ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে বিশ্ব -রাজনীতিতে দ্রুত পট-পরিবর্তন ঘটার সম্ভাবনা
সেখ ইবাদুল ইসলাম : প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানীকে যেভাবে শান্তি চুক্তি নামে অপমান করা হয়েছিল তারই পরিণতিতে জন্ম হয়েছিল হিটলারের । বিশ্ববাসী আর একটি বিশ্বযুদ্ধ দেখেছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যেভাবে জোর করে ফিলিস্তিনের জমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র কায়েম করা হয়েছিল তা থেকে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তির সূত্রপাত । যতদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ঐক্যবদ্ধ ছিল ততদিন বিষয়টি সমস্যা হয়ে দেখা দেয়নি । যদিও মুসলিম বিশ্বকে নিজেদের হাতে রাখার লক্ষ্যে আমেরিকা সব সময় নিজের পচ্ছন্দের ব্যক্তিকে শাসক হিসাবে বসিয়েছে । ইরাকে সাদ্দাম হোসেন ছিল তাদের পোশা শাসক । পরবর্তীতে এই সাদ্দাম যখন আমেরিকার বিরুদ্ধে আরব লীগকে কাজে লাগাচ্ছে তখনই সাদ্দামকে শেষ করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেয় আমেরিকা সহ পশ্চিমের দেশগুলি ।
এই সময় আমাদের দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন শাসক হিসাবে , এর পর বিরোধী দলের নেতা হিসাবেও । কিন্ত আজ ইসরাইল যেভাবে নিরস্ত্র ফিলিস্তিন জনতার উপরে মুড়ি-মুরকির মতো বোমা বর্ষণ করছে তাতে আমাদের সরকারের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না । অন্যদিকে বিশ্ব মানবাধিকারে স্বঘোষিত অভিভাবক আমেরিকা,ব্রিটেন, ফ্রান্স , জার্মানি নিরব ! রাশিয়া-চিনের ভূমিকা তেমন দেখা যাচ্ছে না ।
আর এই যুদ্ধ পরিস্থিতি মুসলিম দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছে । তারা এটা বুঝতে পারছে যে মানবাধিকারের গল্প যখন খ্রিষ্টান ও ইহুদি সম্প্রদায়ের উপর আঘাত আসে তখনই শোনা যায় । এমনকি গত বুধবার যেভাবে হাসপাতালে ক্ষেপনাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে তার নিন্দা সেভাবে করেনি সুপার পাওয়ার দেশগুলি । আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ইসরাইলে বসে যা বলেছেন তাতে মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষের ভাবাবেগে আঘাত লাগাটা স্বাভাবিক । আর এর পরিণতিতে বিশ্বের ৫৭টি মুসলিম দেশের জনতা যে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে তাকে সামাল দেওয়ার জন্যই আমেরিকার সঙ্গে আরব দুনিয়া সম্পর্ক ছিন্ন করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । কারণ এই মুহুর্তে অন্যতম আমেরিকার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসাবে বিশ্ব রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে চিন । এমনিতেই বর্তমানে বাংলাদেশ সহ বেশ কয়েকটি দেশে চিনের প্রভাব বাড়ছে । চিনের সঙ্গে সখ্যতা করতে গিয়ে ইমরান খানের বিপত্তি ঘটেছে ।
চিন আমাদের দেশের প্রধান শত্রু । এটা মানতেই হবে । আমাদের দেশের কয়েক হাজার কিমি জায়গা জোর করে দখল করে রেখেছে । এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে চিন যে আধিপত্য বিস্তার করবে তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই । আর ইসরাইল ফিলিস্তিনের এই সংঘর্ষের জেরে আরব দুনিয়া নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে । সুতরাং এখনই না হলেও, কয়েক বছরের মধ্যে বিশ্ব-রাজনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের নিয়ন্ত্রণ চিন-রাশিয়ার হাতে চলে গেলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । আর এর জন্য দায়ী থাকবে বর্তমান আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন । যিনি নিরীহ ফিলিস্তিনীদের উপর বোমা বর্ষণ বন্ধ করতে পারলেন না । হামাস সংগঠন কীভাবে জন্ম নিয়েছিল সেই ইতিহাস জানলে এর নেপথ্যে কারা ছিলেন সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে ।
গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরাইলের নাগরিকদের উপর যে হামলা চালিয়েছে তার নিন্দা করার ভাষা নেই । কিন্ত হামাসের এই নিন্দাজনক কাজের জন্য তো ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ দায়ী নয় । বরং গাজায় হামাসের এই আধিপত্যের পেছনের কাদের মদত ছিল সেটা নিয়ে বিচার করার সময় এসেছে । সব মিলিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দুনিয়ার যে গ্রহণযোগ্যতা এতদিন আরব দুনিয়ায় ছিল তা আগামী দিনে যে থাকবে না তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আর এর জন্য ইতিহাসে খল নায়ক হিসাবে বিরাজ করবেন জো বাইডেন ।