হামাসের প্রতিরোধে চাপের মুখে ইসরাইল, এবার মধ্যস্থতায় আমেরিকা কোন পথে মধ্যপ্রাচ্য?
সেখ ইবাদুল ইসলাম: গত শনিবার অর্থাৎ সাতই অক্টোবর ২০২৩ সম্ভবত ইসরাইলের ইতিহাসে এই দিনটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯৪৮ সালের পর প্রথম তীব্র প্রতিরোধের মুখে পড়ল ইসরাইল। ইসরাইল রাষ্ট্রটি সমগ্র বিশ্বকে নাকি পরিচালনা করে থাকে বলে দাবি করে থাকে। তাদের মোসাদ গোয়েন্দা দফতর পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ধুরন্ধর এবং কৌশলী। বিশ্বের সব বড় রাষ্ট্রগুলি এই মোসাদ গোয়েন্দা দপ্তরকে অনুসরণ করেন, না হলে তাদের সাহায্য নিয়ে থাকে। কিন্তু গত সাতই অক্টোবর যেভাবে হামাস একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়ে ইসরাইলকে বিধ্বস্ত করে দিল তাতে এটা প্রমাণিত হয়েছে মোসাদ গোয়েন্দা দফতর আর পাঁচটা দেশের গোয়েন্দা দফতরের মতই ।
যাই হোক এর পরেই সমগ্র বিশ্বের গণতন্ত্রের রক্ষক বলে দাবি করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড বা ব্রিটেন যেভাবে প্রতিশোধের বার্তা নিয়ে অবরুদ্ধ গাজাতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য ইসরাইলের পাশে দাঁড়ালো তাতে সমগ্র বিশ্ববাসী হিসাবে এবং একজন মানুষ হিসাবে আমরা লজ্জিত। একটা অসহায় জাতিকে যেভাবে চারদিক দিকে ঘিরে ধরে দিনের পর দিন অত্যাচার করা হয়েছে তখন বাইডেন কেন নীরব ছিলেন প্রশ্ন এখানেই । মানবাধিকারের প্রশ্নে যে ব্রিটেন যে আমেরিকা যে ফ্রান্স বড় বড় বুলি আওড়ান তারা অবরুদ্ধ গাজার সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে কেন ব্যর্থ হলেন? জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বের মানুষকে কথা দিয়েছিলেন এমন এক সুন্দর ভবিষ্যতের কথা শুনিয়েছিলেন সেই বাইডেন কোন অধিকারের ইসরাইলের পাশে দাঁড়ালেন?
যাইহোক অসহায় জাতি যখন ঘুরে দাঁড়াবে তখন কিন্তু বিপদ তাদের হয় যারা শক্তিমান। যে জাতি মরতে ভয় পায় না, সে জাতির কাছে আর যাই হোক কোন কিছুই বাধা হতে পারে না ফিলিস্তিনের সাধারণ মানুষ আজ মরতে ভয় পায় না পরাধীনতার শৃংখল মোচন করার জন্য তারা যেভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে ইসরাইলের বিরুদ্ধে তাতেই প্রমাদ গুনছে বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্র নায়করা।
৭ই অক্টোবরের পর থেকে একবারের জন্যেও নির্যাতিত নিষ্পেষিত ফিলিস্তিনিবাসীদের কথা ভাবেননি জো বাইডেন। ভাবতে বাধ্য হলেন ১৪ ই অক্টোবর। জো বাইডেন ফোন করে ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রীকে বললেন গাজার সাধারণ মানুষের জান মালের নিরাপত্তা নিয়ে তিনি চিন্তিত তাদের পাশে তিনি দাঁড়াতে চান। আর ইসরাইলকে বললেন সাবধান। আর মানুষ মেরো না। অনেক মেরেছ। পাঠকবর্গ! আপনারা কি মনে করছেন মানবতার দোহাই দিয়ে জো বাইডেন আজ ফিলিস্তিনের পাশে, না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসলে হামাসের প্রতিরোধে চাপের মুখে ইসরাইল। কারণ গতকাল শনিবার ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলার জনরব নিরপেক্ষভাবে যে সংবাদ পেয়েছে তাতে এটা স্পষ্ট যে গাজাতে ক্রমাগত বোমা হামলার ফলে সাধারণ মানুষের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। এখনো পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে সূত্রের খবর। এর মধ্যেই প্রায় দেড় হাজার শিশু রয়েছে। অন্যদিকে থেমে নেই ইসরাইলের মৃত্যু। কমপক্ষের তাদেরও প্রায় দেড় হাজার মানুষ মারা গেছে। ফিলিস্তিনের জনতা কুরবানী দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে আর ইসরাইলের মানুষ মৃত্যুকে প্রচন্ড পরিমাণে ভয় পায় তাদের একটা মানুষ যদি মরে, সেদেশের জনতার কাছে প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহি করতে হবে। শুধু প্রধানমন্ত্রীকে নয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যিনি রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে ব্রিটেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রীদের জবাবদিহি করতে হবে। সুতরাং চাপের মুখে রাষ্ট্রনায়করা শেষ পর্যন্ত ভোল বদলে গেল জো বাইডেনের। আর আস্তে আস্তে বদলে যাবে সব রাষ্ট্রনায়কদেরই ভাষা এখন তাঁরা হয়ে উঠবেন মানবাধিকার লড়াইয়ের সঙ্গী। কারণ হামাস মারছে ইসরাইলকে।
তাই আমেরিকার স্বরাষ্ট্র সচিবকে ছুটে যেতে হচ্ছে কাতারে, ছুটে যেতে হচ্ছে সৌদি আরবে, ছুটে যেতে হচ্ছে লেবাননে, ছুটে যেতে হচ্ছে সিরিয়াতে, ছুটে যেতে হচ্ছে লিবিয়াতে। কারণ মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিবকে বুঝাতে হচ্ছে এই মুসলিম দেশগুলিকে যে গাজাতে সাধারণ মানুষের মানবাধিকার তাদের জান মালের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে। কিন্তু সত্যিই কি করছে ! প্রশ্ন এখানেই। অন্যদিকে হামাস স্পষ্ট করে ঘোষণা করেছে ইসলামের জাতির পিতা ইব্রাহিম আলাই সাল্লাম এর মাজার হজরত সারার মাজার এবং আল আকসা মসজিদের সুরক্ষার জন্য এবং সেখানে মুসলমানদের আধিপত্য কায়েমের জন্য তারা লড়াই চালিয়ে যাবেন। ফিলিস্তিনের জনতাও বলছে যতই ইসরাইল চোখ রাঙিয়ে থাকুক না কেন তাদের এই চোখ রাঙাতে তারা ভয় পাবেন না। হাসতে হাসতে মৃত্যুবরণ করতে পারে যে জাতি সে জাতির নাম ফিলিস্তিন। তারা স্পষ্ট করে বলেছে যে ভিটেমাটি ছেড়ে তারা কোথাও যাবে না। লড়াই তারা চালিয়ে যাবে কারণ এই লড়াই তাদের আত্মসম্মানের লড়াই। এই লড়াই তাদের লড়তে হবে।
গাজার সাধারণ মানুষের এই প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা ইসরায়েলকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহল মনে করছে। আস্তে আস্তে প্রতিবাদে সরব হয়েছে চীন এবং রাশিয়া এবার পিছু হঠবে আমেরিকাও। পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশগুলি এখনও পর্যন্ত সেভাবে সরব না হলেও ওই দেশের সাধারন মানুষ কিন্তু সরব হচ্ছে। আর এতেই বিপদ বাড়ছে মুসলিম দেশগুলির শাসকদের। একথায় স্পষ্ট করে দেয়া যায় যে আগুন ইসরাইল লাগিয়েছে আর যে আগুনে আমেরিকা ইন্ধন দিয়েছে সেই আগুনের পরিণতিতে আগামী দিনে আফগানিস্তানের মত পরাস্ত হতে হবে ইসরাইল জোটকে ।