অন্যান্য কলকাতা 

লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল জোট না করাটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত!

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সেখ ইবাদুল ইসলাম : তৃণমূল কংগ্রেস আগামী লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করবে না বলে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা এক কথায় আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, লোকসভা নির্বাচনটা হলো জাতীয় স্তরের লড়াই। আর জাতীয় স্তরে বিজেপির একমাত্র বিকল্প হচ্ছে কংগ্রেস। তাই যে সকল দলের মধ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে লড়াই করার ইচ্ছা আছে তারা জোট করার ক্ষেত্রে কোনো একগুয়ে মানসিকতা দেখাবেন না, এটা প্রত্যাশা করা যেতেই পারে। সমগ্র দেশজুড়ে কংগ্রেসের কর্মীরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও রাহুল গান্ধী কিংবা সোনিয়া গান্ধীর প্রত্যাশা হচ্ছে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আঞ্চলিক দলগুলো তাদের সঙ্গে থাকুক।

বাস্তবে দেখা যাচ্ছে আঞ্চলিক দল গুলোর মধ্যে নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে, তাই অনেক ক্ষেত্রে তারা কংগ্রেসের সঙ্গে জোট  হতে চাইলেও হতে পারছে না। যেমন, ধরা যাক তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এই রাজ্যে বিজেপি যেভাবে আগ্রাসী মানসিকতা দেখাচ্ছে তাতে করে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের উচিত ছিল কংগ্রেসের ক্ষেত্রে নরম মানসিকতা দেখানো। গত লোকসভা নির্বাচনে এই রাজ্য থেকে বিজেপি ১৮ টি লোকসভা আসন পেয়েছিল। আর তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ২২ টি তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করে কংগ্রেস পেয়েছিল দুটি যখন বিজেপির বিরোধী জোট এ রাজ্যে দানা বাঁধে যাচ্ছে সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের দাবি ছিল আটটি আসন। তৃণমূল কংগ্রেসের উচিত ছিল কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়ে জোটে চলে যাওয়া।

Advertisement

কিন্তু তাতে রাজি নয় তৃণমূল কংগ্রেস এমনকি কংগ্রেস প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোন মন্তব্য না করলেও তৃণমূল নেত্রীর প্রকাশ্যেই বলে দিলেন আমি এই রাজ্যে একলা চলবো। তবে ইন্ডিয়া জোট আমি ছাড়বো না। কেন ইন্ডিয়া জোট ছাড়বেন না? তার নেপথ্যের কারণ হচ্ছে যদি এখনই বলা হয় তিনি ইন্ডিয়া জোর ছেড়ে দিচ্ছেন তাহলে এই রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোটের উপরে তার ব্যাপক প্রভাব পড়বে। ভোটের পর তৃণমূল নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবেন কাকে সমর্থন করবেন। এটা এক ধরনের দ্বিচারিতা হয়ে গেল, কারণ ইন্ডিয়া জোটে থাকবো জোটের স্বার্থে তিন-চারটে আসন আমি ছাড়তে পারবো না সে ক্ষেত্রে আমার বিজেপি বিরোধিতার আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং উঠেছে।

মনে রাখতে হবে এই মুহূর্তে পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলিম সমাজের বড় ভোট ব্যাংক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতছাড়া হতে চলেছে। বিগত দু-তিন বছর থেকেই এর সংকেত পাওয়া যাচ্ছিল কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেসব বাঙালি মুসলমান সমাজের নেতৃত্বের উপরে তিনি আস্থা রেখেছিলেন তারা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে মুসলিম ভোট ফেরানোর ক্ষেত্রে। এরাজ্যের বাঙালি মুসলিম সমাজ মনে করছে আগামী লোকসভা নির্বাচন যদি বিজেপি বনাম কংগ্রেস না হয় তাহলে সংখ্যালঘু সমাজের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়বে। ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত এই রাজ্যের মুসলমান সমাজ মনে করত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের অভিভাবক হিসাবে কাজ করবে। কিন্তু ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর দেখা যাচ্ছে উন্নয়নের তেমন কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করেনি মমতা সরকার। যদিও সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অন্যান্য সরকারের তুলনায় মমতা অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

 

কিন্তু বিজেপি বিরোধীতার ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্তরিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে সেই প্রশ্নের মধ্যে অনেকটাই সত্যের গন্ধ পাচ্ছে এ রাজ্যের সচেতন নাগরিকরা। তারা মনে করছে কংগ্রেসের সঙ্গে অহেতুক জোট ভেঙ্গে দেওয়ার পেছনে বিজেপির কল কাঠি আছে। যেহেতু একাধিক দুর্নীতির মামলার সঙ্গে এই রাজ্যের শাসক দলের বেশ কিছু মন্ত্রী বিধায়করা জড়িয়ে গেছেন, সেহেতু বিজেপির সঙ্গে গোপন সমঝোতা রক্ষা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

উল্টোদিকে বাম কংগ্রেস ও আইএসএফ যেভাবে মুসলিম ভোটের উপরে থাবা বসিয়েছে তাতে আর যাই হোক তৃণমূল নেতৃত্বকে চিন্তায় রেখেছে। আর এই কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙ্গে দেওয়াটা এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়াবে। একই সঙ্গে বাম কংগ্রেস যেভাবে দিদি মোদি সেটিং বলে এতদিন ধরে প্রচার চালাচ্ছিলেন সেই প্রচারের ওপরেও সীলমোহর পড়ে যাবে। আর এই পারসেপশন যদি একবার দানা বাঁধতে পারে তাহলে শুধু মুসলিম ভোট ছাড়া হবে তা নয়, সার্বিকভাবে সচেতন নাগরিকদের ভোট হারাবে তৃণমূল কংগ্রেস।

ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস জোট ভেঙ্গে দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে বলে আমাদের মনে হচ্ছে না বরং কংগ্রেস তৃণমূল জোট হলে এই রাজ্যে অনেকটাই লাভ হতো তৃণমূল কংগ্রেসের। যেহেতু সাধারণ নাগরিকরা মনে করে বিজেপির বিকল্প একমাত্র কংগ্রেস সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হলে তারা এটা মনে করতে শুরু করবে তৃণমূলকে ভোট দেওয়া মানে কংগ্রেসকে ভোট দেওয়া। ফলে তৃণমূল তৃণমূল কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভোট ব্যাংকের একটা বড় অংশ হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একই সঙ্গে তৃণমূলের কমিটেড ভোট সেটাও হাতছাড়া হতে পারে। সব মিলিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষিতে তো বটেই রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অশনি সংকেত হতে পারে।

 

 

 


শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

সম্পর্কিত নিবন্ধ