কলকাতা 

Metiabruz Textile Hab : মেটিয়াবুরুজে টেক্সটাইল হাব হবে সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভার পরিকাঠামোর তৈরি না করে কেন এই সিদ্ধান্ত ?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : শুধু বাংলা নয় সমগ্র বিশ্বজুড়ে মেটিয়াবুরুজের বস্ত্র শিল্পের সুখ্যাতি রয়েছে। অযোধ্যার নবাব ওয়াজেদ আলি শাহের মেটিয়াবুরুজে নির্বাসনের পর থেকেই এই চত্বরে মূলত বস্ত্র শিল্প গড়ে উঠতে শুরু করে। দীর্ঘ ইংরেজ আমলে তা এতটাই সুখ্যাতি পেয়েছিল যে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বস্ত্রপ্রেমীরা মেটিয়াবুরুজে আসতেন এবং তারা বিভিন্ন স্টাইলের বস্ত্র কেনাকাটা করতেন। শুধু তাই নয় বলিউডের অভিনেতারা বা অভিনেত্রীরা যেসব স্টাইল বের করতেন বা পোশাক পড়তেন যেগুলি পড়ে তারা অভিনয় করতেন তার অধিকাংশই তৈরি হতো এই মেটিয়াবুরুজ থেকেই। কিন্তু কালের সময় বেয়ে সেই মেটিয়াবুরুজের গুরুত্ব দিন দিন কমে আসছে। এটা মানতেই হবে।

সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে কী কংগ্রেস কী বামেরা প্রত্যেকেই এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। ক্ষমতায় থাকার জন্য অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছে সেই স্বপ্ন কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি। কংগ্রেসের ২৫ বছর বামফ্রন্টের ৩৪ বছর মাঝের কয়েক বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের আমল। এই সময়কালের মধ্যে এই অঞ্চলের তথাকথিত যোগাযোগ ব্যবস্থার কোন উন্নয়নই হয়নি। অনেক আশা প্রত্যাশা নিয়ে মেটিয়াবুরুজের মানুষ দুহাত ভরে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছিল কিন্তু সেই তৃণমূল কংগ্রেসও সেই স্বপ্ন পূরণ করতে পারেনি।

Advertisement

সন্তোষপুর স্টেশন থেকে মেটিয়াবুরুজের দূরত্ব মেরে কেটে তিন কিলোমিটারের কম। তা সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থার এতটা খারাপ অবস্থা আমার মনে হয় না প্রত্যন্ত কোন এলাকায় এখন রয়েছে। বর্ষাকালে এই মেটিয়াবুরুজ এলাকায় চলাফেরা করা যায় না অধিকাংশ জায়গায় জলে ডুবে থাকে। আর শীতকালে তো এত ধুলো উড়ে যার ফলে পরিবেশের ভারসাম্যই থাকে না। অথচ এই অঞ্চল থেকেই রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় হয় সেই আয়ের কিয়দংশ খরচ করলেই এই এলাকার পরিবেশ এবং পরিকাঠামো ঝা চকচকে হতে পারে কিন্তু কোন সরকারই করেনি। গতকাল বৃহস্পতিবার ১১ই জানুয়ারি রাজ্য সরকার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে মেটিয়াবুরুজে টেক্সটাইল হাব হবে।

রাজ্য মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত যে শুধুমাত্র চমক ছাড়া আর কিছুই নয় তা এলাকায় যারা নিত্যযাত্রী তাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়েছে। টেক্সটাইল হাব হবে তার আগে এলাকার পরিকাঠামোর কোন উন্নয়ন হবে না এটা শুধুমাত্র কল্পনা নয় ,এটা অবাস্তব কল্পনা বলে আমাদের মনে হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আমাদের স্বনির্বন্ধ অনুরোধ টেক্সটাইল হাব করার কোন জরুরী প্রয়োজন এই মুহূর্তে নেই যেটা প্রয়োজন সেটা হচ্ছে রাস্তাঘাট এলাকার পরিকাঠামোকে সুন্দর করে সাজানো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আন্তরিক উদ্যোগ নিয়ে এইটুকু কাজ করতে পারেন, তাহলে আমাদের বিশ্বাস মেটিয়াবুরুজের আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে। তা না করে টেক্সটাইল হাবের স্বপ্ন দেখিয়ে মেটিয়াবুরুজের মানুষের কাছ থেকে ভোট পাওয়া গেলেও কিন্তু এলাকার সার্বিক উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভব নয়।

এই এলাকার যে সকল ওস্তাগার রয়েছেন তারা সত্যিকারের অর্থই দক্ষ এবং যোগ্য এই এলাকায় যেসব সুচি শিল্পী রয়েছেন তারাও অত্যন্ত দক্ষ এবং যোগ্য তাই তাদের কাছে টেক্সটাইল হাবের স্বপ্ন দেখানো আর বাঙালিকে হাইকোর্ট দেখানো দুটোই সমান। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ মেটিয়াবুরুজের পরিকাঠামো উন্নয়ন করুন। শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এই এলাকার আমূল পরিবর্তনে এগিয়ে আসুন আন্তরিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। তা না হলে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত থেকে যাবে কাগজে কলমে এবং সংবাদ মাধ্যমে মেটিয়াবুরুজের কোন উন্নয়ন হবে না।

তবে বিরোধীরা বলছেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রে নওশাদ সিদ্দিকী ভোটে দাঁড়াতে চান বলেই মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত মেটিয়াবুরুজ নিয়ে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছেন। তা নাহলে মেটিয়াবুরুজ যে তিমিরে ছিল সে তিমিরেই থাকতো। আগামী দিনেও তাই থাকবে বলে বিরোধীদের দাবি।

যে কলকাতা পুরসভা এবং মহেশতলা পুরসভা এলাকার রাস্তাঘাট সংস্কারের দায়িত্ব নিতে পারে না সঠিক সময়ে পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারে না, সেই রাজ্যের মন্ত্রিসভা যদি সিদ্ধান্ত নেয় যে মেটিয়াবুরুজের টেক্সটাইল হাব হবে, সেটা সোনার পাথর বাটি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ