কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হটানোর দায় শুধু কী কংগ্রেসের?
সেখ ইবাদুল ইসলাম : ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে অতীব গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন বলা যেতে পারে। এই নির্বাচনে যদি পুনরায় মোদি সরকার বিপুল গরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে তাহলে আগামী দিনে এ দেশের সংবিধান যে বদলে যাবে তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। শুধু তাই নয় এই দেশ এক কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট যে দীর্ঘ আন্দোলনের পর আমাদের দেশ স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিল তা কিন্তু অনেকটাই থাকবে না।
কারণ বিগত ১০ বছর ধরে এদেশের একটি সরকার যেভাবে কয়েকটি শিল্পপতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে তা এক কথায় বিপদ সংকেত বলা যেতে পারে। ২০১৪ সালে যেদিন নরেন্দ্র মোদি সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় এলেন সেদিন এদেশে ব্যাংকের কাছ থেকে লোন নিয়ে শোধ করা হয়নি এমন অর্থের পরিমাণ ছিল পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। এই কয়েক বছরে সেই ধার নিয়ে শোধ না করার পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক লক্ষ কোটি টাকা।
ব্যবসায়িক গোষ্ঠীকে সুযোগ দিতে গিয়ে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা মুকুব করে দিয়েছে ব্যাংক আর এর দায়ভার নিতে হচ্ছে এদেশের সাধারণ নাগরিকদের। রাম মন্দিরের ললিপপ দেখিয়ে যেভাবে দেশের সাধারন মানুষের উপরে বোঝা চাপানো হচ্ছে তা অতীতে কোনদিন হয়নি। এমনকি কয়েকটি ব্যবসায়ীগোষ্ঠীকে সুযোগ দিতে গিয়ে দেশের সমস্ত নিয়ম-কানুন নৈতিকতাকে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে। দেশের বেকারত্ব দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। বেকারদের কাজ নেই, এ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়ার মুখে। দেশের মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষের হাতে আশি শতাংশের বেশি সম্পদ রয়েছে।
আর প্রতিদিন বেড়ে চলেছে নাগরিকদের উপর ঋণের বোঝা। ফলে দেশ খুব একটা ভালো নেই। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাক স্বাধীনতা আজ প্রশ্নের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। সত্য কথা বলার জন্য অনেক মানুষকে এখন জেলের অভ্যন্তরে জীবন কাটাতে হচ্ছে। বিরোধী দলগুলি সমগ্র দেশ জুড়ে প্রচন্ড চাপের মুখে রয়েছে। বেছে বেছে দেশের বিরোধী নেতাদের বাড়িতে ইডি সিবিআই পাঠানো হচ্ছে। এর আগে পর্যন্ত এই ধরনের প্রতিহিংসার রাজনীতি দেখা যায়নি।
দেশের এই সংকটকালীন অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে অবশ্যই কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যোগ্য বিরোধী দল তৈরি হওয়া দরকার। কিন্তু কে এর দায়িত্ব নেবে? দেশের নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে কুক্ষিগত করা হয়েছে তা বিগত ৭৭ বছরে হয়নি! দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সংকটমুখী। সাধারণ নাগরিকের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ হচ্ছে না। রুটি কাপড়া মাকানের দাবি পূরণ হয়নি ধর্মের বিভেদ দিয়ে সবকিছু ঢেকে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। এ এক নতুন ভারত। সংসদকে এড়িয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি দিচ্ছে। সংসদে বিরোধী দলের নেতাদের বক্তব্য রাখতে দেয়া হচ্ছে না। দেশের বিরোধীদলের স্পেস দিন দিন কমে যাচ্ছে। কন্ঠ রোধ করার চেষ্টা হচ্ছে। শীতকালীন অধিবেশনে আমরা দেখলাম প্রায় দেড়শ জন সাংসদ কে সংসদের বাইরে বের করে দেয়া হলো। যা এক কথায় নজিরবিহীন ঘটনা।
আমরা জানি ১৯৮৮ সালে রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে সংসদের দাঁড়িয়ে বিরোধীরা সরব হয়েছিল এই কারণে বেশ কয়েকজন সাংসদ কে সভাকক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। সে সময় একটা নির্দিষ্ট বিষয় ঘটেছিল সংসদের ভেতরে কিভাবে বাইরের মানুষ ঢুকে পড়ল কিভাবে রং বোমা সংসদে ফাটানো হলো তা নিয়ে প্রশ্ন করার দায়ে কম করে দেড়শ জন সাংসদকে সংসদের বাইরে বের করে দেয়া হলো। আমরা দেখলাম কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ কেড়ে নেয়া হলো সামান্য একটি অজুহাত কে সামনে রেখে রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তিনি সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন।
এক কথায় আপনার স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না সেটা ঠিক করার অধিকার নিয়ে বসে আছে দেশের সরকার। গৌতম আদানীর বিরুদ্ধে কিছু বললে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হতে পারে এই ঘটনা বারবার দেখা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে ভারতবর্ষের গণতন্ত্র ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ভারতবর্ষের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শ টিকে থাকবে কি থাকবে না নির্ভর করছে ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচন।
আর দেশের বিরোধী দলগুলি ছন্নছাড়া। তারা যতো না বিজেপি বিরোধী তার চেয়ে বেশি বিরোধী কংগ্রেসের। বিশেষ করে পশ্চিমবাংলার তৃণমূল কংগ্রেস যে ভাষায় এই দলের নেতারা কংগ্রেসকে আক্রমণ করেন ঠিক ততটা বিরোধী নয় বিজেপির। কে তৃণমূল কংগ্রেসের মনে রাখা উচিত। যদি ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে পুনরায় বিজেপি দিল্লীতে ক্ষমতায় যায়। যেটা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল তাহলে মনে রাখতে হবে সবচেয়ে বড় আঘাত পাবে এর রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনের পর এই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস যে ভেঙে খান খান হয়ে যাবে তার বলার অপেক্ষা রাখে না।
তাই তৃণমূলের যেসব নেতারা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে কংগ্রেসকে আক্রমণ করছেন তারা জেনে রাখুন আগামী দিনে কঠিন সময় আসছে তৃণমূলের কাছে। সম্প্রতি চন্দ্রবাবু নাইডু তার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন এখন দেশে প্রয়োজন কংগ্রেসের একদিন যাকে আমরা বন্ধু হিসাবে মেনে আজ দিল্লিতে ক্ষমতায় বসিয়েছি সেই দলটি আজ আমাকে জেলের ভাত খাওয়াচ্ছে। যে নেতাটি কলকাতায় বসে আছে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করছে তাকে মনে রাখতে হবে। আগামী দিনে এই কথাগুলো তাকে স্মরণ রাখতে হবে। এবং এর ফলেই বিজেপি যে তার কি ক্ষতি করে দেবে সেটা ভেবে উঠতেই পারছে। পারবেন না।
সুতরাং অহেতুক কংগ্রেস দলকে আক্রমণ করাটা তৃণমূলের পক্ষে অশোভন। কারণ দিল্লি থেকে বিজেপিকে সরানোর দায়ী এবং দায়িত্ব শুধু একা কংগ্রেসের নয় এদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের এবং এ দেশের প্রতিটি গণতন্ত্র প্রিয় দলের দায় এবং দায়িত্ব