কলকাতা 

মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের সভানেত্রী করে কী বার্তা দিলেন মমতা- অভিষেক?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম : রাজ্য রাজনীতিতে বড় চমক । কয়েকদিন আগেও টাকা ও উপহারের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করেছেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবের অভিযোগের পর থেকে তৃণমূল কংগ্রেস কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করেছিল। এমনকি নিশিকান্ত দুবের অভিযোগের ভিত্তিতে সংসদে এথিক্স কমিটি গঠন হওয়ার পরেও তৃণমূল দলের প্রথম সারির কোন নেতা মহুয়া মৈত্রের পক্ষে দাঁড়িয়ে কোন মন্তব্য করেননি। দলের যিনি অফিসিয়াল মুখপাত্র বলে পরিচিত তিনি তো প্রকাশ্যেই বলে দিয়েছিলেন মহুয়ার সমস্যা ওকেই মেটাতে হবে। দল এর দায়িত্ব নেবে না।

তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্রের মুখে একথার অর্থ হলো দলীয় সিদ্ধান্ত এটাই ছিল অর্থ ও উপহারের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন করার যে অভিযোগ মহুয়ার বিরুদ্ধে উঠেছে তা মহুয়াকে একাই লড়াই করতে হবে। অন্যদিকে দেখা গেল দেশের বিরোধীদল কংগ্রেসসহ একাধিক বিরোধী দলের নেতা মহুয়া মৈত্রের পাশে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে আক্রমণ করলেও তৃণমূল নেতারা নীরব ছিলেন। এমনকি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কয়েকদিন আগে ইডির দফতর থেকে বেরোনোর সময়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন মহুয়ার লড়াই নিজেকেই লড়তে হবে।

Advertisement

এরপরেই স্বাভাবিকভাবে মনে করা হচ্ছিল দলের পক্ষ থেকে মহুয়া মৈত্রের পক্ষে কিছু বলা হবে না এমনকি কিছু বলাও হয়নি। সম্প্রতি এথিক্স কমিটি মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজ করার যে সুপারিশ স্পিকার এর কাছে পাঠিয়েছেন সে বিষয়েও তৃণমূল কংগ্রেস অফিসিয়ালি ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সিপিএমের মতো দল যেখানে এথিক্স কমিটির এই ধরনের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে সেখানে আশ্চর্যজনকভাবে হলেও তৃণমূল কংগ্রেস নীরব ছিল।

কিন্তু আজ সোমবার কালীপুজোর রাত কাটতে না কাটতেই তৃণমূল কংগ্রেস ভোল পাল্টে দিলো। মহুয়া মৈত্রকে প্রায় দু বছর পর ফের তৃণমূল কংগ্রেসের কৃষ্ণনগর জেলার সভাপতি করে স্পষ্ট বার্তা দিল দল তাঁর পাশেই আছে। কারণ শেষ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি যে বদল হয়েছিল ২০২১ সালে সেই সময় মহুয়া মৈত্র কে দলের সমস্ত পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। শুধুমাত্র তিনি সাংসদ পদে ব্রতী ছিলেন। তার দু’বছর পর মহুয়া মৈত্রকেই দল গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিল যখন লোকসভা নির্বাচন সন্নিকটে।কেন এই সিদ্ধান্ত? কেন শেষ পর্যন্ত মহুয়াকে গুরুত্ব দিতে হলো!

আসল বিষয় হল মহুয়া মৈত্রের রাজনৈতিক জীবনে কোন কালো দাগ এখনো নেই। তিনি স্পষ্ট কথা স্পষ্ট ভাষায় বলেন। কোন রাঘঢাক না করে তার প্রতিক্রিয়া দেন। তৃণমূল দলের যে অংশটা নানা রকম অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত তাদের সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেন মহুয়া। আর এটাও ঠিক কথা এথিক্স কমিটির যে রিপোর্ট স্পিকারের কাছে পাঠিয়েছে, সেই রিপোর্টে মহুয়ার বিরুদ্ধে অর্থ ও উপহার নেয়ার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণপত্র পেশ করতে পারেনি। বরং এই অভিযোগটা তদন্ত সাপেক্ষে বলে কোন তদন্তকারী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে ওই রিপোর্টে। তাহলে এ থেকে এটা স্পষ্ট এথিক্স কমিটি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আসলে উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত সেই অর্থে কোন প্রমাণ পত্র পেশ করা হয়নি যে মহুয়া মৈত্র কারও কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন। সুতরাং এই ধরনের একটা হালকা রিপোর্টকে সম্বল করে তৃণমূল নেতৃত্ব যদি মহুয়া মৈত্রের কাছ থেকে সরে যান তাহলে জনগণের কাছে আলাদা একটা বার্তা যাবে। এবং বলা হবে যে লঘু পাপে গুরু দন্ড দিল তৃণমূল কংগ্রেস নিজেই।

করিমপুরের বিধায়ক থাকার সময় থেকে মহুয়া মৈত্র যেভাবে নিজের স্বচ্ছ ইমেজকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে জনমানষে সেই ইমেজ যে তৃণমূলের অন্যান্য নেতাদের তুলনায় অনেকটাই ভালো তা মানতেই হবে। এই অবস্থায় দুর্নীতির পাকে বসে থাকা তৃণমূল নেতাদের পক্ষে মহুয়া মৈত্রকে ঝেড়ে ফেলাটা খুব কঠিন হতো। আর যদি এই ধরনের সিদ্ধান্ত তৃণমূল কংগ্রেস নিত তাহলে আর যাই হোক রাজ্যের সাধারণ মানুষ মনে করত তৃণমূল কংগ্রেস বরাবরই দুর্নীতির সঙ্গে আপোষ করে।

সুতরাং সব দিক বিচার বিবেচনা করে আগামী লোকসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিংবা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মহুয়া মৈত্রকে গুরুত্ব দেওয়া ছাড়া অন্য কোন বিকল্প পথ আর খোলা ছিল না। সুতরাং মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগরের দলের সভানেত্রী করে আসলে দলকে মানুষের কাছে আরও বেশি বিশ্বাসযোগ্য করে তুললেন তৃণমূল নেতৃত্ব।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ