বিশ্বগুরুর দেশে সংসদে দাঁড়িয়ে অশ্লীল ভাষায় মুসলিম সাংসদকে আক্রমণ শাসক দলের এমপির, নিরব মোদী, শাহ, বিজেপি! ভারতের ভবিষ্যৎ কোন পথে!
সেখ ইবাদুল ইসলাম: লোকসভায় দাঁড়িয়ে একজন লোকসভার সাংসদকে যে ভাষায় দিল্লি থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি আক্রমণ করেছেন তার নিন্দা করার ভাষা আমাদের জানা নেই। স্বাধীন ভারত তো বটে এমনকি পরাধীন ভারতের কোন আইনসভার সদস্যকে এভাবে অশ্লীল ভাষায় জাত ধর্ম তুলে আক্রমণ করার সাহস দেখায়নি ব্রিটিশ রাও। মাদার অফ ডেমোক্রেসির কথা বলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নীরব আছেন কেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
বিভিন্ন সভা সমাবেশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিজেপির সাংসদ নেতারা মুসলিম সমাজকে আক্রমণ করেছেন এবং মুসলমান ব্যক্তিদের নাম ধরে জঙ্গি বলেছেন, দেশদ্রোহী বলেছেন, এটা স্বাভাবিক প্রবণতা বলে এদেশের সাধারণ মানুষ মনে করেছিল। কিন্তু দেশের সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় যে কথাটি বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি বললেন তাকে আর যাই বলা হোক গণতন্ত্রের শিষ্টাচার বলা যাবেনা, আর এর ফলে এদেশের সংখ্যালঘু সমাজ যে আরো বেশি আতঙ্কের মধ্যে পড়ল তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
কারণ সংসদ হলো পবিত্র জায়গা। মোদিজীর ভাষায় গণতন্ত্রের মন্দির। সেই মন্দিরে একজন মুসলিম সাংসদকে যেভাবে আক্রমণ করা হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বেনজির ঘটনা। এর ফলে দেশে তো বটেই বিদেশের মাটিতেও ভারতের সম্মানকে ভুলুন্ঠিত করা হলো। আর এ নিয়ে বিজেপির নেতারা এখনো পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোন নিন্দা জনক মন্তব্য করেননি। শাস্তি তো দুর অস্ত নিন্দা করারও সাহস দেখায়নি, রাজনাথ সিং এর মত বিজেপি নেতা। রামেশ বিধুরীর বক্তব্যের পর সংসদে দাঁড়িয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, যদি কোন বিরোধী সাংসদ এই মন্তব্যে দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি।
রাজনাথ সিং এ দেশের মুসলমান সমাজকে কি চোখে দেখেন তাই যদি কথাটির মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। সংসদে দাঁড়িয়ে একজন জনপ্রিয় সাংসদকে জঙ্গি বলা হচ্ছে, গুন্ডা বলা হচ্ছে তারপর প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলছেন, যদি দুঃখ পেয়ে থাকেন তাহলে ক্ষমা করবেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর এ কথা বলার সাহস হলো না যে আমার দলের সংসদ হলেও এই অন্যায় এই অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করার জন্য তাকে আমি ক্ষমা চাইতে বলছি। এটাই নতুন ভারতের নতুন স্লোগান। আগামী দিনে এদেশের মুসলমান সমাজকে আর রাস্তাঘাটে নয়, এবার সংসদের অভ্যন্তরে বিধানসভার অভ্যন্তরে এই ভাবেই আক্রমণ করবেন এইভাবেই বিদ্বেষ ছড়ানো হবে বলে রাজনৈতিক মহলের একটা অংশ মনে করছেন।
আজ যদি জহরলাল নেহেরু বেঁচে থাকতেন আর যদি বেঁচে থাকতেন মহাত্মা গান্ধী তাহলে হয়তো তারা এই স্বাধীনতার জন্য লজ্জায় আর কথা বলতে পারতেন না। আসলে রাজনৈতিক দিক থেকে সম্পূর্ণভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে বিজেপি তাই যেনতেন প্রকারণে আগামী দিনে ইস্যু তৈরি করতে চাইছেন বিজেপির নেতারা। বিএসপি সাংসদ দানিস আলীকে আক্রমণ করে নতুন করে এ দেশের মুসলমান সমাজকে টার্গেট করা হচ্ছে, নিশানা করা হচ্ছে এটা আমাদের মানতেই হবে।
তবে দুঃখের হলেও সত্য এত বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরেও এবং সেই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত দিল্লির সাংসদ বিজেপি নেতা রামেশ বিধুরির বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। বিজেপি এবং আগামী দিনের নেবে বলেও মনে হচ্ছে না। স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন সাংসদ danis ali তবে মনে করা হচ্ছে এই চিঠিও ডাস্টবিনে পড়ে থাকবে। স্পিকার যত দ্রুততার সঙ্গে রাহুল গান্ধীকে অপরাধী সাব্যস্ত করে সাংসদ পদ কেড়ে নিয়েছিলেন দেশে ভালোবাসার বার্তা ছাড়ানোর অপরাধে ! কিন্তু বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরির বিরুদ্ধে তিনি কড়া পদক্ষেপ নিতে যে পারবেন না তা নিয়ে কোন সন্দেহ থাকার অবকাশ নেই। কারণ রমেশ বিধুরি বিজেপির মূল উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যকে সংসদে দাঁড়িয়ে কার্যকর করেছেন মাত্র।
একজন মুসলিম সাংসদকে যে ভাষায় সংসদের ভেতরে অধিবেশন চলাকালীন সময়ে আক্রমণ করা হয়েছে তারপরও এদেশের বিরোধী দলগুলো নীরব কেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার প্রথম সারির মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দুবাই সফরে রয়েছেন কিন্তু তিনিও নিশ্চয়ই খবর পেয়েছেন নিশ্চয়ই রমেশ বিধুরীর এই ভিডিও দেখেছেন তারপরও কোন বিবৃতি নেই কেন? তৃণমূলের পক্ষ থেকে তা নিয়েও জন মানষে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী একমাত্র ব্যতিক্রম! তিনি শুক্রবারে ছুটে গেছেন দানিস আলির সঙ্গে দেখা করতে।
কারণ বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর বিবৃতিও অন্তত আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি! রাহুল গান্ধী গতকাল গেলেন দেখা করলেন দানিশ এর সঙ্গে বললেন এ দেশের সংস্কৃতি এটা নয় মুসলিম বিদ্বেষ প্রচার করা। এ দেশের সংস্কৃতি হচ্ছে হিন্দু মুসলিম মিলিত শক্তি। একমাত্র রাহুল ই ব্যতিক্রম বাকিরা সবাই ধর্মনিরপেক্ষতার পাঠ মঞ্চে দাঁড়িয়ে শেখাবেন আর যখন মুসলিম সাংসদ সংসদের অন্দরে আক্রান্ত হবেন। অশ্লীল ভাষায় আক্রমণের শিকার হবেন ,তখন তারা নীরব থাকবেন। এটাই এখন বিরোধী দল গুলির ধর্মনিরপেক্ষতা। সুতরাং ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ নেতা হিসাবে এখন রাহুলের কোন বিকল্প নেই। এটা এ দেশের সকল মানুষকেই মানতে হবে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষদের অবশ্যই মানতে হবে রাহুল গান্ধীর কোন বিকল্প এ দেশের রাজনীতিতে এখনো আসেনি।