কলকাতা প্রচ্ছদ 

মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সমস্ত পরিকল্পনা ব্যর্থ মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ, দায় এড়াতে কী পারে পর্ষদ?

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : বজ্র আঁটুনি শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে গেল। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সমস্ত পরিকল্পনাকে ব্যর্থ করে দিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনেই বাংলা প্রশ্ন পত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ সামনে এলো। জানা গেছে, পরীক্ষা শুরুর কিছুক্ষণ পরেই প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলেও পরীক্ষার শেষে দেখা যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে আসল প্রশ্নপত্র হুবহু মিলে গেছে। এত নিরাপত্তার কড়াকড়ি, এত গল্প পরীক্ষার সময় এগিয়ে আনার পরেও কিভাবে প্রশ্নপত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় বেরিয়ে গেল তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

নিয়মমাফিক মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে বেশ খানিকটা গর্বের সঙ্গে বলা হচ্ছে যিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন তাকে ধরা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলার সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন এটা শুধুমাত্র অজুহাত এই অজুহাত দেখিয়ে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ তার দায় এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। প্রথম প্রশ্ন মালদা জেলার দুই পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ করেছে তারা কিভাবে মোবাইল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢুকতে পারলেন সেই প্রশ্নের উত্তর কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি দেননি। এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চায় পশ্চিমবাংলার সাধারণ মানুষ ১০ লক্ষ ছেলে মেয়ের পরীক্ষা কে কেন্দ্র করে যে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষ তার দায় কি এড়াতে পারেন।

Advertisement

দ্বিতীয়তঃ পরীক্ষা কেন্দ্রের ভিতরে কোন রকম ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র নিয়ে ঢোকা নিষেধ ছিল তাহলে পরীক্ষার্থীরা কিভাবে ঢুকলেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ দাবি করেছিল প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রে নাকি সিসিটিভিতে মুড়ে রাখা হয়েছে সিসিটিভি দিয়ে যদি মোরে রাখা হয়ে থাকে তাহলে একজন পরীক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের ছবি তুললেন সেটা খেতে সেই প্রশ্নপত্রের ছবি তুলে ভাইরাল করালেন সেই ছবি কেন সিসিটিভিতে উঠে এলো না!

অর্থাৎ, আসল প্রশ্নপত্রের ছবিই কেউ তুলে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনায় পরীক্ষা শেষের এক ঘণ্টার মধ্যে দোষীদের চিহ্নিত করা গিয়েছে বলে জানিয়েছে পর্ষদ। মালদহের দুই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।

প্রশ্নপত্রগুলি এ বছর এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছিল, যাতে কেউ তার ছবি তুললে তাঁকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। প্রশ্নপত্রে প্রত্যেক প্রশ্নের পাশে একটি করে কিউআর কোড ছেপেছিল পর্ষদ। কেউ ছবি তুললে সেই কিউআর কোডের সূত্রেই ছবিটি কোথা থেকে তোলা হয়েছে, তা চিহ্নিত করা সম্ভব বলে জানিয়েছিল পর্ষদ। রাজ্যের যে কোনও প্রান্ত থেকেই প্রশ্নের ছবি তোলা হোক না কেন, পর্ষদ তা জানতে পারবে বলে দাবি করেছিল। সেই ফাঁদেই পা দিয়েছেন মালদহের দুই পরীক্ষার্থী।

পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী, শুক্রবার প্রতিটি পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের আগে থেকেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, প্রশ্নের ছবি তোলা নিষিদ্ধ। যদি কেউ ছবি তোলেন, তবে তাঁকে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়ার কথা পরীক্ষাকেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের। সেই মতোই পর্ষদ থেকে নির্দেশিকা এসেছিল। কলকাতার বেশ কয়েকটি স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, শিক্ষক, শিক্ষিকারা পরীক্ষার্থীদের পর্ষদের নির্দেশিকা জানিয়ে পরীক্ষা শুরুর আগেই সতর্ক করেছেন।

শুক্রবার মাধ্যমিকের প্রথম পরীক্ষা শেষ হয়েছে বেলা ১টায়। দুপুরে পর্ষদ সাংবাদিক বৈঠক করবে। তার আগে পর্ষদের সভাপতি রামানুজ গঙ্গোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মালদহের দুই পরীক্ষার্থী এই কাজ করেছে। ইতিমধ্যেই তাঁদের শনাক্ত করা গিয়েছে। তাঁদের পরীক্ষা সম্পূর্ণ বাতিল হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিকের রেজিস্ট্রেশনই বাতিল করে দিয়েছে পর্ষদ।

এ বছর প্রায় ১০ লক্ষ পরীক্ষার্থী মাধ্যমিক দিচ্ছেন। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরীক্ষা চলবে। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বেশ কিছুটা এগিয়ে আনা হয়েছে। এ বছর পরীক্ষা শুরু হচ্ছে প্রতি দিন সকাল ১০টা থেকে। ৯টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে প্রশ্নপত্র পেয়ে যাচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। প্রশ্নপত্রে কিউআর কোড বসানোর পদ্ধতি এ বছর প্রথম চালু করা হয়েছে।

মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যাই বলুক না কেন তাদের দায় এড়াতে পারেন না। প্রশ্ন ফাঁস রুখতে এত তোড়জোড় থাকলেও শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন ফাঁস কেন হল সেটাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। সামনে লোকসভা নির্বাচন বিরোধী দলকে সুযোগ করে দেয়ার জন্যই এ কাজটা করা হয়েছে বলে একটা মহল মনে করছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাবমূর্তি নিয়ে খেলার অধিকার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তৃপক্ষদের নেই এটা তাদের মনে রাখা উচিত।

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ