কলকাতা 

Verdict on Kamduni Case : কামদুনি কাণ্ডে কয়েকজন বেকসুর খালাস পেয়ে যাওয়ার নেপথ্যে সিআইডি দায় এড়াতে পারে কি?

শেয়ার করুন

সেখ ইবাদুল ইসলাম: কামদুনি কান্ড! পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে যে কয়েকটি খুন এবং ধর্ষণ হয়েছে তার সমস্ত নৃশংসতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল তার মধ্যে অবশ্যই কামদুনি থাকবে। একজন কলেজ ছাত্রীকে যেভাবে নৃশংসতার সঙ্গে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বাংলার সংস্কৃতির পক্ষে লজ্জা।

খুব ভুল না করলে এই ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৩ সালের ৭ই জুন সেদিন ছিল বৃষ্টি মুখর সারাদিন। কামদুনি গ্রামে একমাত্র কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি গিয়েছিল কলেজ, ফিরে এসেছিল লাশ। বাড়ির কাছেই ধর্ষিত এবং খুন হয়েছিলেন মেয়েটি। আমি একজন মেয়ের বাবা হিসেবে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায় এই বাংলার প্রশাসনিক কর্তাদের কাজকর্ম দেখে। এত বড় নৃশংস ঘটনার পরেও প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে গেল প্রায় সবকটি আসামী । কোন পথে সিআইডি তদন্ত করছে!

Advertisement

আর আমাদের শাসক দলের নেতারা বলে থাকেন যে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে বিরোধীরা। কিন্তু যে শাসক দল একজন নিরীহ কলেজ পড়ুয়া মেয়ের খুনিদের শাস্তি দিতে ভালোভাবে পারল না সেই শাসকদলের মুখে কি এসব কথা মানায়! পশ্চিমবাংলার মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনা ঘটার পরেই রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন ৩০ দিনের মধ্যে কামদুনি কাণ্ডের বিচার হবে। কিন্তু বিচার পেতে পেতে দশ বছর কাটলো তারপর যে বিচার পেল তাকে নির্যাতিতা পরিবার কি সুবিচার পেয়েছে?

কলকাতা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতির জয়মাল্য বাগচী রায় দিতে গিয়ে বলেছেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রসিকিউশন অর্থাৎ সরকারি আইনজীবীরা সঠিকভাবে তথ্য প্রমাণ পেশ করতে পারেনি আদালতের কাছে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে সিআইডি কোন পথে তদন্ত করছিলেন এতদিন ধরে! রাজ্যের cid বলে যে একটি বস্তু আছে সে কার স্বার্থে তদন্ত করে থাকে!

এই সিআইডির কাজটা কি? কেন সিআইডি এতটা অকেজো হয়ে গেল ? কেন প্রমাণ করতে পারছে না অধিকাংশ মামলাকে। বাংলার মানুষ বড্ড জানতে চাই। আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিআইডি নিয়ে গর্ব বোধ করেন। কিন্তু তাঁর এই গর্বের যে কোন সম্মানই রাখতে পারছে না সিআইডি। তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ আছে!

কামদুনি কাণ্ডে যেভাবে রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থা এবং তদন্ত প্রক্রিয়া সামনে এসেছে তাতে একথা প্রমাণিত হয়েছে। এই রাজ্যের সিআইডি বলুন। পুলশি বলুন তদন্ত করার প্রকৃত ইচ্ছা তাদের ছিল না। তাহলে অবশ্যই দোষীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ জোগাড় করতে পারতো। নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করছেন যে ১৪ জন সরকারি আইনজীবী নাকি এই মামলার ছেড়ে দিয়েছিলেন যদি এটা সত্য হয় তাহলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন চুপ করেছিলেন? কেন একটা অসহায় পরিবারকে ইনসাফ দেওয়ার জন্য তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নিলেন না?

এই সরকারি আইনজীবী গুলো কাদের? কারা নিয়োগ করে থাকে! খোঁজ নিলে জানা যাবে এরা অধিকাংশই হচ্ছে শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত এবং শাসক দলেরই পক্ষ থেকে এদেরকে নিয়োগ করা হয়। তাহলে কি প্রশ্ন উঠতেই পারে না যে কামদুনি নিয়ে রাজ্যের শাসক দলই অনেকটা গাছাড়া ভাব দিয়েছিল যার জন্যেই প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস পেয়ে গেল বেশ কয়েকজন আসামী। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে কথা দিয়েছিলেন যে ইনসাফ আসবে। তিনি বলেছিলেন ফাস্ট ট্রাক কোর্ট তৈরি করে এর বিচার করা হবে। কিন্তু সেই বিচার প্রক্রিয়া চলতে চলতে দশ বছর কেটে গেল শেষ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন আসামি কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে বেকসুর খালাস পেয়ে গেল। এই ট্রাজেডি এই দুঃখজনক ঘটনার দায় এড়াতে কি পারে সিআইডি?

 


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ