শারদ সংখ্যা এক
আমাদের কথা
শারোদৎসব দুর্গাপুজো বাঙালির অন্যতম মহৎসব। এই উৎসবে আপামর বাঙালি এক অনাবিল আনন্দ যজ্ঞে ডুবে যায় প্রতিবছর। এবারও তার ব্যতিক্রম যে নয় তাই বলাই বাহুল্য। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চারদিকে সাজো সাজো রব। উৎসবকে ঘিরে সবার মধ্যেই একটা উন্মাদনা। চাষি, চামার, কামার,কুমার যে যার পেশায় নেশায় বুদ উৎসবকে নিয়ে। কবি সাহিত্যিকদের মধ্যেও সৃষ্টির উন্মাদনা। শারোদৎসবে বিভিন্ন শারদীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁদের লেখা মালা এক অনন্য তৃপ্তি দেয়। তাঁরা প্রতিবছর মুখিয়ে থাকেন কখন হাতে আসবে তাঁর প্রিয় শারদ সংকলন যার মধ্যে ছাপা হয়েছে তাঁর লেখা। নতুন পত্রিকা হাতে পেয়েই নিজের লেখার পাতায় পৌঁছানোর আগেই পত্রিকা নাকের কাছে এনে ঘ্রাণ নেয় পরম তৃপ্তিতে।
কালক্রমে আমরা পৌঁছে গেছি ডিজিটালের দরজায়। ছাপা অক্ষরের পরিবর্তে অনলাইনে পড়ছি মনমাতানো হরেক ই-পত্রিকা। তাই পিছিয়ে নেই বাংলার জনরব নিউজ পোর্টাল। আমরা আমাদের বহুল প্রচারিত পোর্টালের সাহিত্য শাখার তরফেও পাঠক পাঠিকাদের জন্যে সাজিয়েছি শারদীয়ার ডালি। যে ডালি ভরে উঠেছে দেশ বিদেশের একগুচ্ছ কবি সাহিত্যিকদের মূল্যবান সৃষ্টিতে। সবাইকে শারদীয়ার হার্দিক শুভেচ্ছা সহ আমাদের আজকের নিবেদন।
১.
অন্তিম ইপ্সা
আঞ্জু মনোয়ারা আনসারী
বিভাবরির তুমুল গহ্বরে…
ব্যস্ত শহরটা যখন ঘুমিয়ে পড়ে,
রাজ দরবারের ফটক টা বন্ধ হয়ে যায়…
সমস্ত দিনের ক্লান্তিতে অবসন্ন প্রতিটি রাজপথ
রাতের গর্ভে নিশ্চিত আশ্রয় নেয়!
আকাশ কোলে অষ্টাদশী যুবতী চাঁদ উঁকি দেয়
ঠিক তখনই…
আঁধার চুঁইয়ে আসা কুসুম জোৎস্না মেখে একাকীত্বের প্রেম গাথায় জলরঙে কাব্য রচি
অনাহুত হৃদয়ের অনালোকিত হলুদ পাতায়।
কখন যে নিয়ম অথবা বেনিয়মে টুপ করে
ঝড়ে পড়বে মহাকালের গর্ভপাতে।
তবুও অন্তর্নিহিত আমার তুমিতে…
ধূসর পান্ডুলিপি জড়ো করি একান্ত অন্ত:সলীলায়।
নিয়তির মহা প্রস্থানে…বিদায়ের ক্ষন ঘনত্ব হলে
মন খারাপের বিলাসিরতায় ভীষণ অনিত্য
পাওয়া না পাওয়ার বিশ্বাসী মানদন্ডে…..
গড়মিল ছাপিয়ে একমুঠো ফুল নিয়ে এসো, অন্তিম শয্যায়…..!!
২.
কন্যা জায়া জননী
ফারহানা শরমীন জেনী (বাংলাদেশ)
বৃষ্টিস্নাত কোন এক সকালে
বৃষ্টি নূপুর পায়ে চুপিসারে এসেছিল
সুখ পাখিটা নীরব অভিসারে।
আলগোছ আলাপনে কবিতার খাতায়
এলোমেলো আঁচড়ে এঁকেছিলে
ভালোবাসার সরব চিত্রায়ণ।
বর্ষার জলধারার মাঝে
মিশেছিল কাজলের রঙ
গভীর সঙ্গোপনে।
শরতের পেঁজা তুলোর মতো
ভেসে বেড়ানো মেঘগুলোর সাথে লুকোচুরি
বিদায় নিলো নিরব অভিমানে
জলধি মেঘগুলিকে সাথী করে।
আমি শরতের সাথে মেতে উঠলাম
কাশফুল আর শিউলি প্রণয়ে।
মেঘের সাথে উদ্দাম ছুটে চলেছি
নবান্নের টানে।
আমি বহুরূপী সর্বংসহা,
কখনও কন্যা,জায়া,কখনও জননী!
৩.
তীর্থের প্রেমী
আশীষ দে (সিলেট, বাংলাদেশ)
আমি বনে-বাদাড়ে,পাহাড়ে-নদে যাই
সেখানে স্বপ্নের মতো এক রঙিন স্বপ্নকে ফেরি করে বেড়াই;
যদিও অজস্র জলাঙ্গীর ঢেউ আর অনন্ত মাইল
প্রান্তরে হেঁটে এসে আমি জেনেছি
পৃথিবীর কোথাও প্রেম
অবশিষ্ট নেই আজ আর
স্বপ্ন নেই,বিরহ নেই, ভালোবাসা নেই আহা!
অপেক্ষাও নেই যেনো কোনো গৃহত্যাগী প্রেমিকার।
তীর্থের কাক শহরে কিছু আছে
তারা কতিপয় ব্যার্থ প্রেমিকদের
তীর্থের প্রেমী আখ্যা দিয়েছে।
কিছু প্রেমিক মারা গেছে পৌষের শীতে
কিছু মারা গেলো করোনাভাইরাসে
কেউ কেউ সিলিংএ ঝুলে ছিলো,
কেউবা কীটনাশকে…..
সেসব কথা আজ না হয় থাক!
কেননা আমি স্বপ্নকে ফেরি করে বেড়াই;
সুনির্মল স্বপ্নকে ফেরি করি আমি।
তবুও…. আজ কিছু নারী যারা
মানুষের হৃদয় নিয়ে খেলা করে
তাদেরকে কুর্নিশ জানাতে চাই
কেননা ইতিহাস সাক্ষী দেয়
হৃদয় ভাঙ্গার শিল্পে তাদের জুড়ি নাই।
৪.
বিশেষ রচনা
সমুদ্রের অব্যক্ত যন্ত্রণা
সামসুজ জামান
— আহ! আহ! কি ভয়াবহ এক যন্ত্রণায় আমার সর্বাঙ্গ অস্থির হয়ে পড়ছে! ওগো সভ্য সমাজের অবিবেচক নাগরিকবৃন্দ, আমার কথা একটু ভাবো। আমি তোমাদের সমুদ্র। কিন্তু নীরব দর্শক হয়ে থেকে আমার মুখের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে তোমরা শপথ নিচ্ছ – তোমরা নাকি প্লাস্টিক ব্যবহার করবে না! আর তারপরেই তোমাদের যথেচ্ছাচারে আমার সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠছে!
– যন্ত্রণাটার উৎস কোথায় জানো? ওই দেখো- দূরে প্রচন্ড বৃষ্টির মধ্যে মাথায় পলিথিন দিয়ে একজন পথ হাঁটছে দিব্যি সুন্দরভাবে। হ্যাঁ আমারও যন্ত্রণাটা শুরু হয়েছে ওই প্লাস্টিকের আবিষ্কার থেকে। বৈজ্ঞানিকরা বলেছিলেন- এ এক অতি সুফলদায়ী জিনিসের আবিষ্কার হয়েছে – যার হাজার সুবিধা। এটা নাকি অনেক হালকা, দাম অনেক কম, জলে ভেজে না.. আরো কত গুণ।
-ওনারা আরো বলেছেন – এই প্লাস্টিকের তৈরি একটা ঢাকনা ৫০ বছর চলে, জলের বোতলগুলো নাকি ৫০০ বছর চলে, মাছ ধরার সুতোগুলো ৬০০ বছর পর্যন্ত চলতে পারে!
-এখন লোকে বাজারে গেলে পুরনো দিনের মতো তাদের হাতে কোন ব্যাগ রাখেনা। দোকানদাররা মালপত্র ঠেসে দিয়ে পলিথিনের একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিচ্ছে আর ক্রেতারা ড্যাং-ড্যাং করে নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে!
— তোমরা ভাবছো বাহ এতে তো বেশ মজা, এতো আনন্দের বিষয়। কিন্তু বাছাধনরা তোমরা কি জানো? এই পলিথিনের জঞ্জাল-রাশি ঘরের বাইরে ছুড়ে ফেলায়, রাস্তাঘাট পলিথিনে-পলিথিনে ছয়লাপ হয়ে যাচ্ছে। সেগুলোয় নর্দমার মধ্যে জমে শহরের জল নিকাশি ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। কলকাতা,মুম্বাই, চেন্নাই, দিল্লী — কেউই বন্যার হাত থেকে বাঁচতে পারছে না।
— এসব দেখতে দেখতে সরকার আইন করছে,প্লাস্টিক ব্যবহারে মানা করছে – প্লাস্টিক প্যাকেটে খাবার বর্জন করতে বলছে,অনুষ্ঠানে বেলুন ওড়াতে মানা করছে। পলিয়েস্টার, নাইলন এই জাতীয় জিনিসগুলো পেট্রোলিয়ামের উপজাত থেকে তৈরি হয়। যা আমাদের ত্বকের পক্ষে খুব ক্ষতিকর যা ত্বকের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। কিন্তু মানুষ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছে।
জানো তো ২০০৮ সালে আমেরিকায় একটা গবেষণা থেকে জানা গেছে ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া,আফ্রিকার সমুদ্রে মারাত্মক রকমের মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। প্রতি বর্গ কিমি সমুদ্রে প্রায় তিন লক্ষ প্লাস্টিকের দ্রব্য এবং এক লক্ষ প্লাস্টিকের টুকরো ভেসে বেড়াচ্ছে। সারা পৃথিবীতেই পলিথিনের মধ্যে শুধু পূর্ব এশিয়াতে সারা পৃথিবীর 60% প্লাস্টিক বর্জ্য জলের মাধ্যমে জমে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে ৪৫০ মিলিয়ন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড বাতাসে নির্গত হয়েছে আর ৩০ সালে এটা হবে ১.৩৪ বিলিয়ন টন ৫০ সালে হবে ৫৬ বিলিয়ন টন।
এই সেদিন যে স্পার্ম হোয়েলটির মৃত্যু সারা পৃথিবীর টনক নড়িয়ে দিয়েছে সেটা কী ঘটনা জানো কি? ঘটনাটা হলো ওই বিরল প্রজাতির তিমির পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্রান্ত থেকে ৬৪ পাউন্ড ওজনের প্লাস্টিক পাওয়া গেছে!! বেচারা সেটা হজম করতে না পেরে অক্কা পেয়েছে। তোমাদের যদি সামান্যতমও চেতনা বোধ থাকতো, তাহলে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য লজ্জায় তোমরা পাতাল প্রবেশ করতে! বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এই মুহূর্তে পাঁচ লক্ষ কোটির বেশি প্লাস্টিকের তৈরি দ্রব্য সাগরে মহাসাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।
এখনো তোমরা ভাববে না, সবাই মিলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এখনো রুখে দাঁড়াবে না বন্ধু, এ যন্ত্রণা কি সহ্য করার মত? তোমরা বুকে হাত রেখে প্রতিজ্ঞা কর। তোমরা একবার খুব সচেতন ভাবে ভেবে দেখো আগামী পৃথিবীকে তোমরা কোন রসাতলে নিয়ে যাচ্ছো!
উফ! উফ! যন্ত্রণায় আমার বুক ফেটে যাচ্ছে! আমি আর কথা বলতে পারছি না!!
৫.
সন্দীপ রায় (নীল) এর দুটি কবিতা
ক).
সম্পাদ্য
সন্দীপ রায় (নীল)
তোমাকে কেন্দ্রে করে
সময় আর সম্পর্কের রেখা মেপে মেপে
যতবার পরিবৃত্ত
আঁকতে চেয়েছি,
ততবার
ভালোবাসার দহন
এসে জানান দিয়ে গেছে সত্যিটা।
সম্পর্ক,সময়
আর
সময় সম্পর্কের সমানুপাতী।
ভালবাসা তো শুধু একটা প্রমানিতব্য
সূত্রের নাম।
খ).
খাদক
আস্তাকুঁড়ের পাশে
পড়ে আছে একটা ময়লা ছেঁড়া পাতা,
তাতে বিভিন্ন সম্পর্ক লেখা
অপরিণত কলমে ।
খোঁড়া একটা কাক,
একান্নবর্তী পায়ে আঁকড়ে ধরেছে
পরস্পর বিরোধী
সম্পর্কগুলো….
দু-তিনটে নেড়ি অনর্গল
চিৎকারে বলে যাচ্ছে
হিংসা- বিদ্রুপ- স্বজনপোষন
মুখরতা বয়ে এনে
বৃষ্টি নামলে,হঠাৎ
আস্তাকুঁড়ে জল জমে…
ধুয়ে যায় ময়লার স্তূপ
আঁকড়ে থেকে একপেয়ে কাক কাগজ বাঁচায়
অথবা সম্পর্ক–
ভিজে নেড়িগুলো গা ঝাঁকায়
মৌন নগ্নতায়…।।
৬.
উপন্যাস
আরেফা গোলদার
জোছনার আকাশ
মেয়েটির বড়ো প্রিয়।
ছোট থেকেই সে
বিভোর হয় ।
শ্বশুর বাড়িতে
হাতে নাতে ধরতে পেরে
মেয়েটিকে যখন
বের করে দিলো
বাড়ি থেকে,
একটুও অপরাধবোধ
জাগেনি তার।
ভালবাসা নিয়ে
মেয়েটির জন্ম হলো
নতুন করে।
সেদিন সেমিনারে
উপস্থিত মেয়েটিকে
বরণ করতে গিয়ে
প্রখ্যাত এক সমাজসেবীর
যে দৃষ্টি বিনিময় হয়
সেখানে আর কাঠিন্য নেই,,
বরং বলতে চাইছে
প্রতি ফোঁটায় ভিজতে ভিজতে
সে ভীষণভাবে
শুদ্ধ হয়ে এসেছে।
কলরব কোলাহল পেরিয়ে
ঝিকিমিকি আলোর
নিঝুম আকাশে
একবার শুধু একবার
ওই চোখের তারা হয়ে
জোছনা ছুঁতে চায় ।
জীবন উপন্যাসে
সূচনা হয়
এক নতুন অধ্যায়….