দেশ 

মুসলিমরা সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চাই: সৈয়দ সাদাতুল্লাহ হুসায়েনি

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি :  দেশের মুসলিমদের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আসছে, সে সবের মোকাবিলায় নিজেদেরকে সার্বিকভাবে আপডেট ও উন্নত করতে আহ্বান জানালেন জামাআতে ইসলামী হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি সৈয়দ সা’দাতুল্লাহ হুসায়েনি। তাঁর মতে, একমাত্র এর মধ্যেই মুসলিমদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের দীর্ঘমেয়াদী সমাধান সম্ভব। শুক্রবার এক অনলাইন লেকচারে তিনি বলেন, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এখন মুসলিমদের সামনে নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জ আবির্ভূত হতেই থাকবে।   তাঁর কথায়, যারা হীন রাজনৈতিক মতাদর্শের স্বার্থে সাম্প্রদায়িকতাকে প্রোমোট করছে, তারা আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্লজ্জভাবে কলুষিত করছে। পরিণামে মুসলমানদের মধ্যে ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। যদিও আমাদের হতাশ হওয়া বা ভয় পাওয়া উচিৎ নয়। এখন সময়ের দাবি হল, এসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে আমাদেরকে লক্ষ্যে অবিচল থেকে দৃঢ় সংকল্প নিতে হবে, সাহস অর্জন করতে হবে এবং সর্বোপরি ধারাবাহিক কাজ করে যেতে হবে। কারণ, এই প্রথম নয়, ভারতীয় মুসলিমদের সামনে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ বা সমস্যা বরাবরই ছিল।

আমীরে জামাআত সা’দাতুল্লাহ হোসায়েনি এদিন আরও বলেন, ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ থেকে ১৯৪৭ সালে দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তি পর্যন্ত, দেশভাগ এবং তার আগে-পরেও অনেক পরীক্ষামূলক ঘটনা আমাদের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেইসব চ্যালেঞ্জ অতিক্রম এবং মোকাবিলা করেছি। তাই আমাদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। এর শিকড় নিহিত রয়েছে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, ইসলামের শাশ্বত শিক্ষা ও নীতিমালার মধ্যে।

Advertisement

জুলুম, নিপীড়ন এবং শোষণের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। তাই আমরা টার্গেট হচ্ছি এবং মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছি। আমাদের উপলব্ধি করতে হবে, এসব চ্যালেঞ্জের কোনও চটজলদি সমাধান হয় না। এগুলো দীর্ঘমেয়াদী ব্যাপার। তাই আমাদের পরিচিতি গণ্ডির মধ্যে অবিলম্বে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সমসাময়িক চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করার লক্ষ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ছয়টি পয়েন্ট আমি প্রস্তাব করছি:

১) প্রতিবেশি তথা দেশবাসীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। মুসলিম ও ইসলাম সম্পর্কে তাদের মন থেকে ভুল ধারণার অবসান ঘটাতে হবে এবং একইসঙ্গে ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে।

২) মুসলিম সম্প্রদায়ের সার্বিক মানোন্নয়নে সচেষ্ট হতে হবে। শিক্ষা এবং আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের সহজাত দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। সর্বোপরি মুসলিমদের নৈতিক চরিত্রে বদল আনতে হবে এবং ইসলামের প্রতি সর্বাত্মক অনুগত হতে হবে।

৩) সত্যিকার মুসলমান হিসেবে আমাদেরকে খায়রা উম্মাহ বা উৎকৃষ্ট জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে এবং সেই মোতাবেক আমাদের সামাজিক ভূমিকা পালন করতে হবে।

৪) জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দুর্বল, অনগ্রসর ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে, এবং তাদেরকে ইনসাফ পাইয়ে দিতে সক্রিয় হতে হবে। আমরা সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে অন্যায়-অবিচারের বিরোধিতা ও প্রতিরোধ করব।

৫) সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে হবে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও সদর্থক উদ্দেশ্যে। উদ্বেগ, আশঙ্কা ও হতাশা প্রকাশ করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবেন না। সত্যিকার যেসব ইস্যু মানুষের ক্ষতি করছে, বিড়ম্বনায় ফেলছে, সেসব ব্যাপারে দেশবাসীর বিবেক জাগ্রত করতে, ইসলাম সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং উম্মাহকে সাহস জোগাতে সোশ্যাল মিডিয়া বা বিকল্প মিডিয়াকে ব্যবহার করুন।

৬) আসন্ন লোকসভা নির্বাচন আমাদের দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অবশ্যই শান্তিপ্রিয় ও ন্যায়পন্থী প্রার্থীদেরকে সমর্থন করতে হবে। সমস্ত ভোটার যাতে সুষ্ঠুভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সঠিক পথে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।

আসুন, আমরা এই চ্যালেঞ্জিং সময়ের অবসান ঘটিয়ে গণতান্ত্রিকভাবে এক নতুন যুগের সূচনা করি। পুঞ্জিভূত ক্রোধ ও হতাশাকে গঠনমূলক শক্তিতে পরিণত করি, যা আমাদের বর্তমান অবস্থা ও পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন করতে সহায়ক হবে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ