কলকাতা 

মমতা অভিষেকের দ্বন্দ্বের ছায়া কি কুনালের মন্তব্যে স্পষ্ট হচ্ছে? নেপথ্যে রহস্য!

শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সব বিষয়ে মতামত যে এক রয়েছে এমনটা নয়। নবান্ন এবং তৃণমূল নেতৃত্ব সম্পর্কে যারা একটু খোঁজখবর রাখেন তারা খুব ভাল করেই জানেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী এবং দলনেত্রী তো বটেই কিন্তু দলের প্রায় ৯০% ক্ষমতা এখন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। শুধু তাই নয় রাজ্য মন্ত্রিসভার নতুন মুখ সবাই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকা সেই সব নেতা কর্মীরা কার্যত দলের মধ্যে কোন ঠাসা হয়ে আছেন। আর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি পর থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও খানিকটা চাপের মধ্যে পড়েছেন।

কারণ একের পর এক মমতার বৃত্তের ঘনিষ্ঠরা গ্রেফতার হয়ে জেলে যাচ্ছেন। তাই আমরা দেখলাম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে কেন্দ্রীয় এজেন্সি হানা দেওয়ার দিনেই রীতিমতো সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে এটাও ঠিক মহুয়া মৈত্রের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তেমন কিছু মন্তব্য না করলেও সম্প্রতি নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের সভা থেকে মহুয়ার কথা তিনি বলেছেন। সূত্রের খবর যে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করতে গিয়ে যেভাবে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পক্ষে সাফাই দিয়েছেন তাতে নাকি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অন্যদিকে মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতির পদ দেওয়ার ক্ষেত্রেও একক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা রয়েছে বলে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করছে।

Advertisement

আর তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র যিনি আছেন তিনি একটা সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের মধ্যে থাকলেও এখন কিন্তু তিনি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলেই রাজনৈতিক মহলে পরিচিত। এই মুখপাত্র যখন সারদা মামলায় জেলে ছিলেন তখন তিনি প্রতিদিন নিয়ম করে বা প্রতিটা ক্ষেত্রে নিয়ম করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতেন। দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে এইভাবে আক্রমণ করার পরেও তিনি কিভাবে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিষিক্ত হলেন তা নিয়ে তৃণমূল দলের মধ্যেই প্রশ্ন রয়েছে। তৃণমূলের প্রবীণ এক সাংসদ একটা সময় তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে মন্তব্য করেছিলেন যে এই ব্যক্তি একদিন তৃণমূলের ক্ষতের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

যাইহোক দুদিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সাংগঠনিক বৈঠকে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উপস্থিত থাকলেও ছিলেন না অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক চোখের কারণে উপস্থিত হতে পারেননি বলে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়। এই পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল এই বৈঠকের পর দিনেই এবিপি আনন্দকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যে ভাষা এবং যে কায়দায় তৃণমূল দলের মুখপাত্র দলের নেতৃত্বকে খোঁচা দিয়ে প্রশ্ন তুললেন সেটা সৌমেন মহাপাত্র কিংবা সুব্রত বক্সি তুললে এতক্ষণে দলে থাকতেন কিনা সন্দেহ রয়েছে।

আসলে এই ধরনের বালখিল্য কথাবার্তা যে বলা যায় না সেটা  নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবুও দলকে সাধারণ মানুষের কাছে ভিলেন তৈরি করার লক্ষ্যে এমন ভাবে মন্তব্য করা হলো যাতে দলই অস্বস্তিতে পড়ে গেছে। নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামের সভার ২৪ ঘন্টার মধ্যে যে ভাষায় দলের মুখপাত্র দলের নেতৃত্বকে আক্রমণ করলেন তা এক কথায় বিস্ময়ের বিষয়। আর এ ধরনের কথাবার্তা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে মমতার দূরত্ব বাড়ছে। যদিও এই দূরত্ব বাড়াকে পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।  একটা বিষয় স্পষ্ট হয়েছে দলের মুখপাত্র দলের  নেত্রীর বিরুদ্ধে হালকা চালে হলেও যে ভাষায় আক্রমণ করেছেন তাতে আর যাই হোক তৃণমূল দলটি সাধারণ মানুষের কাছে ভিলেনে পরিণত হলো।

প্রথমত দলের মুখপাত্র এই ধরনের দলবিরোধী কথাবার্তা বলতে পারেন কিনা সেটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুঝতে হবে। দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং দলনেত্রীর ছবি যেখানে আছে সেখানে আর কোন নেতার ছবি কেন নেই সেই প্রশ্ন তুলে আসলে দলের ফাটল কে এবং দলের ঐক্যকে ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে সে বিষয়ে যদি দল এখনই ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আগামী দিনে তৃণমূল কংগ্রেসকে আরো বেশি পস্তাতে হবে।

একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি নেই যিনি এই দলটিকে জনগণের কাছে সত্যিকার অর্থে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে পারবেন। সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সভাতে থাকবেন সেই সভাতেই মমতার ছবি ছাড়া অন্য কারো ছবি না দেওয়া হলে তা নিয়ে প্রশ্ন করার অধিকার আমার ব্যক্তিগত মত হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের কারো থাকার কথা নয়। যারা এই ধরনের কথা বলছেন তারা আসলে দলের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছেন দলের ঐক্যকে ভাঙতে চাইছেন এবং বিরোধীদের সুযোগ করে দিতে চাইছেন। এইসব ব্যক্তিদের মুখপাত্র পদে রাখাটা কতটা দলের পক্ষে সমীচরণ হয়েছে তা নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন উঠছে।

তবে এই কথা বলার বিষয় নয় আমাদের কারণ তৃণমূল কংগ্রেস কাকে তাদের দলের নেতা করবেন কাকে তাদের দলের মুখপাত্র বানাবেন কাকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদ দেবেন সেটা একান্তই ওই দলের নেতৃত্ব ঠিক করবেন। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি, স্বাধীনতার পর এই বাংলার রাজনীতিতে যে কয়েকজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মানুষের আওয়াজকে বাংলার জনরাবকে মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন মানুষকে ইনসাফ পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সেই সব তালিকার মধ্যে অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকবেন।

 

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ