কলকাতা 

বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় আধ ঘন্টার মধ্যে বদলে গেল ডিভিশন বেঞ্চে! নজিরবিহীন এই ঘটনার নেপথ্যে রহস্য কি?

শেয়ার করুন

বাংলার জনরব ডেস্ক : কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ঘটে গেল এক নজির বিহীন ঘটনা। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই নাটকীয় পরিস্থিতিতে বদলে গেল মামলার রায়। শুক্রবার এক মামলার শুনানিতে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক দীপক করকে তলব করেছিলেন আজ রাত আটটার মধ্যে আদালতে।

শুক্রবার বিকেলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এই নির্দেশ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আধ ঘণ্টার মধ্যে খারিজও করে দিল। একইসঙ্গে বেঞ্চ প্রশ্ন তুলল, ‘‘এই মামলা নিয়ে এত তাড়াহুড়ো করার কী ছিল? এই মামলা তো জরুরি ভিত্তিতে শোনার তো কথা ছিল না!’’

Advertisement

স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতির মতোই কলেজে নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ এনে একটি মামলার শুনানি চলছিল বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একক বেঞ্চে। সেই শুনানিতেই শুক্রবার বিকেলে বিচারপতি বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটকে নির্দেশ দেন, ‘‘রাত সাড়ে ৮টার মধ্যে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক করকে আদালতে নিয়ে আসুন।’’ কিন্তু আধ ঘণ্টার মধ্যেই হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খারিজ করে দেয় ওই নির্দেশ।

বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি উদয় কুমারের ডিভিশন বেঞ্চ বলে, ‘‘মামলাটি শুরুতে বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের বেঞ্চে ছিল না। মামলাটি চলছিল বিচারপতি কৌশিক চন্দের বেঞ্চে। অস্থায়ী বেঞ্চ হিসাবে ওই মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি গঙ্গেপাধ্যায়ের বেঞ্চে পাঠানো হয়েছিল। তাই এ ব্যাপারে বিচারপতি চন্দ যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা-ই বহাল থাকবে।’’

ঘটনার শুরু কলেজে নিয়োগে অস্বচ্ছতা সংক্রান্ত একটি মামলা থেকে। কলেজে নিয়োগের প্যানেলে অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছিলেন এক চাকরিপ্রার্থী। তাঁর নাম মোনালিসা ঘোষ। তাঁর অভিযোগ ছিল ২০২০ সালের কলেজ সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। ২০২৩ সালে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্যানেল প্রকাশিত হয়। কিন্তু শুধু নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর প্রকাশিত হলেও তাতে নম্বর প্রকাশ করা হয় নি। এ ব্যাপারেই আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ওই চাকরিপ্রার্থী। তাঁর দাবি ছিল, ওই নিয়োগের প্যানেলে প্রার্থীদের নম্বরও প্রকাশ করতে হবে। মামলাকারীর এই আবেদন শোনার পরই কলেজ সার্ভিস কমিশনকে বিচারপতি হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেন, কেন প্যানেলে নম্বর রাখা হয়নি? প্যানেল প্রকাশের নিয়মই কী?

কিন্তু কমিশন সেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশ না মেনে পাল্টা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে। মামলা করে ডিভিশন বেঞ্চে। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি একক বেঞ্চেই ফেরত পাঠায়। ফলে মামলাটি আবার ফিরে আসে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেই।

শুক্রবার সেই মামলার শুনানি ছিল। মামলাটি শুনানির জন্য উঠলে বিচারপতি কলেজ সার্ভিস কমিশনকে এক ঘণ্টা সময় দিয়ে বলেন, ‘‘বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটের মধ্যে ওই বিতর্কিত প্যানেল নিয়ে আসুন। জমা দিন আদালতে।’’ একই সঙ্গে জানিয়ে দেন, সময়ে প্যানেল আনতে না পারলে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও কমিশন নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও সেই নির্দেশ পালন করেনি। বিচারপতি এর পর কমিশনকে বাড়তি এক ঘণ্টা সময় দেন। কিন্তু তার পরও নির্দেশ পালন করেনি কমিশন।


শেয়ার করুন

সম্পর্কিত নিবন্ধ