শারদ সংকলন-৩
আমাদের কথা
শারোদৎসব দুর্গাপুজো বাঙালির অন্যতম মহৎসব। এই উৎসবে আপামর বাঙালি এক অনাবিল আনন্দ যজ্ঞে ডুবে যায় প্রতিবছর। এবারও তার ব্যতিক্রম যে নয় তাই বলাই বাহুল্য। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চারদিকে সাজো সাজো রব। উৎসবকে ঘিরে সবার মধ্যেই একটা উন্মাদনা। চাষি, চামার, কামার,কুমার যে যার পেশায় নেশায় বুদ উৎসবকে নিয়ে। কবি সাহিত্যিকদের মধ্যেও সৃষ্টির উন্মাদনা। শারোদৎসবে বিভিন্ন শারদীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁদের লেখা মালা এক অনন্য তৃপ্তি দেয়। তাঁরা প্রতিবছর মুখিয়ে থাকেন কখন হাতে আসবে তাঁর প্রিয় শারদ সংকলন যার মধ্যে ছাপা হয়েছে তাঁর লেখা। নতুন পত্রিকা হাতে পেয়েই নিজের লেখার পাতায় পৌঁছানোর আগেই পত্রিকা নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ নেয় পরম তৃপ্তিতে।
কালক্রমে আমরা পৌঁছে গেছি ডিজিটালের দরজায়। ছাপা অক্ষরের পরিবর্তে অনলাইনে পড়ছি মনমাতানো হরেক ই-পত্রিকা। তাই পিছিয়ে নেই বাংলার জনরব নিউজ পোর্টাল। আমরা আমাদের বহুল প্রচারিত পোর্টালের সাহিত্য শাখার তরফেও পাঠক পাঠিকাদের জন্যে সাজিয়েছি শারদীয়ার ডালি। যে ডালি ভরে উঠেছে দেশ বিদেশের একগুচ্ছ কবি সাহিত্যিকদের মূল্যবান সৃষ্টিতে। সবাইকে শারদীয়ার হার্দিক শুভেচ্ছা সহ নিবেদিত হলো শারদ সংকলন-৩ ।
-লিখেছেন-
মাহফুজুর রহমান আখন্দ, মুকুল রঞ্জন দাশ, সুশান্ত পাড়ুই, নূরুল ইসলাম লস্কর, শেখ সিরাজ, বন্দনা মালিক, সিরাজুল ইসলাম ঢালী, শর্মিষ্ঠা মাজি, আসাদ আলী, মুনমুন চক্রবর্তী সেন, জাহাঙ্গীর মিদ্দে, আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী ও সেখ আব্দুল মান্নান।
১.
কথার মাশুল
মাহফুজুর রহমান আখন্দ
(রাজশাহী, বাংলাদেশ)
শিউলিতলায় তোমার পরশ
গন্ধবকুল মাখা
আহা,
হৃদয় আমার তাল পাতারই পাখা
মুক্তি আগুন জ্বলছে মনে ধিকি
তোমার কথাও হচ্ছে স্মরণ ঠিকি
কথার মাশুল গুনতে গিয়ে
হৃদপাহাড়ে ধ্বংস
চোখের কোণায় অশ্রু তো নয়
শীত খেজুরের রস
স্বপ্নগুলো আউলা কেশে কাঁদে
হঠাৎ কখন পা দিয়েছে ফাঁদে
বকের গলায় বড়শী গাঁথা মাছ
পাহাড় চূঁড়ায় শেকড় কাটা গাছ
তবু আমি স্বপ্ন দেখি আলোর
কষ্টনদী সাঁতার কেটে
রাস্তা খুঁজি ভালোর
জোৎস্না রাতে শিউলিতলায় হাঁটি
বিজয় নেশায় আজও সাঁতার কাটি।
২.
লোড্ শেডিং হলেই ভালো
মুকুল রঞ্জন দাশ
(গুয়াহাটি,অসম)
সাত জুলাই মঙ্গলবার
রাত মাত্র আটটা,
হোম্ টাস্ক্ করছি বসে
খুলে অঙ্কের খাতাটা।
পড়ছে দিদি পাশেই বসে
সায়েন্স্ টায়েন্স্ কত যে,
হাতে চায়ের কাপটি বাবার
চোখটি খবর কাগজে।
পিসি আর মা রান্না ঘরে
ব্যস্ত তারা রান্নাতে,
জেঠু নিশ্চয়ই লিখছে ছড়া
বাঁধাই করা খাতাতে।
জেঠিমণি রান্না সেরে
টিভির সামনে বসেছে,
জয়দাদা আর সতু বসে
অঙ্ক কষে চলেছে।
বাম্পিদের ঘরেও কেহই
চুপটি করে বসে নেই,
ব্যস্ত সবাই নানান কাজে
পড়া কিংবা রান্নাতেই।
এমন সময় একি বিভ্রাট,
টুপ করে লাইট নিবে গেল!
ফ্যানগুলো সব আস্তে আস্তে
ঘুরতে ঘুরতে থেমে গেল।
মা বলে আর পারিনা হায়
লোড্ শেডিং-এর এই জ্বালায়!
ঠাকুর ঘরের তাক থেকে যা
মোমবাতি টা নিয়ে আয় ।
উঃ কি গরম! পারিনা আর
মোমের আলোয় পড়তে,
ঘর থেকে তাই বেরিয়েএলাম
বাইরে ঘুরে ফিরতে ।
জেঠু বলে, এসো তোমরা
বারান্দায় সব বসে পড়ো,
লাগবেনা লাইট, লাগবেনা ফ্যান, খোলা হাওয়া উপভোগ করো।
ভাইবোনেরা সবাই মোরা
বারান্দায় পড়লাম বসে,
কেউবা মোড়ায়, কেউবা মেঝেয়,
আমি জেঠুর কোল ঘেঁষে।
জেঠু তখন মজার মজার
বলল কত গল্প,
বাঘমামা আর কুমীর মশাই
বুদ্ধি যাদের অল্প।
ভালো মানুষ খরগোশ ভায়া
কি কৌশল টাই করল!
সিংহ মশাই কেমন করে
কূয়ায় ডুবে মরল।
নির্ভীক সেই রাজার কুমার
সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে,
রাক্ষস মেরে ফিরে এলো
রাজকন্যা সঙ্গে নিয়ে।
গল্প ছাড়াও জেঠু দিলেন
কত মজার বারতা,
দেশ বিদেশের আজব খবর
জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা কথা।
বই না পড়েও জেঠুর কাছে
পেলাম কত জ্ঞানের আলো।
মনে মনে বললাম,এমন
লোড্ শেডিং হলেই ভালো ।
৩.
বলো আমি কে?
সুশান্ত পাড়ুই
(সিঙ্গুর, হুগলী)
রাঙা ডানা চার খানা
আকাশেতে উড়ি
মধু খাই যত পাই
ফুলে ফুলে ঘুরি
বলো আমি কে?
—প্রজাপতি, প্রজাপতি, প্রজাপতি যে।
পাঁশ রঙা গা আমার
দানা খাই রকমে
ঠায় ঠায় রব তুলি
বক্ বক্ বকমে।
বলো আমি কে?
— পায়রা, পায়রা, পায়রা রে।
ফুল থেকে রস এনে
বমি করি ঘরে
লোকে খায় কি যে যাদু
মধু হয় পরে।
বলো আমি কে?
— মৌমাছি, মৌমাছি, মৌমাছি যে।
উড়ে উড়ে ঝুপ করে
জলে এসে পড়ি
জেলে নয় তবু রোজ
শুধু মাছ ধরি।
বলো আমি কে?
—মাছরাঙা, মাছরাঙা, মাছরাঙা রে ।
৪.
এবার থামাও তোমার বারিধারা
নূরুল ইসলাম লস্কর (মুম্বাই)
ঝমঝম করে বারিষা নামিছে,
যেন আসমান হয়েছে ফুটো।
ভেঙে নিলো নীড়, পাখির –
গঢ়েছিলো জড়ো করে খড়কুটো।
পায়রাদের নেই সীমানা খুশীর,
আকাশের শাওয়ার খুলে গেছে আজ;
তারই জলে চান করে তারা
ছড়িয়ে ডানা, ফেলে রেখে সব কাজ।
স্কুলফেরত ছেলে আহ্লাদে আটখানা,
জমানো জলে ডুবোবে জুতো।
মায়ের মারের ভয় ডর নেই,
শাস্তি এড়াবার আছে কতো ছুতো!
কেউ খিড়কীর পাশে বসে দেখে,
অপার বারিধারা যেন আকাশের অশ্রুজল।
আকাশেরই বা দুঃখ কিসের, কিসের
তরে নীল গগনেরও চোখ ছল ছল?
মেঘের দেবতা বৃষ্টির বিধাতা বিনতি করি –
অবসান হোক তব জলকেলি ঝমঝম।
সূর্য ডুবিছে, জল ছাড়িয়েছে বিপদসীমা;
বানভাসী হবার ভয়ে গা’টা করে ছমছম।
থামাও তোমার বর্ষণ বারি থামাও জলের ধারা
এবার মোদের রেহাই দাও, রোখো তান্ডব নাচ
জলের এক নাম জীবন, সেই নামই সেরা
তুমি কি শুনোনি আগে, পাওনিকো তার আঁচ?
৫.
শরৎ তোমায়
শেখ সিরাজ
(ধনিয়াখালি, হুগলী)
মাটির গড়া মূর্তি সাজায়
ঢাকের পিঠে ঘা
শিশির ভেজা শিউলি নিয়ে
আসছে যেন মা।
বর্ষা শেষে নীল আকাশে
ভাসছে মেঘের ভেলা
সাদা কশের ফুল সাজিয়ে
সবুজ ধানের খেলা।
শরত এলে নতুন সাজে
উঠলো মেতে দেশ,
ছড়িয়ে পড়ে পুজোর আমেজ
মনটা নাচে বেশ।
নতুন নতুন পোশাক পরে
শিশুর মুখে হাসি
শরৎ তোমায় বরণ করি
তোমায় ভালবাসি।
৬.
অনন্ত অভিলাষ
বন্দনা মালিক
(খাজুরদহ,গুরাপ, হুগলী)
একদিন আকাশের পথে হেঁটে যাব—
পাহাড়ের মালা গলায় পরে
চাঁদের টিপ নেব কপালে —
মেঘেদের সাথে মিতালী করতে করতে
সূর্য্যকে ঢেকে দেব হৃদপিন্ড দিয়ে,
ঝর্ণার জলে ভাসতে থাকবে
জীবন বেদনার অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি।
সেদিনই শেষ হবে তোমার অপেক্ষার প্রহর,
অমরাবতী থেকে পারিজাত তুলে এনে
হয়ত দাড়িয়ে থাকবে বৈতরণীর তীরে —
শুভ্র বসনা এক অতীন্দ্রিয়কে
চুম্বন করে বলবে,
‘ তোমাতে আমাতে মিলন হয়েছে প্রিয়া ‘
বাঁধনের গ্ৰন্থিতে আবার নিশ্চিন্তে হেঁটে যাব —
আবক্ষ চন্দনে সুবাসিত হয়ে
দেবদারুর নীচে কাটিয়ে দেব সোহাগী রাত ,
তারপর ঊষার ঊষাতে জেগে উঠে বলবে,
‘তোমার আঁচল শয্যাতেই ঘুমিয়ে থাকুক
আমার অনন্তকালের দিনলিপি ‘।।
৭.
বাবা হল না কেউ
সিরাজুল ইসলাম ঢালী
(কলকাতা)
সর্বাঙ্গ সমর্পণ করেছি
অনেক আগেই !
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা,
কিচ্ছুর অভাব তোমার নেই
কোন দিন কোন মুহূর্ত ।
অথচ তোমার হৃদয় আত্মা
তোমার সুখ শান্তি স্বস্তি
স্পর্শ করতে দাও নি ।
সব বুঝেও তোমাকে বুঝতে পারি নি ।
কতবার গঙ্গায় স্নান করে এসেছি
কতবার কালীঘাটে ছুটে গিয়েছি
কিন্তু কপালে সিঁদুর জোটে নি ।
উভয়ের রক্ত লাল
রক্তে হিমোগ্লোবিনের উপস্থিতি
মানলে না কোন দিন ।
অথচ তোমার সম্ভোগে
আজ মা হতে চলেছি
তুমি বাবা হতে চাও নি,
আজও বাবা হল না কেউ ।
শরতের ঘ্রাণ
শর্মিষ্ঠা মাজি
(কলকাতা)
শরতের নীলাকাশে সাদা মেঘের ভেলা,
বাতাসের বুকে শিউলির সুগন্ধ,
দীঘির জলে টলমল পদ্ম,
শিশির ভেজা সবুজে সাজানো চরাচর।
কাশের হিন্দোলে দে দোল নাচের তালে
শরৎ রাণী দুর্গা এলো ধরণীতে।
সাজাও বরণ ডালা ধান দূর্বা শতদলে,
করব বরণ দুর্গা মাকে
ঢাক কাঁসরের মধুর বোলে।
আকাশ ভেলায় আসছে মা
মহাদেব দিয়েছে বার্তা,
সঙ্গে নিয়ে ছেলে মেয়ে আর বাহন।
কানে কানে বলেছে মা উমাকে
চারটি দিনের বেশী নয়,
দশমীতে এসো ফিরে কৈলাসে
সেই আশাতে সুখের ছায়া হৃদয় আকাশে।
মাগো আমরা মর্তবাসী তোমায়
ভালোবাসি,
মুখিয়ে থাকি একটা বছর তোমা পানে চেয়ে,
এবার তুমি আসবে ধরায় মহানন্দে পুত্র কন্যা নিয়ে।
প্রকৃতিও সেজেছে অপরূপ সাজে
আকাশে বাতাসে তোমার আগমনী সুর বাজে,
পিত্রালয়ে এসে তুমিও কদিন কাটিয়ে উল্লাসে,
যেয়ো ফিরে কৈলাসে সংসার অভিলাষে।
আসাদ আলী’র দুটি কবিতা
(ক)
অসহায়
আমি’ত নিয়ত নত আছি
যত যাই তাঁর কাছাকাছি
আবিশ্ব দেখি তাঁর উপাখ্যান
তিনি মহান, মহীয়ান।
তুচ্ছাতিতুচ্ছ আমার অস্তিত্ব
তাঁর কাছে, আমাদের কি আছে?
আছেটা কি?ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অতি।
আমাদের কাজই শুধু তাঁর জয়গান।
তাঁর থেকে যত দূরে থাকি
ততটাই মূর্খ নাকি? অজ্ঞতা ভরা,
চলো তাঁর কাছে পৌঁছানোর
চেষ্টা করি ত্বরা,
করি শুধু খোঁজ, কিভাবে এ আবিশ্ব?
কিভাবে এ ধরা? হাজারো লাখো চেষ্টা
ধরা নাহি যায়, হায় বুঝি আমরা কত ক্ষুদ্র
কত অসহায়।
(খ)
দীর্ঘশ্বাস
রাত্রি গভীর হলে চুপি চুপি ওরা নেমে আসে
মেঘ ভাঙা চাঁদের আলোয় শান্ত পুকুর পাড়ে
শান্ত পানিতে মুখ দেখে চাঁদ নক্ষত্রেরা
তুমি যেমন চুপি চুপি আয়নায় দেখ নিজেকে…
তোমার দীর্ঘশ্বাসের মতো শব্দ ওঠে পুকুর পাড়ে
পড়ে থাকা পাতা গাছের পাতাও কাঁপে
ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা আওয়াজ…
হঠাৎ পেঁচা ডেকে ওঠে
ডানা ঝাপটায় কোন রাতচরা পাখি
চমকে ওঠে চাঁদ নক্ষত্রেরা কাঁপে…
পানিতে তাদের ছায়া কেঁপে কেঁপে ওঠে…
(রাজারহাট, বিষ্ণুপুর, উঃ: ২৪ পরগণা)
১০.প্রেমের ছলাকলা
মুনমুন চক্রবর্তী সেন
যেদিন তুমি এসেছিলে
প্রিয় আমার জীবনে
খুশির ঢেউ খেলেছিলো
গোপন হৃদয় গহীনে।
জীবনটা আমার কাটছিল
হাঁসি খুশিতে ভালোই,
জানত আমার অন্তর আত্মা
আর জানত না কেউ।
কত প্রেম কত সোহাগ
ভালোবাসাবাসি কতো,
খুনসুটি আর রসিকতা
একান্ত জনের মতো।
তবু তুমি চলে গেলে
আমায় একলা ফেলে,
প্রেম প্রীতি ভালোবাসা
সব কিছুকে ভুলে?
কেঁদে কেঁদে কাটে সময়
আজ নিরবে নির্জনে,
বাকি জীবন কাটবে কেমন
তোমার অবিহনে!
প্রেম প্রেম করেছ খেলা
করতে পারো অবহেলা,
ভাবিনি কখনও এক মুহুর্ত
করতে পারো ছলাকলা!
১১.অনিন্দ্য লাবণ্য
জাহাঙ্গীর মিদ্দে
(নলপুর, হাওড়া)
পরিবর্তন হবে প্রকৃতির পাঠশালা
শরৎ এসেছে, এসেছে শরৎ।
মৌসুমী বায়ুর পরিবর্তিত পর্যায়ে-
এবার ফিরে যাবে বারিদ মেঘ,
ভারমুক্ত আকাশ পাঠিয়ে দেবে
সোনালী রোদ। চিলের ডানায়
পড়বে তারই আভা।
শরৎ এসেছে, এসেছে শরৎ
আবহাওয়া দেখাবে বদল, আরো
বাহার। বাতাসে কাশের দোলা। বন
থেকে বনে, যেন সাদা হাঁস,
বাতাস শোঁকাবে গন্ধ পুজো পুজো,
উমা আসবে সপরিবারে, বাদ্যি বাজবে
ড্যাং কুড়াকুড়।
শরৎ এসেছে, এসেছে শরৎ
মানুষের চোখেমুখে ফুটে উঠবে
চকচকে ঝলক,
ফুটে উঠবে চিক্কণ অষ্টাদশীর
চিবুকের ন্যায় অনিন্দ্য লাবণ্য।
১২.অনাহুত যাপন
আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী
প্রতিদিন একটু একটু করে আমি আমাকে ভাঙি
চেনা রাস্তা গলি-পথ ভাবনায় ভালোবাসায়
আরও, আরও কতো…কতো কি…..
কথা দিয়েছিল যারা ভাঙতে দেবেনা
বিরহ রোদন মুছিয়ে নেবে
ঝরা পাতায় দেবে নতুন বাতায়ন অথচ,
নিঃশব্দে বাড়ল দ্রুততর দুরত্ব…..
হিসেব কষে কষে এখন আলো মাখি
ভাঙা দাওয়ায় আঁধার প্রোকোষ্ঠে! কিছু
কুসুম জ্যোৎস্না ভরে রাখে অনাহূত যাপনে,
তখন টের পাই তোমার উপস্থিতি…..
পিয়াসী নদী অনাদিকাল শব্দমুকুরে মায়াতরু!
শ্বেত বসনা আঁচল আলুলায়িত লুটিয়ে পড়ে,
আছড়ে পড়ে মায়া-নদী অযথা অচিন গাঙে
ঢেউ তোলে, বিষন্নতায় ভাঙা পাড় আবারও ভাঙে…..
১৩.তুমি মহান
সেখ আব্দুল মান্নান
তুমি মহান বলেই সকালের সূর্য
তোমার সর্বাঙ্গে লেপেছে কুসুম আলো
সূর্যস্নাত হয়ে তুমিও জানাচ্ছো কুর্ণিশ
গগনচুম্বী বলেই তোমার হৃদয় এতো বড়
সারাদিন সারারাত বুকে জমানো ব্যথা
নিরন্তর ছড়িয়ে চলেছ নীলাকাশে
নির্বিঘ্নে নিরবে নির্লিপ্ততায়
বিষাক্ত শ্বাস যাতে ছুঁতে না পারে
মাটির মানুষের হৃদয় কুলুঙ্গিতে।
মানুষই গড়েছে তোমার প্রকান্ড অবয়ব
তবে মানুষের হৃদয়ে কেন এতো বীষ,
নিজেকে মহান করার তীব্র বাসনায়
মাটির মানুষের ওপর উগরে চলেছে
দ্বেষ বিদ্বেষ হিংসা অহর্নিশ?
যা কিছু বেদনার হকদার তারা
স্বার্থপরদের সুখ ইমারতে হয়ে সর্বহারা।
গগনচুম্বী চুল্লি সমগ্র ইস্পাত নগরীর
হৃদয়কে দুষণমুক্ত করতে করতে
আজ তুমি হয়েছ ঋষি বশিষ্ঠ মুনি,
খোলা আসমানের নিচে
ঝড়বৃষ্টি আর তাপের দহন নিরবে সয়ে
মাটির মানুষের কল্যাণে সদা
ধ্যানমগ্ন হয়ে নিজ কর্তব্যে রয়েছে অটল
নশ্বর পৃথিবীর মহানতার প্রতীক হয়ে।
_______________________________