জেলা 

আমতাকে মহকুমা ও পৌরসভা করার দাবি

শেয়ার করুন

অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :-গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের আমতা ১নং ব্লকের ‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘ -র ব্যবস্থাপনায় বিজয়া সম্মেলনী, সাধারণ সভা ও উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র, আমতা বিধান সভা কেন্দ্র এবং উদয়নারায়ণপুর বিধান সভা কেন্দ্রের তিন জন বিধায়ককে আমতার বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানে দাবি পেশ করা হল। এই অনুষ্ঠানটি আমতা আনন্দ মার্গ স্কুলে অনুষ্ঠিত হল।

বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে আমতা ১ নং ব্লকের অন্তর্গত ভান্ডারগাছা,চন্দ্রপুর,খড়দহ,উদং ১, উদং ২, আমতা, সিরাজবাটি,আনুলিয়া, বসন্তপুর, কানপুর,খোশালপুর, রসপুর,বালিচক এই ১৩ টি গ্ৰাম পঞ্চায়েতের নব নির্বাচিত প্রধান – উপপ্রধান, আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি,সহ সভাপতি ও কর্মাধ্যক্ষবৃন্দ, আমতা ১ নং ব্লকের এলাকাধীন নব নির্বাচিত জেলা পরিষদের সদস্য- সদস্যাগণকে সম্বর্ধীত করা হয়।
এই অনুষ্ঠানে সভাপতির আসন অলংকৃত করেন রণজিৎ, প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করেন শিক্ষারত্ন প্রাপ্ত শিক্ষক তথা প্রতিষ্ঠানের সাম্নানিক সভাপতি অরুণ কুমার পাত্র।
বিজয়া সম্মেলনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমতা ১ নং ব্লকের গ্ৰাম পঞ্চায়েত গুলির প্রধান -উপপ্রধান, আমতা ১ নং পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও সহ সভাপতি, হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্য-সদস্যাদের অবগতি করিয়ে আমতার বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধানের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘-র প্রাণপুরুষ তথা প্রাক্তন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ফটিক চক্রবর্তী বলেন,’২০১১ সালে রাজ্যের শাসন ক্ষমতা পরিবর্তনের পর আমতা মানুষকে নিয়ে গঠিত হয় ‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘। আমতা শহরের সর্বাঙ্গীন উন্নয়ণের জন্য সুপরামর্শ প্রদান ও আন্দোলন সংগঠিত করার নিরিখেই এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি গঠিত হয়।প্রায় ৬০০(ছয় শত) বৎসরের প্রাচীন বন্দর কেন্দ্রীক আমতা শহরটি ছিল হাওড়া জেলার প্রাচীনতম একটি মফস্বল শহর। জনবহুল ও বাণিজ্য সমৃদ্ধ এলাকা হওয়ায় ব্রিটিশ আমল থেকেই এখানে বিচার ব্যবস্থা,রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি চালু হয়। পশ্চিমবাংলায় দ্বিতীয় গ্ৰামীণ এবং হাওড়া জেলার দ্বিতীয় মহাবিদ্যালয়টি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে।১৮৫৭ সালে এদেশে ইংরাজী শিক্ষা প্রচলনের যুগে আমতায় বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকার অনেক বিদ্যালয়ই শতবর্ষে উত্তীর্ণ। পরবর্তী কালে মহকুমা পাঠাগার এবং মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর এর অফিস এখানে চালু হয়।ব্যাঙ্ক, বীমা অফিস সহ সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অফিস,ব্যবসা – বাণিজ্য,শিল্প,শিক্ষার হার , বিদ্যালয়ের সংখ্যা,যোগাযোগ ব্যবস্থা, জীবন – জীবিকার সুযোগ সব মিলিয়ে এই এলাকায় শহরে চরিত্র বিরাজমান ‘ ।
তিনি এও বলেন,’ এই প্রতিষ্ঠানের শুরুতেই আমতার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সতেরো টি প্রস্তাবের প্রতি উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্রের বিধায়ক ডাঃ নির্মল মাজির দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। ইতিমধ্যেই বিধায়কের নেতৃত্বে আমতা এলাকায় যে উন্নয়ন কর্মসূচি শুরু হয়েছে তার অধিকাংশই আমতা ‘ সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘-র প্রস্তাব সূচির মধ্যে আছে।যেমন আমতার স্বাস্থ্য পরিষেবা, নিকাশি ব্যবস্থা, আমতা শহরের সহিত সংযোগকারী নিকটবর্তী রাস্তা গুলির উন্নয়ন,বাড়ি বাড়ি নলবাহী পানীয় জলের সংযোগ স্থাপন ইত্যাদি’ ।
‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘ উলুবেড়িয়া উত্তর বিধান সভা কেন্দ্র, আমতা বিধান সভা কেন্দ্র ও উদয়নারায়ণপুর বিধান সভা কেন্দ্রের বিধায়ক যথাক্রমে ডাঃ নির্মল মাজি, সুকান্ত পাল ও সমীর কুমার পাঁজা – র দৃষ্টি আকর্ষণ করে আট দফা দাবি সনদ পেশ করেন। দাবি গুলি হল, ১/ আমতা পৌরসভা গঠন ২/ আমতা মহকুমা গঠন ৩/ আমতা শহরের যানজট নিরসনের জন্য ছোটমহড়া থেকে আমতা কলাতলা পর্যন্ত বাইপাস রাস্তাটির নির্মাণ কার্য সম্পন্ন ৪/ ৬১ এ এবং এল ৬৩ রুটে পুনরায় বাস যোগাযোগ চালু করা ৫/ আমতা ধর্মতলা সরকারি সি টি সি বাস রুটের বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করে বতর্মান বেহাল অবস্থার নিরসন ঘটিয়ে নিত্যযাত্রী সহ অন্যান্যদের সুবিধা প্রদান ৬/ আমতা শহর ও সংযোগকারী রাস্তাগুলিতে নৈশবাতি প্রজ্জ্বলন ৭/ গ্ৰাম পঞ্চায়েত গুলি নিজ নিজ এলাকায় চিরাচরিত নিকাশি ব্যবস্থা গুলি পুনরুদ্ধার অথবা পুর্নঃনির্মাণ ৮/ বতর্মানে সু যেপ্ত আমতা মহকুমা পাঠাগার টিকে জাগরিত করে আমতা মহকুমা পাঠাগার সংস্কৃতির পুনর্জাগরণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ‘ ।
ফটিক চক্রবর্তী বলেন, ‘ আমতা মহকুমা গঠন সম্পর্কে ‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘-র প্রস্তাব উলুবেড়িয়া মহকুমায় নয়টি ব্লক আছে। কিন্তু বর্তমানে পশ্চিমবাংলায় নয়টি ব্লক বিশিষ্ট মহকুমা নেই বললেই চলে। বতর্মানে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁদের দৃষ্টি কোণ থেকে বড় বড় মহকুমা গুলিকে জেলা কিংবা নতুন মহকুমায় বিভাজন ঘটিয়েছেন। উলুবেড়িয়া মহকুমা ভেঙে নতুন একটি আমতা মহকুমা গঠিত হলে আমতা ১ নং ব্লক সহ আমতা ২ নং ব্লক এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে মহকুমা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় সহায়তা মানুষের নিকট সহজলভ্য হবে। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য আমতায় ফৌজদারি ও দেওয়ানী দুটি আদালতই চালু আছে। আমতায় এ্যাডিশন্যাল ডিস্ট্রিক জর্জ ‘ স কোর্ট ও চালু আছে । আমতা মহকুমা গঠিত হলে বৃহত্তর এই এলাকার সার্বিক উন্নয়ন গতিশীল হয়ে উঠবে ” ।
ফটিক চক্রব্ত্তী দুঃখ ও ক্ষোভের সহিত বলেন,’ ইতিমধ্যে আমতা মহকুমা গঠন বিষয়ে বিগত ২৫/৭/২০১১ তারিখে গণ স্বাক্ষরিত আবেদন এবং ১৬/৯/২০১২ তারিখে মহকুমা ও আমতা পৌরসভা গঠন বিষয়ে পুনরায় একটি আবেদন মুখ্যমন্ত্রী -র নিকট পেশ করা হয়েছে।অপর দিকে আমতা পৌরসভা গঠন বিষয়ে একটি গণস্বাক্ষরিত আবেদন ২৫/৭/২০১১ তারিখে পৌর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী -র নিকট পেশ করা হয়েছে। কিন্তু আমতা মহকুমা গঠন ও আমতা পৌরসভা গঠন বিষয়ে কোনো সদর্থক পদক্ষেপ এখন ও গৃহীত হয় নি ‘।
এই সভায় আমতা কেন্দ্রের বিধায়ক সুকান্ত পাল উপস্থিত না থেকে তিনি ‘ আমতা সিটিজেনস্ ওয়েল ফেয়ার সোসাইটি ‘-র কতৃপক্ষকে হোয়াটসঅ্যাপ মারফৎ আমতাকে মহকুমা করার প্রস্তাব বিষয়ক একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠান। প্রতিবেদনটি হল, ‘ আমতাকে মহকুমা করার প্রস্তাব দিলেন বিধায়ক সুকান্ত পাল। বিধান সভার উল্লেখ পর্বে ওই প্রস্তাব পেশ করেন সুকান্ত। তিনি বলেন,মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য একাধিক নতুন জেলা তৈরি করেছেন।এর ফলে প্রশাসনের কাজে আর ও অনেক গতি এসেছে।

Advertisement

জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করে একেবারে তৃনমূলস্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী।এর জন্য মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিধান সভার উল্লেখ পর্বে বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘ প্রায় ছয়শত বছরের প্রাচীন বন্দর শহর আমতা ভৌগলিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনপদ।এর তিন দিকে হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অবস্থিত। আমতাকে মহকুমায় উন্নীত করা হলে আমতা ১ নং ব্লক, আমতা ২ নং ব্লক ও উদয়নারায়ণপুর ব্লকের প্রায় ছয় লক্ষ মানুষ উপকৃত হবেন। ওই এলাকার প্রশাসনিক কাজকর্মে আর ও গতি আসবে। সুকান্ত পাল বলেন, ‘ আমতাকে মহকুমা করার উদ্দেশ্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের আমতা বিভাগ করা হয়েছিল ‘ ।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ