কলকাতা 

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের সমান অবদান আছে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ স্মারক বক্তৃতায় বললেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ঐতিহাসিক সুগত বসু

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম  : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিন্দু এবং মুসলমান দুই সম্প্রদায়ের সমানভাবে অবদান রয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ২৮ ডিসেম্বর২৩ মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ আয়োজিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ স্মারক বক্তৃতা দিতে গিয়ে কার্যত এই কথাগুলি বললেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ঐতিহাসিক সুগত বসু। তিনি এদিন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে মুক্তি সংগ্রাম আখ্যা দিয়ে একের পর এক উদাহরণ টেনে এনে মহাত্মা গান্ধী থেকে শুরু করে আবুল কালাম আজাদ এবং নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অবদানকে স্মরণ করেন।

তিনি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আবিদ হোসেন, হাবিবুর রহমান সীমান্ত গান্ধী প্রমুখ নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ বাহিনীর মধ্য দিয়ে দেশের স্বাধীনতার যে আওয়াজ তুলেছিলেন তাকে ঘুরিয়ে মহাত্মা গান্ধী এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদ সমর্থন করেছিলেন। তিনি বলেন ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সব স্বাধীনতা সংগ্রামীরা যখন দেশের কারাগারে বন্দী তখন একা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার জয় ধ্বনিতে তুলে ধরছেন। এরপর আজাদ হিন্দ বাহিনীর পরাজয় স্বীকার এবং এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে লালকেল্লায় বিচার তা নিয়ে আবার নতুন করে সমগ্র দেশ উত্তাল হয়ে উঠেছিল। দেশ উত্তাল হওয়ার নেপথ্যে সেদিন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এর ভূমিকা স্বীকার করতে হবে।

Advertisement

তিনি বলেন, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু যখন কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তখন মহাত্মা গান্ধী আবুল কালাম আজাদকে অনুরোধ করেছিলেন নেতাজীর বিরুদ্ধে তার পক্ষের প্রার্থী হওয়ার জন্য। তিনি সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি জানতেন নেতাজি যে ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখছেন সে স্বপ্ন এদেশের নাগরিকদের।

সুগত বসু এ দিন বলেন, বাংলা ভাগের বিরোধী ছিল তো বটেই এমনকি দেশভাগের ও বিরোধী ছিলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনি স্বাধীনতার আগের দিন পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছেন যাতে এ দেশ অখণ্ড থাকে। তার দেখানো স্বপ্ন আগামী দিনের সাকার করাটাই আমাদের প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হওয়া দরকার। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ হিন্দু মুসলমান মিলনের যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন তা রক্ষা করার দায় এবং দায়িত্ব আমাদের সকলের। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে কাজ করেছেন হিন্দু মুসলমান মিলনের ক্ষেত্রে সেই কাজটা আজকের দিনে রক্ষা করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব সবাইকে আহবান করলেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক সুগত বসু।

এদিনের অনুষ্ঠানে প্রারম্ভিক ভাষণে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি জনাব ড. আবু তাহের কামরুদ্দিন মৌলানা আজাদের স্মারক বক্তৃতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করেন একই সঙ্গে আজাদ এবং বেগম রোকেয়ার নামে দুটি পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণাও করেন। ২০২৩ সালে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ইসরোর বিজ্ঞানী তসিকুল আরা, এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন ভবানীপুর এডুকেশনাল সোসাইটি। এ দুটি পুরস্কার প্রতিবছর মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ দিয়ে থাকে। এর পুরস্কার মূল্য ২৫ হাজার টাকা।

এদিনের সভায় সবচেয়ে আকর্ষণীয় বক্তব্য রাখেন গ্রন্থাগার ও জনশিক্ষা দফতরের মন্ত্রী মৌলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ মন্ত্রী গোলাম রাব্বানী সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান, মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের সচিব ওবাইদুর রহমান প্রমুখ। বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাইরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন জনাব আবিদ হোসেন, মাদ্রাসা বোর্ডের সচিব আব্দুল মান্নাফ, প্রাক্তন ডাইরেক্টর অফ মাদ্রাসা এডুকেশন আরফান আলী বিশ্বাস, জুলফিকার হাসান সহ অন্যান্য আধিকারিকরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সুচারুভাবে সঞ্চালনা করেন মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের ডেপুটি সেক্রেটারি আজিজার রহমান।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ