নেতৃত্বহীন জাতির দুর্ভোগ তো বাড়বেই, কবে ঘটবে বোধোদয়? / মোস্তফা কামাল
মোস্তফা কামাল:পৃথিবীতে ৫৭টি মুসলিম দেশ। প্রায় ২০০ কোটি মুসলিম জনসংখ্যা ।সংখ্যার নিরিখে পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার চার ভাগের এক ভাগ হলো মুসলিম। পৃথিবীতে একটি মাত্র রাষ্ট্র ইহুদিদের। পৃথিবীতে ইহুদি জনসংখ্যা মাত্র দেড় কোটির মতো।আর ইজরাইলে ইহুদি সংখ্যা মাত্র ৫৪ লাখ। এতো অল্পসংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র জ্ঞান বিজ্ঞান ও একতার জোরে তারা বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিনত হয়েছে। অপরদিকে আত্মকলহে নিমগ্ন ২০০কোটি জনসংখ্যা নিয়ে মুসলিম সম্প্রদায় দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে পড়ছে।
দীর্ঘদিন ধরে প্যালেস্টাইনে নিরীহ শিশু নারী ও সাধারণ জনগণের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালিয়ে বিশ্বমানবতাকে ধ্বংস করতে চাইছে ইহুদি রাষ্ট্র ইজরাইল।হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের হত্যার জন্য ইজরাইলের বিরুদ্ধে কোনো মুসলিম দেশ এ পর্যন্ত সামরিক শক্তি নিয়ে ময়দানে নামেনি। গাঁজায় একবোতল পানি দিয়েও কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়নি।দুই একটা দেশ ফাঁকা হুঙ্কার দিয়ে তাদের খেলা দেখা ছাড়া উপায় থাকছে না।তার কারণ মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড ঐক্যের অভাব।সংকীর্ণ ও আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা করতে গিয়ে নিজেরাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। আজ গ্রাম গঞ্জ পাড়া মহল্লা থেকে বিশ্বের সর্বত্রই একই চিত্র। পারস্পরিক সম্পর্ক ,সহযোগিতা,ভালবাসা, ভাতৃত্ববোধ তলানিতে পৌঁছেছে। বেড়েছে পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসা। ফলে অন্তর গ্রাস করেছে মৃত্যুর ভয়। তাই কোনো বিপদের ঝুঁকি এরা নিতে চায়না। ভাবে, ভালোই তো আছি কেন অন্যের বিপদে নিজেকে জড়িয়ে বিপদে পড়ি।এই মানসিকতা তথাকথিত শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত মুসলমানদের মধ্যে বেশি বেশি লক্ষ্য করা যায়।এই মানসিকতা পৃথিবীর সর্বত্র বিরাজমান।ফলে পৃথিবীতে মুসলিম সম্প্রদায় জনসংখ্যায় বেশি হলেও এরা একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একাকী জীবন যাপন করে। মুসলমানরা তাদের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে অস্বীকার করে নিজেদের গুটিয়ে রাখার ফলে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
মুসলিমদের মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যারা একটু সচেতন তারা হয়তো অন্যায়ের বিরুদ্ধে অসংগঠিতভাবে প্রতিবাদ করছেন, সমালোচনা করছেন। অনেকেই ফেসবুকের পাতায় বা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যন্ত্রণা প্রকাশ করছেন, সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছেন,ঐক্যের আহ্বান করছেন কিন্তু তাদের আবেদন কারও কর্ণকুহরে প্রবেশ করছেনা।অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে,গোটা বিশ্বে ২০০ কোটি মুসলিম থাকা সত্ত্বেও আমরা অর্থাৎ মুসলিমরা প্রত্যেকেই পারস্পরিক অবিশ্বাস আর অসহযোগিতার জন্য একদম একাকী হয়ে পড়েছি। আমরা সবাই বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো বসবাস করছি। সংকীর্ণ স্বার্থে আমরা হাজারটা দল তৈরি করেছি। বৃহত্তর স্বার্থে আমরা কখনোই এক হওয়ায় কথা ভাবিনি।আমাদের মধ্যে নেই কোনো ঐক্য , নেই কোনো ভাতৃত্ব বোধ। আমাদের কোনো নেতৃত্ব নেই। নেই কোনো স্বতন্ত্র অস্তিত্বও।নামেই আমরা মুসলমান, শুধু জনসংখ্যাতেই আমাদের অস্তিত্ব কিন্তু শক্তিতে একেবারেই হীন,দুর্বল। কিন্তু মুসলমানদের তো এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। আসলে আত্মকলহে জর্জরিত নেতৃত্বহীন জাতির এটাই প্রাপ্য।
কিছু মানুষের বিশ্বাস রয়েছে সামাজিক ও রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা, বিশ্বভাতৃত্ববোধ বাদ দিয়ে শুধু নামাজ রোজা হজ্ব জাকাত আদায় করলেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়,ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠা যায় এমন ধারণার পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। যতদিন অন্যের দুঃখ কষ্ট আমার হৃদয়কে ব্যথিত না করবে ততদিন আমি নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করতে পারিনা। আমি মনে করি,যে ঈমান নিপীড়িত নির্যাতিত মানবতার কল্যাণে সাড়া দেয়না,মজলুম মানুষের কান্নায় ব্যথিত হয়না সেই ব্যক্তির ঈমানের দাবী সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের দিয়ে কখনোই (সামাজিক বা রাজনৈতিক) কোনো পরিবর্তনই সম্ভব নয়।
*কোন জাতির ভাগ্য পরিবর্তন আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত করেন না, যতক্ষণ সেই জাতি তার কর্মনীতির পরিবর্তন না করে ।( সূরা রাদ,আয়াত,১১ ও সূরা আনআম,আয়াত,৫২*)