। সরকারি অধিকর্তাদেরকে তারা জানান, প্রশাসনের প্রতি সহিংসতা অনভিপ্রেত. এর রাজনীতিকরণ বন্ধ করতে হবে এবং কায়েমি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীরা যাতে এহেন পরিস্থিতি থেকে সংকীর্ণ রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে – তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন জামাআত নেতৃত্ব।

এসডিএম-সহ পুলিশ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ প্রতিনিধিদলের তরফে মুসলিমদেরকে সংযম ও সহনশীলতার আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি তারা এও বলেন, পরিস্থিতির যাতে আরও অবনতি না হয়, তার দায়িত্ব প্রশাসনের। প্রতিনিধিদল সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক এবং কমিশনারের সঙ্গেও শীঘ্রই বৈঠক করবেন বলে জানান।

উল্লেখ্য, হলদোয়ানির হিংসা কবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো ঘুরে দেখার জন্য এসডিএম-এর কাছে অনুমতি চেয়ে তারা বলেছেন, এই সবুজ সংকেত পেলে রাজ্য সরকার ও প্রশাসনের সদিচ্ছার প্রমাণ পাওয়া যাবে এবং সর্বস্তরে ইতিবাচক বার্তা যাবে। ফলে স্থানীয় মানুষের মন থেকে আশঙ্কা, উৎকণ্ঠা ও ভয়ভীতি কমবে। এ প্রসঙ্গে এসডিএম বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হলে তিনি এর অনুমতি দেবেন। এদিকে, জনজীবনকে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরাতে যতখানি সম্ভব কারফিউ শিথিল করারও দাবি জানিয়েছেন তারা। পাশাপাশি তারা প্রশাসনকে বলেছেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের বদনাম করতে সহিংসতায় জঘন্য ভূমিকা নিয়েছিল কিছু সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতি।

যৌথ প্রতিনিধিদলের তরফে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আরও যেসব দাবি-দাওয়া জানানো হয়েছে, সেগুলো হল:-

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরবরাহ করা। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষ ও দিনমজুরদের জন্য, যারা সহিংসতার কারণে গুরুতর আঘাত পেয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রীর জোগান স্বাভাবিক রাখা, আর যারা সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন তাদের জন্য অবিলম্বে আর্থিক ক্ষতিপূরণ বা অনুদান ঘোষণা করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিপুল সংখ্যক গরিব মানুষের কাছে খাদ্যবস্তু ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে অনুমতি দিতে হবে। সর্বোপরি বিশৃঙ্খলা ও প্রকাশ্য গুলিবর্ষণে জখম মানুষদের চিকিৎসার জন্য অবিলম্বে হাসপাতাল ও ফার্মেসি চালু করার দাবিও জানিয়েছেন মুসলিম সংগঠনগুলোর যৌথ প্রতিনিধিদল।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ